যুগলবন্দি: ভারতকে জিতিয়ে ফিরছেন ভুবনেশ্বর-ধোনি।ছবি: পিটিআই।
ধোনি বনাম ধনঞ্জয়। বৃহস্পতিবার পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় ওয়ান ডে-টা এক সময় এই যুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। একজন অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। অন্যজন সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা এক রহস্য স্পিনার। যার গুগলিতে অর্ধেক ভারতীয় ব্যাটিং এ দিন মুখ থুবরে পড়ে। ধনঞ্জয়ের গুগলির গুঁতোয় ২২ রানের মধ্যে সাত উইকেট হারিয়ে ভারত যখন প্রবল চাপে, তখনই ধোনির ও ধনঞ্জয়ের লড়াই শুরু। সাতটার মধ্যে ছ’টাই ধনঞ্জয়ের উইকেট। এই ছ’টার মধ্যে আবার তিনটেই বোল্ড ও দুটো এলবিডব্লিউ আর একটা স্টাম্পড। বোঝাই যাচ্ছে ব্যাটসম্যানদের একের পর এক বোকা বানিয়েছে ধনঞ্জয়।
ধোনি-ধনঞ্জয়ের লড়াইয়ের মধ্যেই কখন যে ম্যাচটাকে জয়ের দিকে টেনে নিয়ে গেল ভুবনেশ্বর কুমার, তা বোঝাই যায়নি। ওদের সকলেরই ফোকাস তখন ধোনিকে ফিরিয়ে ম্যাচ জেতার দিকে। ওদের অলক্ষ্যে ভুবনেশ্বর কুমারই তখন কাজের কাজটা করে বেরিয়ে গেল। ম্যাচ রেফারি হিসেবে রঞ্জি ট্রফিতে ওর সেঞ্চুরি দেখেছি আমি। তাই ওর এই ব্যাটিংয়ে তেমন অবাক নই। অবাক নই ধোনির ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিং দেখেও। ও দেখিয়ে দিল কেন ওকে দরকার। কিন্তু অবাক হলাম ধনঞ্জয়ের বোলিং দেখে।
এমন রহস্য স্পিনার শ্রীলঙ্কায় অবশ্য আগেও এসেছে। অজন্তা মেন্ডিসের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। মেন্ডিসের ম্যাজিক এক সময় শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়েছে। কিন্তু পরে দেখা গিয়েছে, তাদের রহস্যের সমাধান হয়ে গিয়ে তারা অতি সাধারণ স্পিনারে পরিণত হয়েছে। এই ধনঞ্জয়ও হয়তো সে রকমই হবে। তবে বৃহস্পতিবার পাল্লেকেলেতে ও যা দেখাল, তা অসাধারণ।
বিপক্ষ যেমনই হোক, কোনও সময়েই যে ঢিলেমি দেওয়া উচিত না, তা এ দিন শ্রীলঙ্কা বিরাটদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ২৩১ রান তাড়া করতে নেমে বিরাট নিজে না গিয়ে যখন কেদার যাদবকে ব্যাট করতে পাঠায়, তখনই মনে হচ্ছিল, হয়তো একটু হাল্কা ভাবে নিচ্ছে ওরা চ্যালেঞ্জটাকে। সেটাই কাল হল। শেষ পর্যন্ত ধোনি-ভুবি না লড়লে বিরাটকে এর মাশুল দিতে হত। বরং ব্যাটিং অর্ডারে অন্য জায়গায় বদল করা উচিত ছিল। হার্দিক পাণ্ড্যর পায়ে একটা চোট হয় এ দিন। ভুবনেশ্বরকে ওর আগে ব্যাট করতে পাঠালে হয়তো চাপটা এতটা বেড়ে যেত না।
আরও পড়ুন:জাতীয় সঙ্গীত বিতর্ক: পক্ষে মিলখা, বিপক্ষে চুনী
ধোনির ভাগ্যও এ দিন ওর সঙ্গে ছিল। যার জেরে ওর স্টাম্পে বল লাগলেও বেল পড়েনি। আসলে ভাগ্য চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গেই থাকে। ঠাণ্ডা মাথায় অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কী করে ফিনিশ করতে হয়, দেখিয়ে দিল প্রাক্তন অধিনায়ক। আর ভুবি বোঝাল, ভারতের ন’নম্বর ব্যাটসম্যানও ম্যাচ বাঁচাতে পারে।
তবে এই ম্যাচে ফলের চেয়েও বড় ব্যাপার ভারতীয় বোলারদের অসাধারণ পারফরম্যান্স। বিরাট কোহালি তার দলের নতুন বোলারদের আগামী দেড় বছরে কী ভাবে ব্যবহার করবে, এটা ভারতীয় ক্রিকেটে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। এই শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ে ধস নামানোটা যে বিশাল কৃতিত্বের, তা কিন্তু নয়। কিন্তু যে ভাবে ওরা বোলিংটা করছে। যে যে পরিস্থিতিতে ওদের ব্যবহার করে ফল মিলছে, তা আশাবাদী হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
যুজবেন্দ্র চহাল, জশপ্রীত বুমরা ও অক্ষর পটেলকে এই সিরিজে পরখ করে নেওয়া হচ্ছে ২০১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে। এদের মধ্যে চহালকে বেশি নম্বর দেওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ মানের বোলিং। বিরাট কোহালিকে চহাল খুব একটা খুশি করতে পারবে বলে মনে হয় না।
তবে অক্ষর পটেল আশা জাগাচ্ছে। গুজরাতি এই তরুণ স্পিনারের সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হল, ওর উচ্চতা। ওর বলটা যেহেতু ডেলিভারি হয় একটু ওপর থেকে। স্টাম্প টু স্টাম্প বলও করে সমানে। তাই ব্যাটসম্যানকে বেশি জায়গা দেয় না। এ দিন যেমন পাল্লেকেলেতে একটা মাত্র স্কোয়ার কাট হয়েছে ওর বলে, বিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা কোনও সুইপ করতে পারেনি ওকে। প্রশ্ন উঠতে পারে কুলদীপ যাদবকে কেন খেলানো হচ্ছে না? কুলদীপ ভারতের স্টক বোলার, রহস্য বোলার। বিশ্বকাপে কুলদীপই হবে তুরূপের তাস। তাই ওকে লুকিয়ে রাখাই ভাল। আমার মনে পড়ছে অস্ট্রেলিয়া অ্যাসেজ সিরিজের প্রস্তুতি ম্যাচে আনকোরা শেন ওয়ার্নকে মাঠে নামায়ইনি। প্রথম টেস্টেই নেমে মাইক গ্যাটিংকে বোকা বানিয়ে বোল্ড করে দিয়েছিল ওয়ার্ন। কুলদীপকেও সে ভাবে লুকিয়ে রেখে ধারালো করে তুলতে হবে। বুমরাও কিন্তু অসাধারণ। আগের মালিঙ্গাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বুমরা। খেয়াল করে দেখবেন, ওর বেশির ভাগ উইকেটই কিন্তু বোল্ড। আর ডেথ ওভারে ও এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা। তাই বিশ্বকাপের দলে এখন থেকেই দেখতে পাচ্ছি ওকে।
ভারতের এই বোলিংয়ের সঙ্গে মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব যোগ হলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। বুমরার মতো হার্দিক পাণ্ড্যকেও যত্ন নিয়ে তৈরি করতে হবে শাস্ত্রী-কোহালিকে।