এরিক ডায়ারের এই উল্লাস শেষ পর্যন্ত থাকল না।
ইংল্যান্ড ১ (ডায়ার)
রাশিয়া ১ (বেরেজুটসকি)
সত্যি বলতে ইংল্যান্ডের ওপর আমার খুব রাগ হয়।
কোনও বড় টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে মনে হয় এ বার ইংল্যান্ড বড় কিছু করবে। স্টিভন জেরার থেকে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। মাইকেল আওয়েন থেকে ডেভিড বেকহ্যাম, স্বপ্নের সব ফুটবলাররা গত কয়েক বছরে ইংল্যান্ড জার্সিটা পরেছেন। কিন্তু নিটফল তো সেই শূন্যই। সমস্ত আশা মাটিতে মিশে যায়। বিল্ড-আপে ইংল্যান্ড হটফেভারিট হলেও টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় না তাদের। প্রতি বারই মনে হয়— আসছে বছর হয়তো আবার হবে। কিন্তু হয় আর কোথায়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যেখানে বিশ্বের সেরা লিগের মধ্যে একটা, দেশের জার্সিতে তা হলে কোনও সাফল্য থাকবে না কেন?
এ বার ইউরো শুরুর আগে আশা করেছিলাম হয়তো নতুন কোনও ইংল্যান্ডকে দেখব। বড় নামের মোহ কাটিয়ে তারুণ্যের জোশের উপর ভরসা রেখেছেন রয় হজসন। অ্যাডাম লাল্লানা, কাইল ওয়াকার, ড্যানি রোজ, রহিম স্টার্লিং— দুর্দান্ত সমস্ত প্রতিভারা আছে দলে। কিন্তু শনিবার রাতের রাশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখার পর একটু হলেও হতাশ হলাম।
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড বনাম উরুগুয়ে ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। সাও পাওলোর স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসেই দেখেছিলাম ম্যাচটা। আর সে দিনের ইংল্যান্ডের সঙ্গে এ দিনের ইংল্যান্ডের মধ্যে কোনও পার্থক্যই পেলাম না। ভুলগুলো থেকে কিছুই যেন শিখতে পারেনি। সেই উরুগুয়ে ম্যাচে সুযোগের পর সুযোগ তৈরি করেও ১-২ হেরেছিল ইংল্যান্ড। এ দিনও সব কিছুই ছিল— দুর্দান্ত মুভমেন্ট। গতি দিয়ে প্রতিআক্রমণ করা। আঁটসাঁট রক্ষণ। উইং ব্যাকদের মুহুর্মুহু ওভারল্যাপ। ছিল না শুধু একটাই জিনিস— ফিনিশিং।
ইংল্যান্ড কোচ রয় হজসনের পছন্দের ফর্মেশন ৪-৩-৩। আর ৪-৩-৩ মানেই তো এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ফ্লাইং-ফুলব্যাকদের’ আদর্শ ফর্মেশন। শনিবার রাতের কাইল ওয়াকার ও ড্যানি রোজকে দেখেও সেটাই মনে হল। উইঙ্গারদের মতোই খেলছিল ওরা। সব সময় উপর-নীচ করছে। ক্রস বাড়াচ্ছে। পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ছে। যেন বক্স টু বক্স মিডফিল্ডার। এ রকম দুই অসাধারণ ফুলব্যাকের ফায়দাও তুলতে পারল না ইংল্যান্ড।
ওয়েন রুনিকে মাঝমাঠে দেখলে অনেকেই অবাক হতে পারেন। মনেই হতে পারে ওর মতো সেন্টার ফরোয়ার্ডকে এত ডিপ থেকে কেন খেলালেন হজসন? কিন্তু আমার তো মনে হয় কোচের এটা দারুণ একটা স্ট্র্যাটেজি ছিল। হজসনের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল প্রথম দলে স্ট্রাইকার কে হবে— রুনি না হ্যারি কেন। কিন্তু রুনি ভাল পাস বাড়াতে পারে। তাই মাঝমাঠে রুনিকে রেখে দু’জনকেই প্রথম দল সাজান হজসন।
স্ট্রাইকার রুনির মতো মিডফিল্ডার রুনিও কিন্তু অনেক ওয়ার্কলোড নিল। কয়েকটা ভাল পাসও বাড়াল। আবার শটও মারল বেশ কয়েকটা। দ্বিতীয়ার্ধে তো প্রায় একটা গোলই করেই দিচ্ছিল রুনি। কিন্তু দুর্দান্ত গোলটা বাঁচাল রাশিয়ার গোলকিপার ইগর আকিনফিভ। রুনির মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আছে। ও একাই টানতে পারে দলকে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে রুনি। ক্যাপ্টেন্স গেম বলতে যা বোঝায়। কিন্তু সব কিছুর উপরই জল ঢালল লাল্লানা-স্টার্লিংদের জঘন্য সব মিস।
এরিক ডায়ারের গোলটা এক কথায় অনবদ্য। ফ্রি-কিক থেকে বলটা দুর্দান্ত প্লেস করল ডায়ার। আকিনফিভের কিছুই করার ছিল না। কিন্তু আরও তিন-চার গোল আগেই হত। আর সেই মাসুল চোকাতে হল ম্যাচের শেষলগ্নে। যখন স্টপেজ টাইমে রাশিয়ার বেরেজুটসকি ১-১ করে ফেলল। প্রতিভা থাকতে পারে কিন্তু ফিনিশিংয়ে উন্নতি না করলে এই ইউরোতেও ভুগবে ইংল্যান্ড।