ইতিহাস: থেকে যাবে যে ছবি। শাহরুখের কাঁধে অধিনায়ক গম্ভীর। ইডেনে আইপিএল বিজয়োৎসবে। ফাইল চিত্র
ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন গৌতম গম্ভীর। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে তিনি সারা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের ধন্যবাদ দিলেন, সব সময় পাশে থাকার জন্য। এবং, বিশেষ ধন্যবাদ জানালেন কলকাতাকে। শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সময় যাঁদের কাছ থেকে প্রচুর ভালবাসা পেয়েছেন তিনি।
ফিরোজ শাহ কোটলায় রঞ্জি ট্রফির আসন্ন দিল্লি বনাম অন্ধ্র প্রদেশ ম্যাচই হতে চলেছে গম্ভীরের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট ম্যাচ। মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় ১২ মিনিটের এক আবেগপূর্ণ ভিডিয়ো বার্তায় ৩৭ বছর বয়সি গম্ভীর জানিয়ে দিলেন তাঁর সিদ্ধান্তের কথা। বলেন, ‘‘মনের ডাকে সাড়া দিলাম।’’
চলতি শতকে ভারত যে দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছে, ২০০৭-এ টি-টোয়েন্টি এবং ২০১১-তে পঞ্চাশ ওভারের, সেই দু’বারই ফাইনালে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করেন গৌতম। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ৭৫ রান করেছিলেন। চার বছর পরে মুম্বইয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে বীরেন্দ্র সহবাগ ও সচিন তেন্ডুলকর আউট হওয়ার পরে শুরুর ধাক্কা সামলান তিনি ৯৭ রান করে। সহবাগের সঙ্গে সফলতম ভারতীয় টেস্ট ওপেনিং জুটিতে ৮৭ ইনিংসে ৪৪১২ রান তোলা গম্ভীর ভারতের হয়ে শেষ মাঠে নামেন ২০১৬-র নভেম্বরে, রাজকোটে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ বিদায়ী বার্তায় গম্ভীর জানিয়েছেন, সেই টেস্টের অনেক আগে থেকেই তাঁর মন বলতে শুরু করে, ‘এ বার সময় শেষ, গৌতি’। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালবাসা ও নেশা তাঁকে ঘরোয়া ক্রিকেট ও আইপিএলে ধরে রেখেছিল। গত বার যখন আইপিএলে টানা ছ’টি ম্যাচে ব্যর্থ হন, তখনই ঠিক করে নেন এ বার সত্যিই পাকাপাকি অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।
বিদায়ী ভাষণে আরও বলেছেন, ‘‘অবসরের ভাবনাটা গত কয়েক মাসে বিপক্ষের বোলারের মতো আমাকে জ্বালিয়েছে। বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল কথাগুলো— তোমার সময় শেষ গৌতি। মাঠে নেমেও মনের এই কথা শুনেছি। বারবারই মন একই কথা বলে গেলেও আমি যেন শুনেও শুনতে চাইনি। শরীরের ওপর অত্যাচার করেছি। ভালবাসা মাঝেমধ্যে স্টেরয়েডের মতো কাজ করে। তাই গত মরসুমেও ভেবেছিলাম, ফের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ক্রিকেট চালিয়ে যাব। তখন মনে হয়েছিল মন হয়তো আর সেই কথাগুলো বলবে না। কিন্তু আইপিএলে ছ’টা ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পরে ফের মনে হল, আবার শুনতে পাচ্ছি সেই কথাগুলো, এ বার আরও জোরে। বুঝলাম সত্যিই সময় এসে গিয়েছে।’’
পনেরো বছরের ক্রিকেট জীবনে যে সাফল্যগুলি পেয়েছেন গম্ভীর, তার স্মৃতিই যে এখন সম্বল, তা জানিয়ে দিল্লির প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, ‘‘দুটো বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেছি। দুটোতেই ফাইনালে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছি ও দলের জয়ে অবদান রেখেছি। এ সব আমার জীবনে সেরা স্মৃতি হয়ে থাকবে।’’ কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে দু’বার তিনি আইপিএল জিতেছেন, এটাই বা কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা ভুলবেন কী করে? তিনিই কলকাতাকে প্রথম আইপিএল ট্রফি জয়ের স্বাদ দেওয়া অধিনায়ক। যদিও বাংলার বাইরে থেকে আসা বলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো স্থানীয় তারকাকে উপেক্ষা করে তাঁর আগমন নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি।
আরও সাফল্যের পালক রয়েছে গম্ভীরের মুকুটে। এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বরাবরই কেউ যেন আমার ক্রিকেটজীবনের চিত্রনাট্য লিখে দিয়েছেন। যার মধ্যে বিশ্বের সেরা টেস্ট দলের সদস্য হওয়া, ২০০৯-এ আইসিসি-র সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হওয়ার পুরস্কারও ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তার কলমের কালি ফুরিয়ে গিয়েছে। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ জয়, সিবি সিরিজ জয় তেমনই সাফল্য, যার স্মৃতি সারা জীবন আমার সঙ্গে থাকবে। আশা করি অস্ট্রেলিয়ায় এই সফরে আমাদের দল সেই গর্বও ম্লান করে দেবে।’’
সমর্থকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গম্ভীর বলেছেন, ‘‘ভক্ত নয়, আপনাদের আমি ‘পার্টনার’ মনে করি। কারণ, আপনাদের ছাড়া ক্রিকেট আত্মাহীন শরীরের মতো। সমর্থকদের অনেক ধন্যবাদ। বিশেষ করে কলকাতার সমর্থকদের। এই শহর আমাকে অনেক ভালবাসা দিয়েছে। আমরা একে অপরের কাছে অনেক কিছু চেয়েছি ও পেয়েওছি। তাই এই শহরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক চিরকালই অটুট থাকবে।’’
ক্রিকেট থেকে বিদায়বেলায় কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজ, পার্থসারথী শর্মা, স্ত্রী নাতাশা, বাবা-মা, সন্তান ও আত্মীয়-বন্ধুদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গম্ভীর। সারা দেশের বিভিন্ন মাঠের কিউরেটর, কর্মী, নেট বোলারদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
কলকাতা নাইট রাইডার্স টুইটারে গম্ভীরকে তাঁর ‘দ্বিতীয় ইনিংস’-এর জন্য শুভেচ্ছা জানালেও, অবসরের পরে গম্ভীর অন্য কোনও ভূমিকায় ক্রিকেটের সঙ্গে থাকবেন, না বিজেপি-তে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে পা দেবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু
হয়ে গিয়েছে।