ওয়েলসের প্র্যাকটিসে মধ্যমণি বেল।
লাল শয়তান বনাম ড্রাগন! বেলজিয়াম বনাম ওয়েলস!
আর ইউরোয় এই ফুটবল যুদ্ধের আগে কবিতার দেশ সরগরম দু’দলের দুই তরুণ কোচকে নিয়ে।
এক জন তাঁর জমানায় ছিলেন দেশের সেরা ফরোয়ার্ড। গোলের পর গোল করাই ছিল বেলজিয়াম কোচ মার্ক উইলমটসের নেশা।
অপর জন আবার মাত্র ৩২ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় ফুটবলার জীবন শেষ করার আগে তাঁর দেশের সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে ঘুম কাড়তেন ফরোয়ার্ডদের। তিনি ওয়েলস কোচ ক্রিস কোলম্যান।
শুক্রবার ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে উইলমটসের লুকাকু, হ্যাজার্ডদের থামাতে পারবেন কি ক্রিসম্যানের ব্যাক ফোর?
গ্যারেথ বেল বনাম এডেন হ্যাজার্ড হতে পারে। ইউরোর এই ম্যাচের আরও বড় একটা ইউএসপি কিন্তু ইউরোপের দুই চল্লিশোর্ধ্ব দুই ‘তরুণ’ কোচের মগজাস্ত্রের লড়াই। লিলে শহরের যে ম্যাচ খেলতে নামার আগে উত্তেজনায় ফুটছেন বেলজিয়ানদের অন্যতম ভরসা কেভিন দে ব্রায়ান। কারণ অবস্থানগত ভাবে বেলজিয়াম সীমান্ত থেকে ফ্রান্সের এই শহরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম। তাই দলে দলে বেলজিয়ানরা কোয়ার্টার ফাইনাল দেখতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢুকতে শুরু করেছে। আর তা জানার পর আনন্দে আত্মহারা ব্রায়েনের মন্তব্য, ‘‘এ তো ঘরের মাঠে খেলার মতো ব্যাপার। মাঠে নামার জন্য আর তর সইছে না।’’
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এডেন হ্যাজার্ডের দেশ যদি এই মুহূর্তে দু’নম্বরে থাকে তা হলে গ্যারেথ বেলের দেশকেও উপেক্ষা করা যাবে না। এ বারের ইউরোর ইংল্যান্ডের সঙ্গে এক গ্রুপে থেকেও টপার হয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে ওয়েলসও। পেলে-গ্যারিঞ্চাখ্যাত সেই ১৯৫৮ বিশ্বকাপে খেলার পর এ বারই বেল-র্যামসিদের মরিয়া লড়াই ফের তাঁদের দেশকে কোনও বড় টুর্নামেন্টের মূলপর্বে তুলেছে। ইউরোতে এই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে তারা। প্রশংসার বন্যা বইছে তাদের আঁটসাঁট রক্ষণের জন্য। তাই ওয়েলস সমর্থকরা নতুন গান বেঁধেছেন। গ্যালারিতে হাজির থেকে তাঁরা গাইছেন। কিন্তু এই ম্যাচের জন্য গ্যারেথ বেলকে উৎসর্গ করে তাঁরা একটি গান বেঁধেছেন। যা গাইবেন শুক্রবার—‘‘গ্যারেথ গ্যারেথ/ দ্য ক্যানন ফায়ারস, রিপস দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাপার্ট/ গ্যারেথ গ্যারেথ/এভরি শট স্ট্রেইট ফ্রম দ্য হার্ট।’’
চোট নিয়েও নেমে পড়েছেন বেলজিয়াম অধিনায়ক এডেন হ্যাজার্ড। ছবি: এএফপি
ওয়েলস সমর্থকরা তাদের আশা-ভরসা গ্যারেথ বেলকে নিয়ে গান গাইতেই পারেন। কারণ থাই-মাসলে চোট পাওয়ায় এই ম্যাচে বেলজিয়ান অধিনায়ক এডেন হ্যাজার্ডকে পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে সমস্যা। যদিও বৃহস্পতিবার দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন হ্যাজার্ড। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলের এক নম্বর অস্ত্রকে নিয়ে একাধিক আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে ইউরোপের এক নম্বরদের শিবিরে। চেলসিতে যাওয়ার আগে এই শহরের টিমেই একদা খেলতেন হ্যাজার্ড। সেই হিসেবে লিলে তাঁর ধাত্রীগৃহ। তাই শুক্রবার মাঠে নামলে তাঁর জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ হতে চলেছে লিলেতে। এ দিকে, গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো কার্ড সমস্যার জন্য নেই ডিফেন্ডার টমাস ভার্মালিন। তবে লিগামেন্টের চোটে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন ইয়ান ভার্তোঙ্গেন। যদিও এনজো শিফোর দেশের কোচ বলছেন, ‘‘ভার্মালিনকে না পাওয়া গেলেও কোনও সমস্যা নেই। দলের অন্যরা তৈরি আছে।’’
একই অবস্থা ওয়েলস কোচ ক্রিস কোলম্যানেরও। কাঁধের চোটে কাবু তাঁর রক্ষণের সেনাপতি ও টিমের অধিনায়ক অ্যাশলে উইলিয়ামসের। কোলম্যান যদিও বলছেন, ‘‘শেষ চেষ্টা করব ওকে নামানোর। যদি না পাই। তবে প্ল্যান ‘বি’ তৈরি রয়েছে।’’ একই সঙ্গে লুকাকুদের নিয়ে তাঁর গলায় সম্ভ্রম। ‘‘যারা হাঙ্গেরিকে ৪-০ হারিয়েছে। তাদের তো সমীহ করতেই হবে। ম্যাচে ওরাই এগিয়ে। তবে সাম্প্রতিক অতীতে আমরা চার বার ওদের বিরুদ্ধে খেলেছি। তাই ওরাও যেমন আমাদের চেনে। আমরাও তেমনই জানি ওদের।’’ দু’দলের এ পর্যন্ত ১২ বার সাক্ষাতে বেলজিয়ানরা এগিয়ে ৫-৪। তবে গত বছর যোগ্যতা অর্জন পর্বে প্রথম ম্যাচ গোলশূন্য থাকার পর দ্বিতীয় ম্যাচে বেলের গোলে জিতেছিল ওয়েলস। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বেল বলছেন, ‘‘ওরা আমাদের সে ভাবে গুরুত্ব দিত না। কিন্তু এখন জানে আমাদের শক্তি।’’