কথা বলতে চেয়ে সনির বার্তা সঞ্জয়কে

‘কেউ পিছন থেকে ছুরি মারলে আমি কী করব’

পদত্যাগের বারো ঘণ্টা পরেও তিনি বুঝতে পারছেন না, ছয় ম্যাচ অপরাজিত থাকার পরও কেন এক শ্রেণির সমর্থক তাঁর নামে ‘গো ব্যাক’ দিলেন ইন্ডিয়ান অ্যারোজ ম্যাচের পর। তা সত্ত্বেও সাড়ে তিন বছরের সফল মোহনবাগান কোচের পদ ছেড়ে দেওয়ার পর  একই রকম তিনি। বাড়ি, বাজার, অফিস করেছেন অন্য দিনের মতো। বর্তমান অধিনায়ক সনি নর্দে থেকে ক্লাব ছেড়ে যাওয়া জেজে লালপেখলুয়ার মতো খেলোয়াড়,  কয়েকশো সদস্য-সমর্থকের বার্তায় মেসেজ বক্স  ভর্তি। ক্লাব সহ-সচিবের আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট দেখেও নির্লিপ্ত। আনন্দবাজারের সঙ্গে বুধবার দুপুরে বাড়ির সামনের ক্লাবে বসে একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় কখনও পাওয়া গেল ডাকাবুকো সঞ্জয় সেনকে, কখনও আবার আই লিগ জয়ী কোচ আবেগপ্রবণও।পদত্যাগের বারো ঘণ্টা পরেও তিনি বুঝতে পারছেন না, ছয় ম্যাচ অপরাজিত থাকার পরও কেন এক শ্রেণির সমর্থক তাঁর নামে ‘গো ব্যাক’ দিলেন ইন্ডিয়ান অ্যারোজ ম্যাচের পর।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৫৪
Share:

লক্ষ্য: কয়েক দিন বিশ্রাম নিয়ে কোচিংয়ে ফিরতে চান সঞ্জয়।

প্রশ্ন: মোহনবাগানে সাফল্যের দুর্দান্ত কোচিং রেকর্ড। আই লিগে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলছেন, তা-ও ছেড়ে দিলেন কোচের পদ?

Advertisement

সঞ্জয়: ক্লাবের পরিবেশটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। কয়েক সপ্তাহ আগে ডার্বি জিতেছি। ছয় ম্যাচে একটাও হারিনি। তা সত্ত্বেও কিছু সমর্থক আমাকে গালাগালি দিচ্ছিলেন, ‘গো ব্যাক’ স্লোগান উঠছিল। সেটা ভাল লাগেনি। আগেও তো ড্র হয়েছে। কই, এরকম তো হয়নি। মনে হচ্ছিল কিছু একটা হচ্ছে ভিতরে ভিতরে। অনেকে সেটা বলছিল। তাই সব দায় নিয়ে সরে দাঁড়ালাম।

প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে, আপনি যাতে চাপের মুখে সরে দাঁড়ান সে জন্য কর্তা ও কোচিং স্টাফের কেউ কেউ চক্রান্ত করেছিল।

Advertisement

সঞ্জয়: সিদ্ধান্তটা একেবারেই আমার নিজস্ব। কেউ চাপ সৃষ্টি করে কিছু করেনি। করতে পারতও না। তবে এখন যা শুনছি তাতে আশ্চর্য হচ্ছি। সামনে হেসে। হাত মিলিয়ে গিয়ে কেউ যদি পিছন থেকে ছুরি মারে, কী করব। এখন মনে হচ্ছে, ড্র করার পরও ওই সব বিক্ষোভ, স্লোগান তৈরি করা। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না।

প্রশ্ন: আপনি নাকি ডাকাবুকো। সে জন্য এক শীর্ষ কর্তার বিষ-নজরে পড়েছিলেন?

সঞ্জয়: আমি টিম তৈরি নিয়ে কোনও কর্তার মাথা গলানো পছন্দ করি না। মহমেডানকে দুটো টুনার্মেন্টে চ্যাম্পিয়ন করার পরও এ জন্য পদত্যাগ করেছিলাম। আর আমি বারবারই স্পষ্ট কথা বলি। নিজেকে কী ভাবে বদলাব?

প্রশ্ন: ১০০ ম্যাচে ৫১ জয়। ৩২ ড্র। আই লিগ ডার্বিতে রিজার্ভ বেঞ্চে বসে কখনও হারেননি, তা সত্ত্বেও আপনার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ?

