বলদীপ্ত লাল-হলুদ আরও আই লিগমুখী

দু’বছর আগে নিজের পুরনো ক্লাবে তাঁকে স্ট্রাইকার বানিয়েছিলেন এলকো সতৌরি। মঙ্গলবার লাল-হলুদ জার্সিতে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে সেই ডাচ কোচকে কি গুরুদক্ষিণা দিলেন ‘পঞ্জাব দা পুত্তর’ বলদীপ সিংহ? বছর দুই আগে বিতর্কিত ঘটনায় কেরিয়ারে যতিচিহ্নও পড়তে চলেছিল এ দিনের ম্যান অব দ্য ম্যাচ বলদীপের। ফিরে এসেছেন সাহস, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসে ভর করে। সিঙ্গাপুরের ক্লাবের বিরুদ্ধে এএফসি কাপ ম্যাচে জোড়া গোল করে পঞ্জাব পুলিশের অফিসার-পুত্র এ দিন বলে গেলেন, ‘‘পুরস্কারটা পেলাম এলকো আর নবাবদার (ভট্টাচার্য) জন্য।’’

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪১
Share:

কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে বলদীপের প্রথম গোল। মঙ্গলবার যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

ইস্টবেঙ্গল-৩ : বালেস্তিয়ার খালসা এফসি-০

Advertisement

(বলদীপ-২, র‌্যান্টি)

Advertisement

দু’বছর আগে নিজের পুরনো ক্লাবে তাঁকে স্ট্রাইকার বানিয়েছিলেন এলকো সতৌরি। মঙ্গলবার লাল-হলুদ জার্সিতে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমে সেই ডাচ কোচকে কি গুরুদক্ষিণা দিলেন ‘পঞ্জাব দা পুত্তর’ বলদীপ সিংহ?

বছর দুই আগে বিতর্কিত ঘটনায় কেরিয়ারে যতিচিহ্নও পড়তে চলেছিল এ দিনের ম্যান অব দ্য ম্যাচ বলদীপের। ফিরে এসেছেন সাহস, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসে ভর করে। সিঙ্গাপুরের ক্লাবের বিরুদ্ধে এএফসি কাপ ম্যাচে জোড়া গোল করে পঞ্জাব পুলিশের অফিসার-পুত্র এ দিন বলে গেলেন, ‘‘পুরস্কারটা পেলাম এলকো আর নবাবদার (ভট্টাচার্য) জন্য।’’

বালেস্তিয়ার খালসাকে ৩-০ হারানোর দিন বলদীপের পুরনো ক্লাব ইউনাইটেড স্পোর্টসের শীর্ষকর্তা নবাব ভট্টাচার্য ভেসে উঠছেন কী ভাবে? শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা ফেরার পথে প্রশ্নটা শুনে মোবাইলে হাসলেন নবাব। ‘‘বলদীপ অ্যাটাকিং মিডিও। এলকোই আমার টিমে ওকে স্ট্রাইকার বানায়। আমি রাজি ছিলাম না তখন। কিন্তু তার পর রোজই গোল করতে এলকো বলেছিল, ‘আমিও একটু ফুটবল বুঝি’। পয়লা বৈশাখ আমাদের ক্লাবের বারপুজোয় এলকোও আসবে। তখন ওর পিছনে লেগে বলব, দেখলে তো ও স্ট্রাইকার নয়। তাই কাল হ্যাটট্রিক মিস করল।’’

এ দেশে ইস্টবেঙ্গলই একমাত্র ক্লাব যারা আট বার এএফসি কাপ খেলছে। দু’বছর আগে সেমিফাইনালও গিয়েছিল। সেই টুর্নামেন্টেই বড় জয় পেয়েও ইস্টবেঙ্গল কোচ এলকো বলে দিলেন, ‘‘এএফসিতে পরের দু’টো ম্যাচ জিতে আরও এগোনোর চেয়েও আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আই লিগ!’’

