শুধু টুর্নামেন্টে প্রতিভা বাঁচবে তো, প্রশ্ন মাঠেই

প্রচুর প্রতিযোগিতা হচ্ছে। পুরস্কার দিতে প্রাক্তন খেলোয়াড়রা আসছেন। কিন্তু রাজ্যস্তরে জেলার ছেলেমেয়েরা কি প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছেন? প্রশ্নটা উঠছে ফুটবল মাঠ থেকেই। গত ডিসেম্বরে পুলিশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জঙ্গলমহল কাপ। সেই ফুটবল টুর্মানেন্টে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে যোগ দেয়। এ বার হল পশ্চিম মেদিনীপুর ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এখানেও ছিল ফুটবল টুর্নামেন্ট। প্রায় সাড়ে চার হাজার ছেলেমেয়ে যোগ দেয়। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে ছিল ফাইনাল খেলা।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৫ ০১:২৪
Share:

জেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ফুটবল ফাইনাল চলছে অরবিন্দ স্টেডিয়ামের ফাঁকা গ্যালারিতে।

প্রচুর প্রতিযোগিতা হচ্ছে। পুরস্কার দিতে প্রাক্তন খেলোয়াড়রা আসছেন। কিন্তু রাজ্যস্তরে জেলার ছেলেমেয়েরা কি প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছেন? প্রশ্নটা উঠছে ফুটবল মাঠ থেকেই।
গত ডিসেম্বরে পুলিশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জঙ্গলমহল কাপ। সেই ফুটবল টুর্মানেন্টে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ে যোগ দেয়। এ বার হল পশ্চিম মেদিনীপুর ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এখানেও ছিল ফুটবল টুর্নামেন্ট। প্রায় সাড়ে চার হাজার ছেলেমেয়ে যোগ দেয়। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে ছিল ফাইনাল খেলা। এসেছিলেন প্রখ্যাত ফুটবলার গৌতম সরকার, বিদেশ বসু, সমরেশ চৌধুরী থেকে মানস ভট্টাচার্য, বিশ্বজিত্‌ ভট্টাচার্য, দীপেন্দু বিশ্বাসরা।

Advertisement

ঝকঝকে স্টেডিয়াম, নীল-সাদায় রাঙানো সুদৃশ্য গ্যালারি, খেলা দেখতে হাজির কৃতী খেলোয়াড়রা, জেলার ফুটবল-বিনোদনের সব রকম উপকরণই হাজির। অবশ্য গ্যালারিতে দর্শক সংখ্যা ছিল খুবই কম। তাহলে কী মফফ্সলে ফুটবল উন্মাদনা কমছে? জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক কর্তা বলছেন, “মেদিনীপুরের মানুষের ফুটবল ঘিরে যে আগ্রহ ছিল, তার অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে। তাই মাঠে দর্শক কম হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, হারিয়ে যাওয়া ফুটবল, উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে।”

এত টুর্নামেন্টের পরে প্রত্যাশিত সাফল্য যে মিলছে না, তা মানছেন জেলার ক্রীড়া-কর্তারাও। কিন্তু কেন? জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিনয় দাস মালের জবাব, “কিছুটা অবশ্যই পরিকাঠামোর অভাব। জেলায় যে পরিকাঠামো থাকা উচিত, তা নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি।” একই সঙ্গে তিনি মানছেন, শুধু লিগ কিংবা টুর্নামেন্ট করলে হবে না। প্রতিভাবান ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। একসঙ্গে ১০০-১৫০ জনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও হবে না। তাই ঠিক হয়েছে, ৩০-৩৫ জন ছেলেমেয়েকে নিয়ে এক-একটা দল করা হবে। একজন কিংবা দু’জন কোচ এদের প্রশিক্ষণ দেবেন। আইএফএ-এর সঙ্গেও কথা হয়েছে। প্রয়োজনে কলকাতা থেকে কোচ আসবেন।

Advertisement

প্রাক্তন ফুটবলার অমিয় ভট্টাচার্যও বলছেন, “জেলায় যে প্রতিভা নেই, তা নয়। অনেক ভাল ভাল ছেলেমেয়ে আছে। যারা কলকাতার বুকে সাফল্য পেতে পারে। তবে সবার আগে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলাটা খুব জরুরি। না হলে মফফ্সলের ছেলেমেয়েরা পিছিয়েই পড়বে।” অমিয়বাবুর কথায়, “অনেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে কলকাতায় যায়। তবে থাকার সুযোগ পায় না। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ থাকলে ভাল হয়। তাহলে অন্তত জেলা থেকে রাজ্যে সাপ্লাই লাইনটা চালু থাকবে।”

তবে জেলা স্তরে টুর্নামেন্টের গুরুত্বও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জেলার ক্রীড়া-কর্তাদের মতে, প্রতিযোগিতামূলক খেলা যত বেশি হবে, ততই ভাল। এতে আরও বেশি প্রতিভা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। পরে এদেরই প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বৃহস্পতিবার পুরস্কার বিতরণের মঞ্চ থেকে এই প্রশিক্ষণের আশ্বাস শোনা গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেছেন, “থানা এলাকার সেরা খেলোয়াড়রা এ বার কলকাতায় যাবে। ওখানে ট্রায়াল হবে।” মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই তথা ‘টালিগঞ্জ অগ্রগামী’র অন্যতম কর্তা স্বরূপ বিশ্বাসেরও আশ্বাস, “জেলায় এসে ফুটবল প্রতিভা দেখে গেলাম। সেরাদের কলকাতায় নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যারা ভাল করবে, তারা যাতে ক্লাবের হয়ে খেলতে পারে, সেই চেষ্টা করব।”

এ দিন সকালে দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ছেলেদের ২ কিলোমিটার দৌড়, মেয়েদের ১ কিলোমিটার। দুপুরে স্টেডিয়ামে ফুটবল ফাইনাল হয়। খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ হয়। ফুটবলে পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ জেলায় ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঘাটাল, মেয়েদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শালবনি। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলায় ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঝাড়গ্রাম, মেয়েদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নয়াগ্রাম।

ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলায় মেয়েদের ফুটবলে জয়ী নয়াগ্রামের দলকে ট্রফি দিচ্ছেন পুলিশ কর্তারা।

এই টুর্নামেন্টের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কৃতী প্রাক্তনীরাও। প্রাক্তন ফুটবলার সমরেশ চৌধুরী বলছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের এখানে আসা। সাড়ে চার হাজার ছেলেমেয়ে এই প্রতিযোগিতায় খেলল। এটা মুখ্যমন্ত্রীর সাফল্য। পুলিশ সুপারের সাফল্য।” আর এক প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকারের কথায়, “শুধু টালিগঞ্জে নয়, এখানকার ছেলেমেয়েদের যদি অন্য ক্লাবে দিতে পারি, তাহলে আরও আনন্দ পাব।” আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্তের মতে, “বেলপাহাড়ির ছেলেমেয়েরা মেদিনীপুরে খেলছে, পাঁচ বছর আগে এটা ভাবাই যেত না। এরা যদি জাতীয়স্তরে খেলতে পারে, তাহলেই প্রতিযোগিতা সফল হবে।”

কিন্তু বাস্তব হল জেলার ছেলেমেয়েদের আরও ভাল খেলতে হলে যা যা প্রয়োজন তার অনেক কিছুই পশ্চিম মেদিনীপুরে নেই। সর্বত্র ভাল মাঠ না থাকায় অনুশীলনে অসুবিধে হয়। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নেই। জেলা থেকে প্রতিভা তুলে আনতে আগে পরিকাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। পুলিশের এক কর্তাও মানছেন, “এখন আর শুধু খেলার জন্য ফুটবল করলে হবে না। যারা ভাল খেলবে, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই জেলার ছেলেমেয়েরা রাজ্যস্তরে প্রত্যাশিত সাফল্য পাবে।”

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন