প্রশ্ন: সবাই আপনার উপর দারুণ চটে! বলছে কী টিম তৈরি করলেন?
ভাইচুং: অনেক দিন ধরেই অভিযোগটা শুনছি। শনিবারই মাঠে সেটা ফেস-টু-ফেস অনুভব করলাম। কিন্তু একটা কথা আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই। এ বারের আটলেটিকো দে কলকাতা টিম আমি তৈরি করিনি। আমাকে একটা নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেটা পালন করেছি।
প্র: একটু খুলে বলবেন?
ভাইচুং: ভারতীয় ফুটবলারদের বেছে ম্যানেজমেন্টকে একটা তালিকা করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল আমার উপর। একজন পরামর্শদাতা হিসেবে। এ বার সেই প্লেয়ারদের রাখা হবে, না বাতিল করা হবে, সেটা চূড়ান্ত করেছে টিম। আমি নই। তবে যে কাজ আমাকে দেওয়া হয়েছিল তাতে আমি ব্যর্থ হয়েছি বলে আমার মনে হয় না। এখনও পর্যন্ত আইএসএল-টু’র সেরা পাঁচ ভারতীয় ফুটবলারের নাম বলুন? তাতে আরাতা আর অমরিন্দর সিংহের নাম নিশ্চয়ই থাকবে। সুশীল কুমার সিংহ, ক্লিফোর্ড, নবি— যখনই সুযোগ পেয়েছে, হতাশ করেনি।
প্র: গত বার যাঁর গোলে এটিকে চ্যাম্পিয়ন হল, সেই রফিককে তালিকায় রাখেননি কেন?
ভাইচুং: রফিককে আমি বাদ দিইনি। কিন্তু ওর বাতিল হওয়ার দায়ও আমার উপর চেপেছে।
প্র: মানে?
ভাইচুং: মানে খুব সহজ। গত বারের টিমের চার জন ভারতীয় ফুটবলারকে হাবাস নিজে এ বারের টিমে রেখেছেন। মোহনরাজ, অর্ণব, বলজিৎ, ডেঞ্জিল। চিফ কোচ যেখানে তাঁর টিমে রফিককে বাদ দিয়েছেন, সেখানে আমি কী ভাবে তাকে নিতে পারি? তা ছাড়া আমি শুধু সেই সব ফুটবলারের নাম সুপারিশ করেছিলাম, যারা গত বারের টিমে ছিল না। আসলে সমস্যা হল, টিমের ভেতর এখন এক নতুন খেলা শুরু হয়েছে— পাসিং দ্য বল। ভারতীয় ফুটবলাররা ব্যর্থ হলেই ভাইচুংকে ধরো। আবার বলছি, এটিকেতে আমি শুধু পরামর্শদাতা। ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার লোক নই।
ভাইচুং। বাইপাসের ধারে এক হোটেলে রবিবার। -নিজস্ব চিত্র
প্র: আপনি হাবাসের জায়গায় থাকলে কি রফিককে বাদ দিতেন?
ভাইচুং: না দিতাম না। আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে ওকে শুরু থেকেই টিমে রাখতাম।
প্র: ‘পাসিং দ্য বল’ তো আপনিও করছেন?
ভাইচুং: আমি শুধু সত্যি ঘটনাটা বলছি। এটিকে টিমে আমার কোনও ক্ষমতা নেই। বিশেষ করে টিমের ব্যাপারে আমার কোনও কথা এখানে চলে না। অথচ প্রচুর লোক আছেন, যাঁরা সব ব্যাপারে নাক গলান। এমন ভাব করেন যেন তাঁরাই বস।
প্র: আপনি তো রীতিমতো বিতর্কিত কথা বলে দিলেন!
ভাইচুং: বিতর্কিত নয়। বাস্তবটাই বলছি। এটিকের চার মালিকই খুব স্পোর্টিং। কিন্তু তাঁরা নিজেদের কাজে এতটাই ব্যস্ত যে চাইলেও টিমের দৈনন্দিন কাজে সেই ভাবে সময় দিতে পারেন না। আর সেই সুযোগ নিচ্ছেন অন্যরা। নিটফল, একগাদা লোক। সবাই বস। এটিকেকে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে গেলে আরও পেশাদার মনোভাব তৈরি করতে হবে।
প্র: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তো আপনার খুব ভাল বন্ধু। তাঁকে এ সব কথা জানিয়েছেন?
ভাইচুং: শুধু সৌরভ কেন, সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওটিয়া, উৎসব পারেখের সঙ্গেও কথা বলেছি। এঁদের একজন আমার বক্তব্য অনেক সময় নিয়ে শুনেওছেন। সেগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগীও হয়েছেন। এমনকী নিজে থেকে অনেক সময় পরামর্শও চেয়েছেন। তবে এ সব সমস্যা তো আর এক দিনে মিটতে পারে না।
প্র: আপনার সঙ্গে এক বছরের চুক্তি এটিকের। পরের বার ফের প্রস্তাব পেলে থাকবেন?
ভাইচুং: সে ক্ষেত্রে আমার কতগুলো শর্ত থাকবে। যেগুলো ওদের মানতে হবে। না হলে নয়।
প্র: কী শর্ত?
ভাইচুং: টিমে আমার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। টেকনিক্যাল ব্যাপারে আমি-ই শেষ কথা বলব। ফুটবলার এবং কোচিং স্টাফের পাশে আমাকে থাকতে দিতে হবে। টিমের সঙ্গে না থাকতে পারলে কোথায় সমস্যা হচ্ছে জানব কী করে? এ বার না ছিলাম প্রি-সিজন শিবিরে, না এখনও পর্যন্ত কোনও অ্যাওয়ে ম্যাচে টিমের সঙ্গে গিয়েছি। আমি তো আর ভগবান নই যে, বাইরে থেকে সব অসুখ সারিয়ে দেব! আর এই সব কিছুই সরকারি ভাবে দিতে করতে হবে আমাকে। একেবারে লিখিত।
প্র: জোসে ব্যারেটোর ছাঁটাই হওয়ার জন্যও কিন্তু আপনাকে দায়ী করা হচ্ছে?
ভাইচুং: শুধু দায়ী? আপনি হয়তো কম শুনেছেন! ব্যারেটোকে তো আমার চিরশত্রু বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেন কোনও মুখ দেখাদেখি নেই আমাদের দু’জনের। কিন্তু যাঁরা এ সব গুজব রটাচ্ছেন, তাঁরা অনেকেই জানেন না, টুর্নামেন্টের আগে ফুটবলারদের তালিকা তৈরি করার সময় ব্যারেটোর থেকেই আমি পরামর্শ নিয়েছিলাম। ও আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল ভারতীয় ফুটবলারদের বাছতে।
জেনে রাখুন, ব্যারেটো ছাঁটাই হয়েছে আইএসএলের নিয়মের কবলে পড়ে। এ বছর থেকে একজন করে ভারতীয় কোচ আইএসএলের সব টিমে বাধ্যতামূলক হয়েছে। তাই ওর জায়গায় নিযুক্ত হয়েছে বাস্তব রায়। আবার বলছি, টিমে আমার কাজ শুধু পরামর্শদাতার। আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে ব্যারেটোকে ছাড়তাম না। ইউথ ডেভেলপমেন্টের কাজে লাগাতাম ওকে।
প্র: আইএসএলের মধ্যে জাতীয় দলে ফুটবলার ছাড়া নিয়েও বিতর্ক তৈরি হচ্ছে...
ভাইচুং: আইএসএল শুরু হয়েছে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিকে মাথায় রেখে। জাতীয় দলের উন্নতি না হলে আইএসএল দিয়ে কী হবে? দেশ সবার আগে।
প্র: আইএসএল নিয়ে আপনার উপলব্ধি?
ভাইচুং: আমি অবাক! সল্ট লেক স্টেডিয়ামে যাঁরা খেলা দেখতে এসেছিলেন, ভেবেছিলাম তাঁরা স্যান্ডউইচ খেয়ে চলে যাবেন। কিন্তু তাঁরা যে গালিগালাজও করবেন, আন্দাজ করতে পারিনি। তবে এই প্রথম বার গালাগালিগুলো ফুলের মতো লাগছিল এই ভেবে যে, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ছাড়াও শহরে তা হলে আরও একটা নতুন আবেগ তৈরি হয়েছে! এ-টি-কে!