সঞ্জয়: অভিযোগ পরে শুনছি। আগে সবিনয় বলি গত তিন বছরে মোহনবাগানকে যে সাফল্য দিয়েছি সেটা যদি কেউ দিতে পারে, তা হলে তাঁকে বাড়ি গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসব। আর এটা বলছি, এখন যে সব কর্তা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় আমি যখন কোচিং করতে এসেছিলাম তখন ওরা মুখ লুকিয়ে ঘুরে বেড়াত। এ বার অভিযোগগুলো বলুন?

আরও পড়ুন: মোহনবাগানের হেড কোচের দায়িত্বে শঙ্করলাল

প্রশ্ন: অস্ত্রোপচারের পর আপনি নাকি টিমের ড্রেসিংরুম সামলাতে পারছিলেন না? মাঠে নেমে আগের মতো অনুশীলন করাচ্ছিলেন না?

সঞ্জয়: তা হলে ডার্বি জিতলাম কী করে? তখন ড্রেসিংরুম কি অন্য কেউ সামলেছিল? কে তৈরি করেছিল স্ট্র্যা়টেজি?

প্রশ্ন: আপনি নাকি ফুটবলারদের অপছন্দের হয়ে উঠেছিলেন?

সঞ্জয়: (হেসে মোবাইল দেখালেন) এই দেখুন সনি নর্দের মেসেজ। আমার সঙ্গে আধ ঘণ্টা কথা বলতে চায়। আজ (বুধবার) মুম্বইয়ে গিয়েছে অনন্ত জোশীর কাছে হাঁটু দেখাতে। ‘ফিরে এলে কথা বলব’ জানিয়েছি ওকে। সনিই তো ড্রেসিংরুমে আমার প্রধান প্রতিনিধি ছিল।

প্রশ্ন: দীর্ঘদিনের সহকারী শঙ্করলাল চক্রবর্তীর কোনও মেসেজ পেলেন? ফেরার কোনও অনুরোধ? ওকেই তো চিফ কোচ করে দিল মোহনবাগান।

সঞ্জয়: না। ও সব নিয়ে ভাবি না। শঙ্করের জন্য শুভেচ্ছা রইল।

প্রশ্ন: কিছু কর্তার অভিযোগ, আপনার নাকি প্ল্যান বি, সি, ডি নেই?

সঞ্জয়: তাই নাকি! প্ল্যান এ নিয়ে তা হলে তিন বছরে ৬৪ ভাগ সাফল্য। এটা তো বড় ব্যাপার। আর জোসে মোরিনহো তো পরপর তিনটে ড্র করেছিল, ওরও তা হলে কোনও বি, সি, ডি নেই। কারা বলছে এ সব?

প্রশ্ন: আপনি নাকি ফিজিও গার্সিয়া আর কাতসুমিকে নিতে চাননি।

উত্তর: গার্সিয়ার সঙ্গে ক্লাব কথা বলেনি। আর এশীয় কোটায় আমার প্রথম পছন্দ ছিল ইউতা কানোওয়াকি। পরে কাতসুমি। ক্লাব কর্তারাও তো ওর উপর বিরক্ত ছিল।

প্রশ্ন: গত দু’বারের মতো এ বারও ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব ফিরিয়েছেন। এখন কি সেটার জন্য আক্ষেপ হচ্ছে?

সঞ্জয়: একেবারেই না। মোহনবাগানে কোচিং করিয়ে আমি খুশি। ট্রফি ছাড়াও অনেক কিছু পেয়েছি। আমাকে সাসপেন্ড করার পর মুখোস পরে দশ হাজার দর্শক ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, ভারতীয় ফুটবলে কোনও কোচের ভাগ্যে জোটেনি। সেই সদস্য-সমর্থকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কারও বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ নেই। ঈশ্বর আমাকে ভাল-খারাপ দুটো দিকই দেখালেন। মঙ্গলবার বাড়িতে ফিরে ছেলে আর স্ত্রীকে সেটাই বলছিলাম।

প্রশ্ন: টিমের ব্যর্থতার পিছনে প্রধান কারণ কী?

সঞ্জয়: কোনও অজুহাত কখনও দিইনা আমি। সব দায় আমার। তবে চার বিদেশির একসঙ্গে চোট-আঘাত। সহজ সুযোগ নষ্ট। তা ছাড়া নিজেদের মাঠে ফেরাটাও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।

প্রশ্ন: এরপর কী করবেন?

সঞ্জয়: কিছু দিন বিশ্রাম নেব। তার পরে আবার কোচিংয়ে ফিরব। ক্লাব, দেশ, আইএসএলের কোনও ক্লাবে দেখতে পাবেন আমাকে। একটু অপেক্ষা করুন। ডেরেক পেরিরা যদি গোয়ায় কাজ করে, আমিও তো দিল্লি ডায়ানামোজ-এ সেটা করতে পারি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন