চ্যাম্পিয়ন: আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে মোহনবাগানকে হারানোর পরে ট্রফি নিয়ে উল্লাস ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের। বৃহস্পতিবার বারাসতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
যিনি গোল বাঁচান, তিনি চাষও করেন!
ইস্টবেঙ্গল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের গোলকিপার অয়ন রায়ের জীবনের কাহিনি চমকে দেওয়ার মতো। বাবা কৃষক। অয়ন স্বপ্ন দেখতেন সফল স্ট্রাইকার হওয়ার। কিন্তু শৈশবের কোচ মইদুল ইসলামের পরামর্শে শুরু করেন গোলকিপিং। বৃহস্পতিবার বারাসত স্টেডিয়ামে অয়নের হাত ধরেই টাইব্রেকারে মোহনবাগানকে হারিয়ে ২৯তম আইএফএ শিল্ড জিতল ইস্টবেঙ্গল।
হাওড়ার আমতায় বাড়ি অয়নের। অনূর্ধ্ব-১৯ ইস্টবেঙ্গল দলে সুযোগ পাওয়ার পরে অবশ্য বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ খুব একটা পান না। তবে যখনই সময় পান, বাবাকে সাহায্য করতে নেমে পড়েন মাঠে। লাল-হলুদের শিল্ড জয়ের নায়ক বলছিলেন, ‘‘অনুশীলনের জন্য ক্লাবের হস্টেলেই অধিকাংশ সময় থাকতে হয়। তবে বাড়িতে গেলে বাবাকে কৃষি কাজে সাহায্য করি।’’
আইএফএ শিল্ড ফাইনালে ছোটদের ডার্বি ঘিরেও উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। খেলা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগেই গ্যালারি প্রায় ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। সংখ্যায় অবশ্য লাল-হলুদের সমর্থকেরাই বেশি ছিলেন। আইসল্যান্ডের বিখ্যাত তালি উৎসব থেকে গান— সবই ছিল। কিন্তু ৪৭ মিনিটে সৌরভ দাস গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেওয়ার পরে ছবিটা বদলে গেল। সবুজ-মেরুন গ্যালারিতে উৎসব। লাল-হলুদ শিবিরে স্বপ্নভঙ্গের আতঙ্ক।
অয়ন রায়
ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট বারো আগে ফের বদলে গেল আবহ। ইস্টবেঙ্গল মিডফিল্ডার দীপ দাসের দূরপাল্লার শট সবুজ-মেরুন গোলকিপার আসাঞ্জা দাইমারির দু’হাতের ফাঁক দিয়ে গোলে ঢুকে যায়। অতিরিক্ত সময়েও ১-১ থাকায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। তার আগেই গোলকিপার পরিবর্তন করেন সবুজ-মেরুন কোচ জো পল আনচেরি। আসাঞ্জাকে তুলে নামান অভিজিৎ দেবনাথকে।
টাইব্রেকারে শুরুতেই গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক ঝন্টু প্রসাদ। কিন্তু মোহনবাগানের ডিডউম হাজোয়ারি শট মারেন বাইরে। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন তেতে পুইয়া। মোহনবাগানের লালথান খুমার শট শরীর শূন্যে ছুড়ে বাঁচান ম্যানুয়েল নয়্যারের ভক্ত দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র অয়ন। এর পরে লাল-হলুদের শুভনীল ঘোষের শট বাঁচান মোহনবাগান গোলকিপার। ইস্টবেঙ্গলের রোহিনপুইয়া ও দীপ অবশ্য ভুল করেননি গোল করতে। তাই মোহনবাগানের দেবন্না চক্রবর্তী ও শুভ ঘোষ গোল করেও দলের হার বাঁচাতে পারেননি।
পরপর দু’বার ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার জন্য হতাশ নন মোহনবাগান কোচ আনচেরি। তিনি ক্ষুব্ধ দুপুর আড়াইটেয় ম্যাচ খেলতে হওয়ায়। আনচেরি বলেন, ‘‘বারাসত স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইট থাকা সত্ত্বেও আমাদের প্রচণ্ড গরমের মধ্যে খেলতে বাধ্য করা হল।’’ একই সুর ইস্টবেঙ্গল কোচ রঞ্জন চৌধুরীর গলায়। তিনি বললেন, ‘‘এই গরমে ম্যাচ খেলতে বাধ্য করা নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছুই নয়।’’