জার্মানি চারবার বিশ্বকাপ, তিনবার ইউরো কাপ জিতেছে। কিন্তু কনফেডারেশন্স কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গিয়েছে।
চিলে প্রথমবার কনফেডারেশন্স কাপে খেলছে। আর অভিষেকের বছরেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে অ্যালেক্সিস স্যাঞ্চেজ, ক্লদিও ব্র্যাভো-রা চমকে দিয়েছেন ফুটবলবিশ্বকে। গত তিন বছর ধরেই দুর্ধর্ষ ফর্মে তাঁরা। পরপর দু’বছর ফাইনালে আর্জেন্তিনাকে হারিয়ে কোপায় চ্যাম্পিয়ন চিলে। এ বার লক্ষ্য কনফেডারেশন্স কাপ জিতে হ্যাটট্রিক করতে মরিয়া স্যাঞ্চেজ-রা।
কিন্তু চিলের স্বপ্নভঙ্গ করতে যে তাঁরা তৈরি, ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে জানিয়ে দিয়েছেন জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো। তিনি বলেছেন, ‘‘ফুটবলাররা ট্রফির জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে রয়েছে। ওরা দারুণ চনমনে।’’
বারো বছর আগে ঘরের মাটিতে কনফেডারেশন্স কাপে সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছিল জার্মানি। তখন প্রধান কোচ ছিলেন য়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান। লো ছিলেন তাঁর সহকারী। এ বার ফের জার্মানি আর কনফেডারেশন্স ট্রফির মাঝখানে লাতিন আমেরিকার আর একটা দেশ। শুধু তা-ই নয়। যে দলের প্রধান দুই ভরসা আর্তুরো ভিদাল ও চার্লস আরাগুইজ খেলেন বুন্দেশলিগায়। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-তে খেলেন টাইব্রেকারে পর্তুগাল বধের নায়ক ক্লদিও ব্র্যাভো। চিলে গোলরক্ষক বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশে প্রচুর সমস্যা। চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাই দেশবাসীকে আনন্দ দেওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এই মুহূর্তে।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘আমি চার সন্তানের বাবা। যদি রাশিয়া থেকে খালি হাতে দেশে ফিরি, তা হলে কনিষ্ঠ সন্তান আমার ওপর প্রচণ্ড রেগে যাবে। তাই গত দু’বছর ধরে আমরা যে ধারাবাহিকতা দেখিয়ে আসছি, আশা করছি এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না।’’ আর ভিদাল তো রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন। বায়ার্ন মিউনিখ তারকা বলেছেন, ‘‘আমরা যে যোগ্য, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছি। পরপর দু’বার হারিয়েছি আর্জেন্তিনাকে। কয়েক দিন আগেই হারিয়েছি ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালকে। এ বার জার্মানির বিরুদ্ধে জিতলে আমরাই হব বেসরকারি ভাবে বিশ্বসেরা। কারণ, জার্মানি গত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন। কোনও ভাবেই এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাই না।’’
চিলের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতে এগিয়ে অবশ্য জার্মানিই। আট বারের মধ্যে পাঁচ বারই জিতেছে তারা। হেরেছে মাত্র দু’বার। তবে চলতি কনফেডারেশন্স কাপের গ্রুপ লিগে এই চিলের বিরুদ্ধে কোনও মতে হার বাঁচিয়েছিল চার বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তাই ট্রফি জিততে ফুটবলাররা ক্ষুধার্ত বলে দাবি করলেও লো নিজে যে চিলেকে নিয়ে চিন্তিত, গোপন করেননি। জার্মান কোচ বলেছেন, ‘‘চিলে এই টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল। আমাদের আগেই মনে হয়েছিল, ওরা ফাইনালে উঠবে। সেটাই হয়েছে।’’ কেন চিলেকে নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন লো। বলেছেন, ‘‘ওদের নিজস্ব খেলার ঘরানা রয়েছে। বহু বছর ধরেই সেই স্ট্র্যাটেজিতে খেলে চলেছে। তা ছাড়া চিলের ফুটবলাররা দারুণ নমনীয় মাঠের মধ্যে। যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।’’ তা হলে চিলেকে হারানোর স্ট্র্যাটেজি কী? লো বলছেন, ‘‘এখন মরসুমের শেষ। সারা বছর ধরে ওরা খেলেছে। আমাদের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে, ওরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেই আক্রমণের ঝড় তোলা।’’
জার্মান কোচের পরিকল্পনা সফল হবে কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে। কারণ, ভিদাল বলে দিয়েছেন, ‘‘আমরা কখনও ক্লান্ত হই না!’’