আসলে লাল-হলুদ শিবির ঝাপসা হয়ে যাওয়া আই লিগ ফের দেখতে শুরু করেছে অন্যতম শীর্ষকর্তার ক্লাবে প্রত্যাবর্তনের পর। যিনি কাঁধ ঝুঁকে যাওয়া কোচ-ফুটবলারদের ড্রেসিংরুমে বলেছিলেন, ‘‘আই লিগে এখনও তো তিরিশটা পয়েন্ট রয়েছে। সেগুলো তুলে আনার চেষ্টা করো।’’ তার পর থেকেই ফের স্বমহিমায় ইস্টবেঙ্গল।

নমুনা, আই লিগে পুণে থেকে পুরো ছয় পয়েন্ট নিয়ে ফেরা। এ দিন এএফসি কাপে ডুডু-র‌্যান্টি মহাজুটিকে প্রায় সত্তর মিনিট বাইরে রেখে বিদেশি টিমের বিরুদ্ধে একচেটিয়া রাজত্ব করে গেল এলকোর টিম। সিঙ্গাপুরের দলটির কোচ মার্কো ক্রালজেভিচ ঘরের মাঠে ২-১ হারিয়েছিলেন বিদেশি দলের বিরুদ্ধে বরাবর জ্বলে ওঠার ঐতিহ্যশালী লাল-হলুদকে। কিন্তু এ দিন ফিরতি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল রিজার্ভ বেঞ্চের ঝাঁঝেই উড়ে গিয়ে বলেই ফেললেন, ‘‘ওরা দারুণ টিম। আমরা খেলতেই পারলাম না।’’

চার ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে এএফসি কাপের পরবর্তী রাউন্ড না দেখে এলকো আই লিগ দেখছেন ঠিক এই জোশেই।

প্রথমত, ম্যাচটা দেখিয়ে দিল তাঁর রিজার্ভ বেঞ্চও তৈরি। দ্বিতীয়ত, আই লিগে ১২ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য লড়তে গেলে আস্তিনে ডুডু-র‌্যান্টি-বলজিত ছাড়াও যে বলদীপের মতো কোনও গোপন তাসের দরকার, সেটাও পেয়ে গেলেন এ দিন। তৃতীয়ত, সঙ্গে জুড়ল একের পর এক ম্যাচ জেতার আত্মবিশ্বাসও।

এলকোর এই ইস্টবেঙ্গল পাসিং ফুটবলের সঙ্গে থার্ডম্যান মুভটা দুর্দান্ত কাজে লাগাচ্ছে। বিপক্ষের হোল্ডিং মিডিও উঠে এলে তৈরি হওয়া ফাঁকা জায়গাটাকে চমৎকার ব্যবহার করছে। এ দিন যেমন বিপক্ষ রাইটব্যাক ইগনেশিয়াসের উচ্চতা কম দেখে চাপটা দিলেন সে দিক দিয়েই। তা হলে কি আই লিগে লাল-হলুদের বাকি রানওয়ে মসৃণ? সেটা অবশ্য বলা যাচ্ছে না। কারণ সেই রক্ষণ। এ দিনও সুসাক-রাজুর ভেতর তৈরি হওয়া ফাঁকা জায়গা দিয়ে বিপক্ষ অপারেট করল বেশ কয়েক বার। সঙ্গে লাল-হলুদ ডিফেন্সের কুখ্যাত কয়েকটা ব্যাকপাস! যা দেখে প্রয়াত গুন্টার গ্রাসকে প্রয়াণ পরবর্তী দিবসেই স্মরণ করে বলতে হচ্ছে— ‘জিভ কাটো লজ্জায়!’

ইস্টবেঙ্গল: ব্যারেটো, অভিষেক, অর্ণব (সুসাক), রাজু, সৌমিক, তুলুঙ্গা, সুবোধ, সুখবিন্দর, রফিক (ডুডু), বলজিৎ (র‌্যান্টি), বলদীপ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement