ক্ষোভেই এখন খেলা দেখা বন্ধ করেছেন দোলারা

রেলের স্পোর্টস অফিসার অলিম্পিয়ান দোলা বলছিলেন, ‘‘কোটি কোটি সমর্থকের ক্লাবের মাঠের এই অবস্থা জানতামই না। বিশ্বের বহু দেশে গিয়েছি প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে। কোথাও কোনও স্টেডিয়ামে বাথরুম নেই, জল নেই শুনিনি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:৫৭
Share:

মোহনবাগান মাঠ। ছবি: সংগৃহীত।

দুই প্রধানের মাঠে দর্শকের ঢল নেমেছে। সেখানে মহিলা দর্শকরাও আসছেন দল বেঁধে। কিন্তু তাঁদের জন্য ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্য নেই। এই খবর আনন্দবাজারে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পরেই বদলে গিয়েছে আবহ।

Advertisement

মেয়েদের বিশ্বকাপে ভারতের অধিনায়কত্ব করা কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার থেকে বিশ্ব তিরন্দাজিতে সোনা জেতা মেয়ে দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন শান্তি মল্লিক থেকে সাত সমুদ্র পার হওয়া সাঁতারু বুলা চৌধুরী— সকলেই মেনে নিচ্ছেন ইচ্ছে এবং আবেগ থাকলেও সমস্যার কথা ভেবে তাঁরা খেলা দেখতে যান না। অনেকে আবার যেতেন। তবে প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে খেলা দেখা ছেড়ে দিয়েছেন। প্রাক্তন বিধায়ক বুলা চৌধুরী আবার প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন, ‘‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান নিয়ে এত হইচই হচ্ছে। ময়দান কি ভারতের বাইরে? ক্লাবকর্তারা তা হলে করছেনটা কী?’’ বুলার প্রশ্ন, ‘‘বাথরুম না পেয়ে সবাই তো ময়দানকে নোংরা করছেন বাধ্য হয়ে। এখনই এই সমস্যার সমাধান করা দরকার।’’ আর তাঁর সহমর্মী হয়ে এ বছরই মেয়েদের ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন করা তালতলা দীপ্তি সংঘের কোচ ও প্রাক্তন তারকা স্ট্রাইকার সুজাতা কর স্বীকার করে নিয়েছেন, টিকিট কেটে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে খেলা দেখতে গিয়ে বিরতির সময় বাধ্য হয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। কারণ, বাথরুম খুঁজে পাননি তিনি। সুজাতা বলছেন, ‘‘এখনও যেতে চাই। কিন্তু ভয় পাই মেয়েদের নানা সমস্যার কথা ভেবে।’’

ফেডারেশনের ‘ডি’ লাইসেন্স কোচেদের শিক্ষিকা কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার ভারতীয় ফুটবলে বড় নাম। বলছিলেন, ‘‘আগে খেলা দেখতে যেতাম নিয়মিত। ফুটবল নিয়েই তো সারা জীবন কাটালাম। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের খেলা দেখতে তো ভালই লাগে। এত আবেগ! টিকিট কেটে যেতামও সাধারণ গ্যালারিতে। এখন আর যাই না। কারণ গেলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। বাথরুম, জল কিছুই নেই। নোংরা পরিবেশ।’’ তাঁর সঙ্গে একমত ফুটবলের অর্জুন শান্তি মল্লিকও। এখন ছেলে-মেয়ে সবাইকেই কোচিং করান। বাংলার কোচিংও করিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সম্মান পাওয়ার পর মোহনবাগানের সাম্মানিক ‘গোল্ডেন কার্ড’ পেয়েছিলেন। সে জন্য ক্লাবের প্রতি আবেগও আছে তাঁর। সেই সঙ্গে অভিমানও। শান্তি বলছিলেন, ‘‘এত পুরনো ক্লাব। বিশ্ব জুড়ে নাম। সেখানে মেয়েদের শুধু নয়, কোনও দর্শকেরই স্বাচ্ছন্দ্য নেই। বাথরুম, জল তো স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য বললে ভুল হবে, ওটা জরুরি। আগে যেতাম, এখন আর যাই না। অনেক মেয়েই খেলা দেখতে চায়। আমাকে বলে। আমি যেতে বারণ করি। কারণ, মোহনবাগান মাঠে তো মেয়েদের জন্য কোনও ব্যবস্থাই নেই। নিজের বিপদে পড়ার কথা বলি। এত নোংরা চারদিকে।’’

Advertisement

তিরন্দাজির অর্জুন দোলা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুটবল মাঠে সময়ের অভাবে যান না। একবার আইএসএলে এটিকে-র খেলা দেখতে গিয়েছিলেন। ভাল লেগেছিল। কিন্তু দুই প্রধানের মাঠে ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া হয় না। রেলের স্পোর্টস অফিসার অলিম্পিয়ান দোলা বলছিলেন, ‘‘কোটি কোটি সমর্থকের ক্লাবের মাঠের এই অবস্থা জানতামই না। বিশ্বের বহু দেশে গিয়েছি প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে। কোথাও কোনও স্টেডিয়ামে বাথরুম নেই, জল নেই শুনিনি। তা হলে এখানকার ক্লাবগুলো করছেটা কী? এই অবস্থায় এত মেয়ে খেলা দেখতে আসছে, এটা তো বিরাট ব্যাপার। তাদের কথা তো ভাবতে হবে।’’

আইএসএল বা আই লিগ অথবা কলকাতা লিগে কোনও মেয়ে না এলেও সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায়কে দেখা যাবেই মাঠে। বাংলার প্রথম মহিলা ম্যাচ কমিশনার ময়দানের পরিচিত ক্লাবকর্তা। তিনি বলছিলেন, ‘‘আগেও আসত মেয়েরা। তবে এ বার ভিড় একটু বেশি। বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে আসছে। আমার কাছে এসে নানা সাহায্য চায়। কিছুই করতে পারি না। মোহনবাগান মাঠে তো বাথরুমই নেই।’’

এ সবের মধ্যেই দুই প্রধানের দর্শক-স্বাচ্ছন্দ্যের কোনও ব্যবস্থা নেই, এই খবরের জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন, ক্লাবকর্তারা চাইলে তাঁরা সাহায্য করতে রাজি। কিন্তু কর্তাদের ঘুম ভাঙাবে কে? উদাসীন রাজ্য সরকারের গ্যালারির দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ত দফতরের কর্তারাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement