স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী মহিলা ফুটবল দলের কোচ জর্জ ভিলদা। ছবি: রয়টার্স
যত কাণ্ড জর্জ ফিলদাকে ঘিরে। স্পেনের মহিলা ফুটবল দলের কোচ। দলকে বিশ্বকাপ জেতালেও ফুটবলারদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। সরাসরি কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে খেলতে আসেননি দলের ১২ ফুটবলার। বিশ্বকাপ জেতার পরে সেই ফুটবলারদেরই বার্তা দিল স্পেনের ফুটবল সংস্থা। তারা জানিয়ে দিল, ফিলদার উপরেই ভরসা রাখছে তারা।
নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে ফিলদার একটি ছবি দিয়েছে স্পেনের ফুটবল সংস্থা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বকাপ জেতার পরে ট্রফিতে চুমু খাচ্ছেন ভিলদা। সেই ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘ভিলদাই থাকছে।’’ এই বার্তা থেকে পরিষ্কার, আগামী দিনেও ভিলদার উপরেই ভরসা রাখছেন তাঁরা। কারণ, তরুণ ফুটবলারদের নিয়েও বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। সাফল্য এনে দিয়েছেন। তাই ফুটবলারেরা যত বিদ্রোহই করুন না কেন, কোচকে সরানোর কোনও কারণ দেখছে না স্পেন।
স্পেনের এই বিশ্বকাপ যাত্রায় সবচেয়ে আলোচিত ভিলদা। স্পেনের কোচকে দলের বেশির ভাগই পছন্দ করেন না। তাঁদের দাবি, অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং মানসিক চাপ তৈরি করেন ভিলদা। সে কারণে ফুটবলারেরা মাঠে নেমে নিজেদের সেরা দিতে পারেন না। স্পেনের ফুটবল সংস্থা অবশ্য কোনও দিন ফুটবলারদের দাবিকে পাত্তা দেয়নি। তারা বরাবর ভিলদার পাশে দাঁড়িয়েছে। ফুটবলারেরা প্রতিবাদ করেও দেশের কথা ভেবে একত্রিত হয়েছে। যার ফল বিশ্বকাপ জয়।
কোচের সঙ্গে ফুটবলারদের সম্পর্ক কতটা খারাপ তা বোঝা গিয়েছিল নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে। সেই ম্যাচেও শেষ মুহূর্তে ওলগার গোলে জেতে স্পেন। কিন্তু ম্যাচের পর কোচের সঙ্গে ফুটবলারদের একসঙ্গে হতে দেখা যায়নি। সাধারণত ম্যাচের পর কোচের সঙ্গেই ফুটবলারেরা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। স্পেনের ক্ষেত্রে হয়েছে ঠিক উল্টোটা। ফাইনালের পরেও তাঁর বদল নেই। স্পেনের ফুটবলারেরা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে যখন নাচানাচি করছিলেন, তখন সেখানে কোচ থাকলেও তাঁকে বাকিদের থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছিল।
জাতীয় দলের হয়ে প্রায় শততম ম্যাচ খেলতে চলা ইরেন পারেদেস বিদ্রোহটা শুরু করেছিলেন। এই ইংল্যান্ডের হাতেই গত ইউরো কাপে হারের পর মহিলাদের দলের প্রতি সঠিক ব্যবহারের দাবি তুলেছিলেন তিনি। মেয়েদের ফুটবলের খোলনলচে বদলে দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। গুজব রটেছিল যে কোচের সঙ্গে ফুটবলারদের সম্পর্ক এতটাই খারাপ যে তা আর সারানো যাবে না। ভিলদাকে কোচ রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে ১৫ জন ফুটবলার একসঙ্গে ফুটবল সংস্থাকে ইমেল করেন।
সেই ১৫ জন ছিলেন আইতানা বোনমাতি, মারিয়োনা কালদেনতে, ওনা বাতলে, পাত্রি গুইজারো, মাপি লিয়ন, সান্দ্রা পানোস, ক্লদিয়া পিনা, লোলা গালার্দো, আইনহোয়া মোরাজা, নিরিয়া এইজাগিরে, আমিউপ সারিয়েগি, লুসিয়া গার্সিয়া, লিলা ওউহাবি, লাইয়া আলেকজান্দ্রি এবং আন্দ্রিয়া পেরেরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মহিলা দলে খেলার ফলে তাঁদের মানসিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শারীরিক অবনতি হয়েছে। ভিলদাকে সরাসরি সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেননি কেউই। কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কোচকে নিয়ে খুশি নন। অনুশীলনের পদ্ধতি, ফুটবলারদের প্রতি আচরণ, পরিকাঠামোর অভাব— ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ ছিল। পাশাপাশি স্পেনের ফুটবল সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাঁরা জানিয়েছিলেন, ঘরোয়া লিগের ম্যাচ খেলতে এক শহর থেকে অন্য শহরে বিমানে নিয়ে যাওয়ার বদলে ট্রেনে নিয়ে যাওয়া হত। লম্বা যাত্রায় আগেই ক্লান্ত হয়ে পড়তেন তাঁরা।
এই বিদ্রোহের টলানো যায়নি স্পেনের ফুটবল সংস্থাকে। সংস্থার প্রধান আনা আলভারেস বলেছিলেন, প্রতিবাদী ফুটবলারদের ক্ষমা চেয়ে দলে ফিরতে হবে। তার পরে কয়েক জন ফুটবলার দলে যোগও দেন। ফুটবল সংস্থার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল তা প্রমাণ করে দিয়েছেন ভিলদা। তাই তাঁর উপরেই ভরসা রাখছে সংস্থা।