অনুশীলনে রিম্পা। নিজস্ব চিত্র।
সামান্য দিনমজুর পরিবারের মেয়ে সে। টানাটানির সংসার। কিন্তু সেখান থেকেই বাংলার মেয়েদের অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল দলের অধিনায়ক হয়েউঠেছে সে।
রিম্পা হালদার।
বসত পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়া গ্রামে। আগামী ২২ শে জুন অসমের গুয়াহাটিতে জম্মু-কাশ্মীরের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে তার দল। নিজে সে স্ট্রাইকার। তার দলে খেলবে পলাশিপাড়ার ছোট নলদাহের সারজিদা খাতুনও। দুই মেয়ের দৌলতে স্বাভাবিক ভাবেই খুশির হাওয়া বইছে পলাশিপাড়ায়।
হাঁসপুকুরিয়া বিদ্যাপীঠের পড়ুয়া রিম্পা ছোট থেকে ফুটবলে আসক্ত। স্কুলে ক্লাসঘরের চেয়ে মাঠেই বেশির ভাগ সময়ে দেখা যেত তাকে। ফুটবল নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে দাপিয়ে বেড়াত সে। তার পায়ের কাজ দেখে অবাক হয়েছিলেন হাঁসপুকুরিয়া স্পোর্টিং ইউনিয়নের সদস্যেরা। সেই ক্লাবেরই অভীক বিশ্বাস তাকে আলাদা করে তালিম দিতে থাকেন। তা দেখে গ্রামের অন্য মেয়েদেরও ফুটবল খেলার প্রতি ঝোঁকে বাড়ে। ওই ক্লাবের তত্ত্বাবধানেই শুরু হয় মেয়েদের ফুটবল কোচিং ক্যাম্প।
এবং উত্থান শুরু হয় রিম্পার। এলাকার বিভিন্ন কোচিং ক্যাম্প নিয়ে আয়োজিত ফুটবল প্রতিযোগিতায় মাঠে নামতে থাকে সে। আর দর্শকদের নজর কাড়তে থাকে। এর মধ্যেই কলকাতায় শুরু হয় কন্যাশ্রী কাপ। সেখানে খেলার জন্য রিম্পার সঙ্গে চুক্তি করে সরোজিনী নাইডু ক্লাব। সেই টুর্নামেন্টে ১৫টি গোল দিয়ে বাংলা নির্বাচকমণ্ডলীর নজর কাড়ে রিম্পা। রাজ্যের অনূর্ধ্ব ১৭ দলে খেলার সুযোগ হয়।
হাঁসপুকুরিয়া স্পোটিং ইউনিয়নের অভীক বিশ্বাস বলছেন, “ওর দুই পায়েই ভাল কাজ রয়েছে। ও বাংলার ফুটবল টিমে সুযোগ পাওয়ায় খুব খুশি হয়েছিলাম। এ বার অধিনায়ক হওয়ায় আরও খুশি আমরা। আরও ভাল খেলে ও যেন ভারতীয় দলে খেলার সুযোগ পায়, এই কামনা করি।” আর রিম্পার বাবা শ্রীবাস হালদার বলেন, “ফুটবলের প্রতি ওর ছোট থেকেই ভালবাসা ছিল। আমরা কখনও ওকে আটকাইনি। আজ একটা জায়গায় পৌঁছেছে, এটাই ভাল লাগছে। প্রতি ম্যাচে ভাল খেলুক, এটাই চাই।”
বৃহস্পতিবার বাংলা অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল দলের কোচিং স্টাফ অরুণ ঘোষ ফোনে বলেন, “১৮ জুন অসমে শুরু হচ্ছে খেলা। ২২ তারিখ রিম্পার নেতৃত্বেই জম্মু-কাশ্মীরের বিরুদ্ধে আমাদের দল মাঠে নামবে।”
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত রিম্পা। পর্তুগালের সিআর-সেভেনের মতোই গোলমেশিন হতে চান তিনি।
রাতে ফোনে রিম্পা বলেন, “খুব ভাল লাগছে। এখন শুধু ভাল করে খেলতে চাই। আর ভারতীয় দলে খেলার সুযোগ পেতে চাই।”