উৎসবের হ্যাটট্রিক! টিমকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ চারে তুলে রোনাল্ডো।-এএফপি
জানেন কি পনেরো বছর বয়সেই তাঁর হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়েছিল! সামান্য দৌড়লেই কষ্ট হত। ফুটবল খেলা সেখানে তো অলীক স্বপ্ন! আর সেই দশাই হয়েছিল তাঁর। শারীরিক সমস্যার জন্য অস্ত্রোপচারও করাতে হয় অত কম বয়সে!
সেই ঘটনার পর দীর্ঘ ষোলো বছর কেটে গিয়েছে। সেই কিশোরই এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গোটা ফুটবলবিশ্ব। যাঁর ভয় বিপক্ষ ডিফেন্ডারদের রাতের ঘুম উড়ে যায়। যিনি ফুটবলের সংজ্ঞাই প্রায় পাল্টে দিয়েছেন! প্রমাণ করেছেন নিয়মিত গোল করাটাও তাঁর কাছে কোনও ফ্যাক্টরই নয়। যে জার্সিই গায়ে থাকুন না কেন, বলটা ঠিক জালে পাঠিয়ে দিতে পারেন। অনায়াসে। অবলীলায়। এমনকী বড় ম্যাচে। মরণবাঁচন লড়াইতেও!
মঙ্গলবার রাতের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের রংও তো তিনি একার হাতে পাল্টে দিয়েছেন। স্মরণীয় ম্যাচে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন! কিন্তু কী সহজেই না অত বড় কাণ্ডও করে দেখালেন! হাইভোল্টেজ ম্যাচকেও সাধারণ মানের পাড়ার ম্যাচে পাল্টে দিয়ে।
তিনি— ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
একটা ক্লিনিক্যাল ফিনিশ। একটা হেড। একটা ট্রেডমার্ক ফ্রি কিক। সিআর সেভেনের ত্রহ্যস্পর্শে রিয়াল মাদ্রিদ ৩-০ (দু’পর্ব মিলিয়ে ৩-২) জিততেই বিদায় উল্ফসবার্গ। ফিরতি ম্যাচ নিয়ে যাবতীয় হাইপ মাটিতে মিশে গেল। বের্নাবাওতে অসহায় উল্ফসবার্গকে দেখে মনে হচ্ছিল জার্মান ক্লাবটা ভুলে গিয়েছে, এই ম্যাচটাই প্রথম পর্বে ২-০ জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম বড় অঘটনের নায়ক তারা!
ভারতীয় সময় রাত দুটোর আশপাশে তখন টুইটার-জগৎজুড়ে রোনাল্ডোর ছবি ‘শেয়ার’ চলছে। কারও পোস্ট ‘রোনাল্ডোই রাজা।’ কেউ লিখছেন, ‘অনেকে যে বলছিল রোনাল্ডো নাকি শেষ হয়ে গিয়েছে!’ আর স্বয়ং রোনাল্ডো? চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে রিয়ালকে তুলে স্বভাবতই সমালোচকদের একহাত নিয়েছেন। ‘‘লোকেরা যত ইচ্ছে খারাপ কথা বলুক আমার সম্পর্কে। কিন্তু আমার গোল সংখ্যা সবার সামনেই রয়েছে। মরসুমের মাত্র এক মাস বাকি থাকলেও আমি কিন্তু আরও উন্নতি করব। গোল করাটা আমার ডিএনএ-তে আছে।’’
রোনাল্ডোর সঙ্গে হ্যাটট্রিকের রোমান্স অবশ্য নতুন কিছু নয়। প্রতি ইউরোপিয়ান মরসুমেই চার-পাঁচটা করে থাকেন। কিন্তু তাঁকে কটাক্ষ করা হয়— বিগ ম্যাচ প্লেয়ার নন! আসলে হয়তো সবাই ভুলে যান, কী ভাবে প্লে-অফ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে পর্তুগালকে একার হাতে আগের বিশ্বকাপেই মূল পর্বে তুলেছিলেন রোনাল্ডো! রিয়ালের ‘লা ডেসিমা’-র মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রেকর্ড সংখ্যক ১৭ গোল করেছিলেন। এ বারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি তাঁর গোল সংখ্যা ১৬। নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙার মুখে। চ্যাম্পিয়ৈৈন্স লিগের ইতিহাসে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিও মেসির চেয়ে দশ গোলে এগিয়ে। মোট ৯৩ গোল করে। ‘এমএসএন’ শাসিত লা লিগাতেও সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনাল্ডোই। হায়, এর পরেও ফুটবলের র্যাম্বোকে কটাক্ষ শুনতে হয়!
রোনাল্ডো-সপ্তাহে অন্য ব্যাপার কেবল একটাই— রূপকথার আরও কাছে এগিয়েছে লেস্টার সিটি। সান্ডারল্যান্ডকে ২-০ হারানোয় ঐতিহাসিক ইপিএল জিততে তাদের আর দরকার মাত্র ৯ পয়েন্ট। তবে এখনই ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পরের বার খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছে ক্লডিও র্যানিয়েরির চমকপ্রদ দল।
ম্যান অব দ্য উইকের জন্য অবশ্য অন্য কোনও নাম থাকছে না। তিনি রোনাল্ডো এই মুহূর্তে লা লিগাতেও রিয়ালকে শীর্ষে থাকা বার্সার চেয়ে মাত্র চার পয়েন্ট দূরত্বে এনে ফেলেছেন। এমন মেগা ফুটবলারকে কটাক্ষ করে সময় নষ্ট না করে আসুন উপভোগ করি।
ম্যান অব দ্য উইক: ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো