ফুটবল মানে এই নয় যে, বড় নামদের দলে নিলাম আর সেই মহাতারকারা মাঠে নেমেই দুর্দান্ত খেলে দিল। এ ভাবে ব্যাপারটা হয় না। ভাল ফল পেতে গেলে একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ঠিক টিম বেছে নিতে হবে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করতে হবে। টিম কম্বিনেশন ভাল হওয়া উচিত। তা হলেই ফল পাওয়া যাবে।
এটা ঠিক যে, এ বারের আইএসএল সবে শুরু হয়েছে। কিন্তু এ বারের দু’টো দলের শুরুটা যে ভাবে হয়েছে, তাতে একটা ব্যাপার পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। সেই দু’টো টিম হল কলকাতা এবং বেঙ্গালুরু এফসি। আইএসএলের সবচেয়ে সফল দল হল কলকাতা। অন্য দিকে বেঙ্গালুরু এ বারই আইএসএল অভিযান শুরু করল। দু’টো দল শুরুটা করল সম্পূর্ণ দু’রকম ভাবে। যেটা বুঝিয়ে দিয়েছে টিম কম্বিনেশন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় ভাল খেলার ক্ষেত্রে।
এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে হতাশ করেছে এটিকে। গত তিন বছরে আমরা দেখেছি, স্প্যানিশ আর্মাডার সঙ্গে একঝাঁক ভারতীয় ফুটবলারের বোঝাপড়া টিমটাকে দারুণ জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। চ্যাম্পিয়নও করছিল। কিন্তু ওই কম্বিনেশন একবার ভেঙে যাওয়ার পরে মাঠেও দেখা যাচ্ছে তার প্রভাব পড়ছে।
উল্টো দিকে বেঙ্গালুরু কিন্তু শুরুতেই নিজেদের অন্যতম ফেভারিট হিসেবে তুলে ধরেছে। ওরা গত ছ’মাস ধরে একসঙ্গে ট্রেনিং করছে, এএফসি কাপে খেলে এসেছে। যার প্রভাবটাও খেলায় দেখা যাচ্ছে। বেঙ্গালুরু টিমটা নিয়ে বলল, ওদের চোট আঘাত থেকে দূরে থাকতে হবে। তা ছাড়া ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ফুটবলারদের মাঠে নামানোর ব্যাপারটাও ওদের মাথায় রাখতে হবে। কারণ পরের দিকে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় গিয়ে খেলাটা কিন্তু ধকলের হয়ে যেতে পারে। আরও একটা ব্যাপার বেঙ্গালুরুকে মাথায় রাখতে হবে। ওদের ‘ওপেন প্লে’ থেকেও গোল করতে হবে। শুধু ‘ডেড বল’ পরিস্থিতিতে গোল করলেই হবে না। এই ত্রুটিটা ঢাকতে না পারলে এই লম্বা দৌড়ে পিছনে থেকে এসে অনেক দলই কিন্তু ওদের ধরে ফেলতে পারে।
অন্যান্য টিমের মধ্যে পুণে সিটি-র আক্রমণ কিন্তু যথেষ্ট ভাল। কিন্তু যে দলটা আক্রমণ ভালবাসে আর উইং থেকে খেলাটাকে তুলে আনে, তাদের পক্ষে বালেওয়াড়ির ছোট স্টেডিয়ামটা কিন্তু মোটেই আদর্শ নয়। এ সব মাঠে ডিফেন্সিভ টিমগুলো সুবিধে পেয়ে যায়। ঘরের মাঠে তাই পুণের সামনে ওদের মাঠ একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে।
আমি দেখতে চাই, কেরল ব্লাস্টার্স এফসি ওদের রক্ষণাত্মক খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসুক। কেরল দলটাকে দেখে আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না। ওদের টিমে রয়েছে ইয়ান হিউমের মতো ফুটবলার। যে কি না আইএসএলের সবোর্চ্চ স্কোরার। ওদের দলে আরও আছে সি কে বিনীত। যে আবার গত মরসুমে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিল। এ রকম দু’জন ফুটবলার থাকা সত্ত্বেও কেন ওরা রক্ষণাত্মক মনোভাব নিচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি না।
প্রত্যেক দলই কয়েকটা ম্যাচ খেলে ফেলেছে। এ বার নিশ্চয়ই কোচেরা নিজেদের টিমের শক্তি-দুর্বলতাগুলো বুঝতে পেরেছেন। সেই মতো কোচেদের এখন টিম কম্বিনেশন, ফর্মেশন এ সব ঠিকঠাক করতে হবে। এটা দশ টিমের লিগ। তাই খুব বেশি দেরি হয়ে গেলে কিন্তু দৌড় থেকে পিছিয়ে পড়তে হবে।