ফকরির মতো হ্যান্ডসাম ফুটবলার দেখিনি

প্রথম যে দিন দেখেছিলাম মাসুদ ফকরিকে, আমার বয়স তখন সবে ১৬। তাকিয়ে ছিলাম ওঁর দিকে। মনে হচ্ছিল যেন রূপকথার গল্প থেকে কোনও রাজপুত্র এসে সোজা ফুটবল মাঠে নেমে পড়েছেন!

Advertisement

চুনী গোস্বামী

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৭
Share:

প্রথম যে দিন দেখেছিলাম মাসুদ ফকরিকে, আমার বয়স তখন সবে ১৬। তাকিয়ে ছিলাম ওঁর দিকে। মনে হচ্ছিল যেন রূপকথার গল্প থেকে কোনও রাজপুত্র এসে সোজা ফুটবল মাঠে নেমে পড়েছেন!

Advertisement

ও রকম সুন্দর চেহারার ফুটবলার আমি জীবনে দ্বিতীয় কাউকে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। উচ্চতাটা ছিল চোখে পড়ার মতো। ধবধবে ফর্সা। টিকালো নাক। মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগে থাকত। একেবারে যেন সিনেমার হিরো। উনি ১৯৫২-’৫৪ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলে খেলেছিলেন। ’৫৪-তে আমি মোহনবাগানের সিনিয়র টিমে সবে সই করেছি। তখন একই মাঠে আমাদের আর ইস্টবেঙ্গলের প্র্যাকটিস হত। সে জন্য রোজ অনুশীলনে ওঁর সঙ্গে দেখা হত। তখন আমি এতটাই ছোট ছিলাম যে নিজে থেকে সাহস করে কখনও কথা বলিনি। আর ওঁর পক্ষেও আমাকে চেনা তখন সম্ভব ছিল না।

ফকরি লেফট আউটে খেলতেন সালের মতোই। সে জন্য ওঁর সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের সেই বিখ্যাত পঞ্চপাণ্ডবের এক জন সালের সব সময় তুলনা চলত। দু’জনের মধ্যে কে ভাল ফুটবলার, তা নিয়ে ময়দানে তখন নিয়মিত তর্ক চলত। তাতে আমিও মাঝে মাঝে সামিল হয়েছি। সালে বলটা পায়ে রেখে খেলতেন। অসাধারণ ফুটবলার ছিলেন। আর ফকরি লম্বা, লম্বা বল তুলে দিতেন বিপক্ষের বক্সে। গোলটা চিনতেন। দু’জনের খেলার স্টাইল একেবারে আলাদা ছিল। তবে যে যাই বলুন, ফাকরির তুলনায় সালে অনেক বড় মাপের ফুটবলার ছিলেন।

Advertisement

সত্যি কথা বলতে, ফকরি সম্পর্কে বেশি কিছু জানতাম না। তখন তো এত চ্যানেল বা খবরের কাগজ ছিল না। ময়দান থেকে যেটুকু জানতে পেরেছিলাম আর কী! ফকরি আমার থেকে বছর ছয়েকের বড় ছিলেন। ওঁর বিরুদ্ধে কখনও কোনও ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়নি। ভারতে হয়তো ওঁর থেকে অনেক বড় মাপের ফুটবলার খেলে গিয়েছেন। তবে পাকিস্তান থেকে ভারতে খেলতে আসা ফুটবলার বলতে মনে হয় চেনা একজনই এসেছিলেন। তিনি মাসুদ ফকরি।

১৯৫৪-র এশিয়ান গেমসে পাকিস্তানের জার্সিতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ফকরি। তিনিই প্রথম পাক ফুটবলার, যাঁর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হ্যাটট্রিক রয়েছে। সে জন্য তাঁকে পাকিস্তানে ‘মিলেনিয়াম ম্যান’ বলা হত। নিজের দেশের হয়েও ফকরি বেশি দিন খেলেননি। ১৯৫৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনে চলে যান। সেখানকার তৃতীয় বা চতুর্থ ডিভিশনের কোনও ক্লাবের হয়ে খেলতে। তার পর থেকে ফকরির কোনও খবর ছিল না। এই তো হঠাৎ করেই শুনলাম ওয়েলসে তিনি মারা গিয়েছেন।

সত্যি কথা বলতে, আমারও বয়স হয়েছে। অনেক পুরনো ঘটনা আজকাল আর সে ভাবে মনে পড়ে না। কিন্তু এখনও চোখ বন্ধ করলে, ফকরির ঝকঝকে সেই চেহারাটা ভেসে ওঠে। মিলেনিয়াম ম্যানকে আমি মনে রেখেছি, ওঁর খেলার চেয়েও চেহারার জন্যই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন