আইপিএল থেকে কেকেআর ছিটকে যাওয়ার পর নানান কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি। কিছু সাধারণ, কিছু অসাধারণ। কিছু পানসে, কিছু তুচ্ছ। সব কিছু একটাই লক্ষ্যে করা— মনটাকে ভুলিয়ে রাখা, যাতে সে অতীতে না ফিরে যায়।
এর মধ্যে একটা বিলাসিতা করেছি ‘সরবজিৎ’ ফিল্মটা দেখে। জানতাম ওটা আমার বাঁধাধরা পপকর্ন-কোক ফিল্ম হবে না। ঠিকই ভেবেছিলাম। দুর্দান্ত আত্মজীবনীমূলক ফিল্ম, একই সঙ্গে প্রচণ্ড ভাবে নাড়িয়ে দেওয়া। ফিল্মটা আপনাদের দেখতেই হবে। আমি নিজে যে দেখেছি, তাতে আমি খুব খুশি। ব্যক্তিগত ভাবে ফিল্মটা আমাকে জীবন, ক্রিকেট, আইপিএলে হার, সব কিছু নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে বাধ্য করেছে। বলছি না যে, আইপিএল নাইন থেকে কেকেআরের ছিটকে যাওয়াটা মেনে নিতে পেরেছি। কিন্তু সেই পথে আস্তে আস্তে হাঁটতে শুরু করেছি। সরবজিতের কাহিনি যে কাজে আমাকে সাহায্য করছে।
প্রথমে ভেবেছিলাম আইপিএল ফাইনাল একেবারেই উপভোগ করব না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ম্যাচটা বোধহয় একটু-আধটু ভাল লাগলেও লাগতে পারে। আমাদের ছিটকে যাওয়া যে একটু একটু মেনে নিতে পারছি, সেটা হয়তো আমার ফ্যান সত্ত্বাটাকে জাগিয়ে তুলতে পারবে। ডেভিড ওয়ার্নার আর বিরাট কোহালির প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, ওদের ফ্যান হিসেবে ম্যাচটা দেখতে পারব।
যদি সেটা হয়, তা হলে পায়ের উপর পা তুলে আইপিএল ফাইনালটা তারিয়ে তারিয়ে দেখা যাবে। একটা ভাল ব্যাপার হল, এ বার নতুন একটা টিম ট্রফি জিততে চলেছে। যা ব্র্যান্ড আইপিএলকে সাহায্য করবে। আমি নিশ্চিত হায়দরাবাদ বা বেঙ্গালুরু, যে-ই জিতুক, সেই শহর আর তার আশপাশের অঞ্চলের তরুণরা নতুন অনুপ্রেরণা পাবে।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, ভাল বোলিং আক্রমণের সৌজন্যে এই লড়াইয়ে হায়দরাবাদের অবস্থান বেশি ভাল। আশা করছি ফাইনালের জন্য মুস্তাফিজুর রহমান ফিট হয়ে যাবে। বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং বনাম মুস্তাফিজুর, সত্যিই দুর্ধর্ষ প্রতিযোগিতা। এক দিক দিয়ে দেখলে তরুণ রহমানের কাছে এটা একটা পরীক্ষাও। কারণ ও বল করবে ব্যাটিং পিচে, যেখানে বাউন্ডারি খুব ছোট।
ফাইনালের যুদ্ধে আমি ভুবনেশ্বর কুমারকেও সমর্থন করব। সব মিলিয়ে ক্রিকেটার হিসেবে ও খুব ভাল। যে প্রতিপক্ষকে হারানোর জন্য নিজের ক্রিকেট-মস্তিষ্ক ব্যবহার করে।
ডেভিড ওয়ার্নারের কাছেও এটা খুব বড় মুহূর্ত। যদি বলি অস্ট্রেলিয়াকে ওয়ার্নারের টেস্ট ব্যাটসম্যান অবতার উপহার দিয়েছে আইপিএল, মনে হয় না ভুল বলব। মনে আছে আইপিএল খেলতে ভারতে এসেই ও বুঝতে পেরেছিল মাঠের ফাঁকফোকরে বল মারার উপকারিতা কতটা। এখানে আইপিএল খেলতে এসে ওয়ার্নার টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের আসল ক্ষমতা বুঝতে পেরেছে। মনে হয় এই আইপিএলে ওয়ার্নার নিজের মধ্যে এক জন লিডারকে আবিষ্কার করেছে। হয়তো ভবিষ্যতে কোনও দিন অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্বও দেবে। যার কিছুটা কৃতিত্ব আইপিএলেরও প্রাপ্য।
আমার বন্ধু যুবরাজ সিংহ ভাল করলেও খুশি হব। আমাদের বিরুদ্ধে ম্যাচটায় ও ভাল খেলেছিল। রবিবার ফাইনালেও যদি যুবি হায়দরাবাদকে টানে, আমি অবাক হব না।
উল্টো দিকে রয়েছে আরসিবির ব্যাটিং শক্তি। বিরাট-ডে’ভিলিয়ার্সের নেতৃত্বে যা রীতিমতো আগুনে ফর্মে। আমার মনে হয় জয়ের ছন্দ আর আত্মবিশ্বাসও ওদের দিকে রয়েছে। আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে নামার আগে যে দুটো জিনিস খুব জরুরি।
অনেকে বলছে, বিরাট এখন নিজের জীবনের সেরা ফর্মে রয়েছে। যদিও আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওর ব্যাটিং বিরাটকে অনেক বেশি তৃপ্ত করেছিল। কারণটা সহজ। যে কোনও আন্তর্জাতিক দলের বিরুদ্ধে খেলা মানে পাঁচ জন জাত বোলারের মোকাবিলা করা। সেখানে আইপিএলের যে কোনও টিমেই মাত্র দু’তিন জন জাত বোলার।
যাই হোক, ভারতের অধিনায়ক আইপিএল জিতছে, ব্যাপারটা বেশ মানানসই। যদিও এটা বলে রাখা উচিত যে, হায়দরাবাদের মতো লো-প্রোফাইল টিমেরও ট্রফিটা সমান প্রাপ্য।