গ্রেগের কথাটাই মনে করাল অঙ্কিত

কেকেআর অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর কলম ধরেছেন আনন্দবাজারে। তবে নাইট সংসারের হালহকিকত দূরে সরিয়ে আজ শুধুই অঙ্কিতময় বিষণ্ণতা...গ্রেগ চ্যাপেলের খুব বেশি ভক্ত ভারতে নেই। কিন্তু ওঁর একটা কথা আমার বেশ মনে আছে। দু’হাজার ছয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আমি যখন নেটে মোটেই ভাল ব্যাট করতে না পেরে প্রচণ্ড হতাশ, গ্রেগ তখন বলেছিলেন, ‘গোতি, জীবনে কোনও কিছুই বিপর্যয় নয়, কেবল মৃত্যু ছাড়া!’ ডাহা সত্যি কথা। সব কিছুর বিকল্প আছে। কিন্তু নিয়তি যদি এক বার ভালবাসার কাউকে দুর্ভাগ্যক্রমে ছিনিয়ে নেয়, জীবনের সেই শূন্যস্থান কোনও দিন পূরণ হওয়ার নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২০
Share:

গ্রেগ চ্যাপেলের খুব বেশি ভক্ত ভারতে নেই। কিন্তু ওঁর একটা কথা আমার বেশ মনে আছে। দু’হাজার ছয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আমি যখন নেটে মোটেই ভাল ব্যাট করতে না পেরে প্রচণ্ড হতাশ, গ্রেগ তখন বলেছিলেন, ‘গোতি, জীবনে কোনও কিছুই বিপর্যয় নয়, কেবল মৃত্যু ছাড়া!’

Advertisement

ডাহা সত্যি কথা। সব কিছুর বিকল্প আছে। কিন্তু নিয়তি যদি এক বার ভালবাসার কাউকে দুর্ভাগ্যক্রমে ছিনিয়ে নেয়, জীবনের সেই শূন্যস্থান কোনও দিন পূরণ হওয়ার নয়।

আমার এই কথাগুলো অঙ্কিত কেশরীর পরিবারের কাছে খুব সামান্যই। ওঁরা নিশ্চয়ই এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছে কিছু নির্মম প্রশ্নের উত্তর—কেন তাঁদের আদরের ছেলে যখন সামান্য একটা ক্রিকেট ম্যাচ খেলছে, সেখান থেকে মৃত্যু তাকে চিরতরে ডেকে নিল! কী ভুল তাঁরা জীবনে করেছিলেন! দুর্ভাগ্যবশত এর জবাব তাঁরা পাবেন না। ছেলের শেষকৃত্য করতে হচ্ছে বাবাকে—এর চেয়ে বেশি মর্মান্তিক আর কিছু কোথাও হতে পারে না!

Advertisement

উঁচু ক্যাচ লুফতে গিয়ে মাঠে যার সঙ্গে অঙ্কিতের মারণ সংঘর্ষ ঘটেছিল সেই সৌরভ মণ্ডলের জন্যও আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। আশা করি এই সময় ওর পাশে অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁরা ওকে এটা বোঝাচ্ছেন, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ওর কোনও দোষ নেই। কয়েক মাস আগে ফিল হিউজের মর্মান্তিক ঘটনার সময় কিন্তু বোলার শন অ্যাবটের পাশে সারাক্ষণ সহানুভূতির সঙ্গে ছিল গোটা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। আমি শুনেছি সিএবিও অঙ্কিত আর সৌরভ, দু’জনের পরিবারের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে চলেছে। যা-যা সম্ভব সব করছে।

আমার এক বন্ধু জানতে চাইছিল, বোর্ডের একটি অনুমোদিত সংস্থার রেজিস্টার্ড জুনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে অঙ্কিতের জীবনবিমা রয়েছে কি না? আমি প্রথমে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছু বলতে না পারলেও পরে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আন্দাজে ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছি। মানে আমি ধরে নিয়েছি সমস্ত চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারেরই বিমা করা থাকে। যদিও এই সময় বিমা, ক্ষতিপূরণ ব্যাপারগুলো অঙ্কিতের পরিবারের মাথায় সব শেষে আসবে। তবে জীবনের তো কিছু নিজস্ব দাবিও থাকে! আর যেটা টাটকা আমার কানে আসছে যে, অঙ্কিতের মৃত্যু নিয়ে এক ধরনের দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে। খুব কম কথায় বলা উচিত, এটা কিন্তু এড়ানো যায়। চিরকালের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া এক আত্মাকে এর চেয়ে বেশি অসম্মান করা যায় না যখন তার মৃত্যুর দিকে প্রশ্নের আঙুল তোলা হয়!

পাশাপাশি দিল্লির সংবাদমাধ্যমের একাংশকে নিয়ে আমি ভীষণ হতাশ। আশা করেছিলাম ওখানে মঙ্গলবারের কাগজে অঙ্কিতের মৃত্যুর কভারেজ যতটা হয়েছে, তার চেয়ে আরও ভাল ভাবে হবে! যেমনটা ফিল হিউজের সময় হয়েছিল। আমি নিশ্চিত মৃত্যু মৃত্যুই। একজন ভারতীয়ের কাছে যা, একজন অস্ট্রেলীয়র কাছেও তাই। বা হতে পারে একজন টেস্ট ক্রিকেটারের মৃত্যুর কভারেজ একজন জুনিয়র ক্রিকেটারের মৃত্যুর খবরের চেয়ে বেশি খায়! যা-ই হোক, এটা হতাশজনক!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন