দু’সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে মণীশ পাণ্ডে (বাঁ দিকে)
পুণের হোটেলে তখন ব্রেকফাস্ট সারছিলাম। এক মধ্যবয়সি মহিলা আমার দিকে এগিয়ে এলেন। ছবি তোলার আর একটা অনুরোধ আসতে চলেছে ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানালাম। কিন্তু পরের দশ মিনিটে আমাদের মধ্যে যে কথাবার্তা হল, তাতে শুধু বিস্মিত নয়, বেশ বিরক্তও হলাম।
শ্রীমতি অনিতা পাওলিন দে বারাণসীর ডব্লিউএইচ স্মিথ মেমোরিয়াল স্কুলের প্রিন্সিপাল। যিনি বর্তমানে গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় হল, শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপন। সাধারণ একটা বিষয়। কিন্তু শ্রীমতি দে যা বললেন, তা মোটেই সাধারণ ব্যাপার নয়। বরং চমকে ওঠার পক্ষে যথেষ্ট।
শ্রীমতি দে বললেন, গবেষণাটা করতে করতে উনি সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন, অন্তত চারটে রাজ্যে (নাম উল্লেখ করলাম না) ক্লাস সিক্স থেকে টেন-এর ছেলেমেয়েরা নাকি নিয়মিত ক্রিকেট বেটিং করে!
ওঁর গবেষণার অংশ না হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিয়ে উনি বিষয়টার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং এই চাঞ্চল্যকর সত্যিটা জানতে পেরেছেন। আরও অবাক করা ব্যাপার হল, এরা বেশিরভাগই সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে। আর নিজেদের পকেট-মানি আর মোবাইল ব্যবহার করে নাকি ওরা ক্রিকেট জুয়া খেলে। এ কথা শুনে আমি রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে যাই।
আপনারা কোনও দিন এ রকম কিছু শুনেছেন কি না জানি না। স্কুল-বাচ্চারা ক্রিকেট-জুয়া খেলছে— আমি এটা প্রথম শুনলাম। শ্রীমতি দে যাওয়ার সময় আমাকে এই বাচ্চাদের অভিভাবকদের কাছে তাদের সন্তানদের ক্রিকেট জুয়া থেকে দূরে সরিয়ে আনার আবেদন জানানোর অনুরোধ করে গেলেন। আবেদন করব কী, বরং দেশের সব বাবা-মায়েদের কাছে আমার পরামর্শ, বাচ্চারা কী ভাবে পকেটমানি খরচ করছে, কোথায় ফোন করছে, এ সবের উপর কড়া নজর রাখুন।
শিশুদের এই সারল্য নষ্ট করছে কে, জানি না। অর্থ, প্রযুক্তি, না আধুনিক জীবনযাত্রা? অভিভাবকত্ব ব্যাপারটা আমি অত ভাল বুঝি না। তবে ১১-১২ বছরের একটা বাচ্চার হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়াটা যে স্মার্ট আইডিয়া নয়, এটুকু বলতেই পারি। পেশায় ব্যস্ত অভিভাবকেরা অনবরত তাঁদের সন্তানের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য যে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেন, তা বুঝি। কিন্তু তাদের ফোন থেকে কোথায় কল যাচ্ছে বা আসছে, তার উপর নজরদারির একটা ব্যবস্থা অন্তত থাকা দরকার। বোধহয় কাজটা খুব একটা কঠিন নয়।
আশা করি বাচ্চাদের ক্রিকেট জুয়ায় জড়িত থাকার দায়টাও আবার আইপিএলের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। এ বছর আইপিএল নিয়ে যা নিন্দামন্দ চলছে, তাতে যেন এটাই মনে হচ্ছে। পুণেতে আজ সুপারজায়ান্টসের বিরুদ্ধে আমাদের ম্যাচ। এই রাজ্যে জল সমস্যার সমাধানের জন্য ক্রিকেট সংস্থাগুলো যা করার, তা করছে শুনে খুশি হলাম। মুম্বই ও মহারাষ্ট্র— দুই সংস্থাই খরাত্রাণে সাহায্য করবে বলে ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে আবার শুনলাম, রয়্যালটি না দেওয়ায় আইপিএলের ম্যাচে হিন্দি ছবির গান বাজানো নিয়েও নাকি আপত্তি উঠেছে। এই সমস্যাটা মিটেছে কি না, জানি না। তবে যা চলছে, কোনও দিন কারও বাড়ির কাজের লোক কামাই করার জন্যও না কেউ আইপিএলকে দায়ী করে বসে। তাই আগামী বছর আইপিএল দেশের বাইরে হতে পারে, এই খবরে আমি অবাক হইনি। তাতে দেশের আয়ের দিক থেকে কতটা ক্ষতি হবে ভেবে দেখুন।
ব্রেকফাস্টে এ দিন দেখা হল আমার ভাল বন্ধু ও রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টসের মালিক মিস্টার সঞ্জীব গোয়েন্কার সঙ্গেও। রবিবারের ম্যাচের জন্য একে অপরকে শুভেচ্ছা জানালাম। উনি চলে যাওয়ার পর ওঁর টিমের রঙচঙে জার্সি নিয়ে ভাবছিলাম। মনে হল, আমাদের টিমের পার্পলটা ওদের চেয়ে অনেক ভাল। আশা করি, জার্সির মতো আজ মাঠে আমাদের পারফরম্যান্সও ওদের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। (দীনেশ চোপড়া মিডিয়া)