আনন্দবাজার এক্সক্লুসিভ

ওয়ান ডে এত অনিশ্চিত যে ধোনিরা ফাইনাল খেলবে এখনও বলছি না

তিনি সেডন পার্কেই আছেন খবর পাওয়া যাচ্ছে বারবার। ম্যান অব দ্য ম্যাচকে পুরস্কার দেবেন তাও শোনা গেল। অথচ খেলা চলাকালীন কোথাও দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। কাউকে দিয়ে খবর দেওয়ারও উপায় নেই। এ দেশে তাঁকে এমনই শ্রদ্ধাবনত ভঙ্গিতে দেখা হয় যে অপরিচিতের বার্তা তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়ার অন্তত লোক নেই। বহু খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে আবিষ্কার করা গেল স্পনসর্স মার্কিতে। মিডিয়ার লোককে সেখানে ঢোকার জন্য আলাদা কার্ড পরতে হবে। সেটা জোগাড়ের পর তবে মুখোমুখি হওয়া গেল স্যর রিচার্ড হ্যাডলি-র। তাঁকে ঘিরে মার্কিতে অবিশ্রান্ত হুড়োহুড়ি আর সেলফি তোলার মাঝে মিনিট দশেক কথা বললেন এবিপি-র সঙ্গে।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

হ্যামিল্টন শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০৪:১১
Share:

তিনি সেডন পার্কেই আছেন খবর পাওয়া যাচ্ছে বারবার। ম্যান অব দ্য ম্যাচকে পুরস্কার দেবেন তাও শোনা গেল। অথচ খেলা চলাকালীন কোথাও দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। কাউকে দিয়ে খবর দেওয়ারও উপায় নেই। এ দেশে তাঁকে এমনই শ্রদ্ধাবনত ভঙ্গিতে দেখা হয় যে অপরিচিতের বার্তা তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়ার অন্তত লোক নেই। বহু খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে আবিষ্কার করা গেল স্পনসর্স মার্কিতে। মিডিয়ার লোককে সেখানে ঢোকার জন্য আলাদা কার্ড পরতে হবে। সেটা জোগাড়ের পর তবে মুখোমুখি হওয়া গেল স্যর রিচার্ড হ্যাডলি-র। তাঁকে ঘিরে মার্কিতে অবিশ্রান্ত হুড়োহুড়ি আর সেলফি তোলার মাঝে মিনিট দশেক কথা বললেন এবিপি-র সঙ্গে।

Advertisement

প্রশ্ন: এ দেশে ঢুকে দেখছি বিশ্বকাপের প্রোমোশনে আইসিসি একেবারে উদাত্ত ভাবে ব্যবহার করছে আপনাকে। কালকে ওদের একটা ইভেন্টে আপনি তো কয়েকটা বলও করলেন।

Advertisement

হ্যাডলি: হ্যাঁ আইসিসি অ্যাম্বাস্যাডর হিসেবে আমি নিউজিল্যান্ডের নানা জায়গায় ঘুরছি। মাঠে মাঠে যাচ্ছি। অকল্যান্ডে পরের ইন্ডিয়া ম্যাচেও থাকব। তার পর নিউজিল্যান্ডের শেষ ম্যাচ। এখানে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল।

প্র: অস্ট্রেলিয়া একেবারে যাবেনই না?

হ্যাডলি: যাব ফাইনালে।

প্র: সে দিন মেলবোর্নে ভারতকে দেখতে পাবেন বলে মনে হয়?

হ্যাডলি: বলা কঠিন। ওয়ান ডে সিরিজ হলে বলতাম নিশ্চয়ই। ইন্ডিয়া যেমন খেলছে আমি চমৎকৃত হয়ে যাচ্ছি। একমাত্র টিম তুলনায় আসতে পারে নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডও খুব তৈরি।

প্র: ভারতীয় সমর্থকদের একটা ভয় ছিল নিউজিল্যান্ডে এসে পেসাররা লাইন-লেংথের অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে পারবে কি না। অস্ট্রেলিয়ার থেকে এখানকার লাইন-লেংথটা তো আলাদা?

হ্যাডলি: নিশ্চয়ই আলাদা। নিউজিল্যান্ডে অনেক ফুলার লেংথ করতে হয়। বল পড়ে অনেক কিছু করে। সিম করে। সুইং করে।

প্র: পেসাররা শুরুতে মার খাওয়ার পর দ্বিতীয় স্পেলে শামি উইকেট পেলেন।

হ্যাডলি: এই শামি ছেলেটাকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। ওকে প্রথম দিন দেখে সে দিনই মনে হয়েছিল এ লম্বা দৌড়বে।

প্র: বিশ্বকাপে সেরা বোলারদের তালিকায় শামিকে কোথায় রাখবেন?

হ্যাডলি: তিন বা চার নম্বরে। টিম সাউদি, মিচেল স্টার্কের পর।

প্র: প্রথম কোথায় দেখেন শামিকে? নিউজিল্যান্ড সফরে?

হ্যাডলি: না, কোনও একটা আইপিএল ম্যাচ টিভিতে দেখছিলাম। তখনই প্রথম মনে ধরে। দারুণ বল করেছে ও। এখনকার দিনে ব্যাটসম্যান এত চতুর হয়ে গিয়েছে। এমন সব ব্যাট ইউজ করে। ক্রিজের এত ভাল ব্যবহার করে যে সাউদি বা শামিকে ব্যাটসম্যানের ওপর দাপট দেখাতে দেখলে দারুণ লাগে।

প্র: আপনি বললেন না কিন্তু ভারত ফাইনাল যাবে বলে মনে করেন কি না?

হ্যাডলি: খেলা অনুযায়ী যেতেই পারে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড কাপ সেমিফাইনাল-ফাইনাল পর্যায়ে একটা দু’ঘণ্টার খারাপ ক্রিকেট সব কিছু ঘুরিয়ে দিতে পারে। বলা খুব মুশকিল। ওয়ান ডে এত অনিশ্চিত যে ধোনিরা ফাইনাল খেলবে এখনও বলছি না। তবে ভারত দারুণ খেলছে। অস্ট্রেলিয়ায় ওদের খেলা দেখে আমি তো টিম আর ধোনি সম্পর্কে আশাই হারিয়ে ফেলছিলাম। সেখান থেকে এ ভাবে ফিরে আসাটা দুর্দান্ত! পঞ্চাশটা উইকেট পাঁচটা ম্যাচে ফেলা কি মুখের কথা নাকি?

প্র: বাংলাদেশ ম্যাচ কেমন দেখলেন?

হ্যাডলি: বাংলাদেশ তো অবাক করে দিয়েছে। ওদের যে ছেলেটা শেষে উইকেট দুটো নিল চমৎকার!

প্র: ইংল্যান্ডে তুমুল বিতর্ক হচ্ছে। অনেকেই বলছেন কেভিন পিটারসেনকে এখুনি ওয়ান ডে টিমে ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। আপনি কী মনে করেন?

হ্যাডলি: আমি মনে করি পিটারসেনের কথা ভাবা যেতেই পারে। যথেষ্ট শাস্তি তো দেওয়া হয়েছে। আর কী? তা ছাড়া পিটারসেন এক জন গেমচেঞ্জার। যে কোনও সময়ে একা হাতে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। মর্গ্যানও খেলা ঘোরাবার ক্ষমতা ধরে। ইংল্যান্ড ভেবেছিল মর্গ্যান পারবে। কিন্তু ও ফর্মে ছিল না।

প্র: আপনাকে এত ফিট এখনও দেখে মনে হচ্ছে। আপনি কি এখনও ক্রিকেটজীবনের মতো শৃঙ্খলার মধ্যে থাকেন নাকি? এখনও মনোবিদের পরামর্শ মেনে চলেন?

হ্যাডলি: মনোবিদের পরামর্শ মেনে আমি খেলা ছাড়ার পরেও অনেক বছর কাটিয়েছি। ওটা আমার জীবনে খুব ভাইটাল ব্যাপার।

প্র: ওটা ভারতীয় ক্রিকেটে প্রবাদসদৃশ যে বিশ্বরেকর্ড করার জন্য আপনি আগাম ঠিক করে রেখেছিলেন শ্রীকান্তের উইকেট নেবেন। কিন্তু শ্রীকান্তের হেলমেটের রং সে দিন আপনার ভিস্যুয়ালাইজেশনের সঙ্গে ম্যাচ না করায় আপনার সাময়িক সমস্যা হয়। তাই বিশ্বরেকর্ড হয় অরুণলালের উইকেট নিয়ে।আজও মনে হয় গল্পের মতো। এ রকম কি হতে পারে নাকি?

হ্যাডলি: হয়েছিল তো! ক্রাইস্টচার্চে বসে ছয় মাস আগে আমি কনভিন্সড হয়ে যাই আমার ৪৩২ নম্বর উইকেট হবে শ্রীকান্ত। ব্যাটাচ্ছেলে যে সে দিন সাদা হেলমেট পরবে কে জানত (হাসি)। জীবনে ভিস্যুয়ালাইজেশন আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সে আপনি যে কোনও শাখার মানুষই হন না কেন।

প্র: এনি শাখা বলতে মনে পড়ে গেল কলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অবধি দেখছি আপনার বইয়ের একটা লাইন নিয়ে আলোচনা করতে।

হ্যাডলি: কোন লাইন?

প্র: যে মানুষের মন হল টেপরেকর্ডারের মতো। যা রাখতে চান রিওয়াইন্ড করে বারবার শুনুন। মনের জোর বাড়বে। যেটা ইরেজ করতে চান, যা অপ্রীতিকর টেপের মতোই মন থেকে ডিলিট করুন।

হ্যাডলি: একদম সত্যি কথা। মানুষ একটা অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে গেলে নিজের মনকে টেপ রেকর্ডারের মতো ব্যবহার করতে পারে বইকী। আমি তো এ সব জানতামই না। ১৯৮৩ নাগাদ গ্রেম ফেল্টনের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তখন থেকে আমি ওঁর নিষ্ঠাবান ক্লায়েন্ট।

প্র: ফেল্টন ক্রাইস্টচার্চে থাকেন?

হ্যাডলি: থাকতেন। এই দু’সপ্তাহ আগে উনি মারা গেলেন। শেষ জীবনে ক্যানসার হয়ে গিয়েছিল। অসাধারণ মানুষ। ক্রিকেটভক্তি এত বেশি যে ওঁর হাতে বাঁচার অধিকার থাকলে ঈশ্বরকে নির্ঘাত বলতেন, আমাকে ওয়ার্ল্ড কাপটা দেখে যেতে দাও। ৯৬ বছর অবধি যখন রাখলে আর দু’টো সপ্তাহ গ্রেস দাও।

প্র: নিউজিল্যান্ডে এসে এ বারও দেখছি সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রদূত দু’জন। একজন আর নেই। স্যর এডমন্ড হিলারি। আর আপনি। হিলারিকে আপনি চিনতেন?

হ্যাডলি: হ্যাঁ খুব ভাল আলাপ ছিল। রিয়েল লেজেন্ড। উনি যখন ভারতে হাইকমিশনার ছিলেন তখন দিল্লিতে ওঁর বাংলোয় গিয়েও প্রচুর আড্ডা মেরেছি। দারুণ লোক আর ওঁর অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনিগুলোও ভীষণ মোটিভেটিং।

প্র: জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ তা হলে কোনটা? লাইন অ্যান্ড লেংথ, না মোটিভেশন?

হ্যাডলি: (হাসি) দু’টোই। তবে মোটিভেশন একটা বিশাল জিনিস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন