ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বির স্পেশ্যাল ওয়ান হয়ে উঠতে পারেন ইব্রাহিমোভিচ

সমর্থকদের হাতাহাতি। দর্শক ভর্তি গ্যালারি। কোচেদের গালিগালাজ। ফুটবলারদের আবেগ। সব মিলিয়ে প্রেক্ষাপট ঠিক কোনও অ্যাকশন ছবির মতো!

Advertisement

সোহম দে

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫০
Share:

সমর্থকদের হাতাহাতি। দর্শক ভর্তি গ্যালারি। কোচেদের গালিগালাজ। ফুটবলারদের আবেগ। সব মিলিয়ে প্রেক্ষাপট ঠিক কোনও অ্যাকশন ছবির মতো!

Advertisement

এ রকম দিনে সমর্থকরা শুধু ফুটবল দেখতে আসেন না। বরং আবেগের সেই আগুনের সাক্ষী থাকতে চান। আশায় থাকেন, বিপক্ষের প্রতি যে রাগটা এত দিন ধরে তাঁরা পুষে রেখেছেন, সেই রাগের বহিঃপ্রকাশটা যেন মাঠে ঘটে।

ফুটবলাররাও আগেভাগেই নিজেদের ক্যালেন্ডারে মার্ক করে রাখেন তারিখটা। কারণ তাঁরা জানেন, বাকি ফিক্সচারের থেকে এই ম্যাচের গুরুত্ব কতটা আলাদা। জানেন, এই একটা ম্যাচই তাঁর কেরিয়ার গড়তে বা গুড়িয়ে দিতে পারে।

Advertisement

এটাই ডার্বি। পড়শি ক্লাবেদের লড়াই। সেটা স্পেনের মাদ্রিদ ডার্বি হোক বা আর্জেন্তিনার সুপারক্লাসিকো। ইতালির মিলান ডার্বি হোক বা গ্রিসের ইটার্নাল ডার্বি। কিংবা আমাদের ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। বিশ্ব ফুটবল ক্যালেন্ডার মানেই তো পড়শি ক্লাবেদের রেষারেষি। কয়েকজনের কাছে যা শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। আবার কয়েকজনের কাছে সতীর্থদের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার।

কলকাতা যখন দেখল প্রহসনের ডার্বি, তখন আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাঞ্চেস্টার দেখতে চলেছে সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। এক দিকে ইতিহাসের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। বিপক্ষে নীল-স্ফূলিঙ্গ ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। মরসুমের প্রথম ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বি এসে হাজির ইপিএলে।

শনিবারের যে ডার্বি আবার অন্য মাত্রা পেয়েছে কারণ এ বার এমন দুই চকমকি পাথর ডাগআউটে থাকবে, যাদের ঘষাঘষি লাগা মানেই ফুলকি ছুটবে। যাঁরা একসঙ্গে হওয়া মানে মাঠের বাইরেও উত্তেজনার রেশ ছড়িয়ে পড়ে। পেপ গুয়ার্দিওলা বনাম জোসে মোরিনহো।

এক জন উত্তর মেরু তো আর এক জন দক্ষিণ মেরু। এক জন মাঠে সৃষ্টির জনক। আর এক জন ধবংসাত্মক ফুটবলে বিশ্বাসী। একে অপরকে ঘুরিয়ে গালিগালাজ করা হোক বা সাংবাদিক সম্মেলনে সরাসরি আক্রমণ করা, গুয়ার্দিওলা বনাম মোরিনহো মানেই বিতর্ক।

ডার্বি এমন একটা মঞ্চ যা কোনও আনকোরা প্রতিভাকেও সামনে তুলে আনে। আবার কারও কারও কেরিয়ারকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। কলকাতা ময়দানেও কেরিয়ারের শুরুতে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের। কলকাতা ডার্বিতে মোহনবাগানের পাঁচ গোলের অন্ধকার দিনে তিনিই চার গোল হজম করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক যন্ত্রণা দূরে রেখে ভাস্কর তার পরের অনেক বছর দেশের সেরা গোলকিপারের মধ্যে একজন ছিলেন ঠিকই। কিন্তু অবসরের পরে আজও সেই অভিশপ্ত দিনের রেশ তাঁর জীবন থেকে কাটেনি। তাঁর মোবাইল নম্বরের শেষে আজও চারটে শূন্য। যা ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়কে সেই দিনের কথা মনে করায় প্রতিদিন। ‘‘আসলে ডার্বি মানে মাধ্যমিক পরীক্ষা। খারাপ খেললেই বিপদ। মনে আছে, সেই ম্যাচের পর গৃহবন্দি ছিলাম। এমনকী আমার আত্মীয়দেরও কম বিদ্রুপ শুনতে হয়নি। কেরিয়ারের শুরুতে হয়েছিল বলে আমার হাতে সময় ছিল। আমি উঠে দাঁড়াতে পেরেছিলাম।’’

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বি নিয়ে এত মাতামাতি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু মজার ব্যাপার, কয়েক বছর আগেও এই ডার্বি নিয়ে কারও মাথাব্যথা ছিল না। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জন্য ম্যাচটা খুবই সাধারণ ছিল। দল আসত, নামত, তিন পয়েন্ট নিয়ে বেরিয়ে যেত। কিন্তু মালিকানা বদলানোর পর প্রতিবেশীদের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। রবিনহো, দাভিদ সিলভা, সের্জিও আগেরোর মতো ফুটবলারদের নিয়ে ম্যান সিটি-ও হঠাৎ করে ইংল্যান্ডের ‘বিগ ফোরের’ মধ্যে জায়গা করে নেয়। তাই তো ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বি হয়ে উঠেছে ইংল্যান্ডের এল ক্লাসিকো।

এ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, সিটি বেশি গোল করলেও ইউনাইটেড গোল খেয়েছে কম। দু’দলই তিন পয়েন্টে বসে। সে কারণে এই ম্যাচের কোনও ফেভারিট খুঁজে পাচ্ছেন না ভারতীয় ফুটবল আইকন ভাইচুং ভুটিয়া। ‘‘মরসুম সবে শুরু হয়েছে। দু’দলই ভাল খেলছে। এ সমস্ত ম্যাচে সমান শক্তি নিয়ে নামবে সবাই। তাই আলাদা করে কাউকে এগিয়ে রাখব না,’’ বলছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। নিজেও সেই বিখ্যাত ডায়মন্ড ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। সেই এক লক্ষ গ্যালারির শব্দব্রহ্ম আজও শুনতে পান। ‘‘যুবভারতীর সেই আবহটাই আমাকে তাতিয়ে দিয়েছিল। এক লাখের বেশি দর্শকের সামনে গোল করেছি। বলে বোঝাতে পারব না অনুভূতিটা’’ বলছিছেন ভাইচুং।

৮ কোটি পাউন্ডের পোগবা। চিলির হয়ে দু’বার কোপা আমেরিকা জয়ী ক্লদিও ব্র্যাভো। ইংল্যান্ডের উঠতি ডিফেন্ডার জন স্টোনস। ‘হোয়াইট পেলে’ ওয়েন রুনি। কে নেই এ বার ডার্বিতে? সঙ্গে রয়েছেন এমন একজন যিনি এল ক্লাসিকো থেকে শুরু করে মিলান ডার্বি, প্রতিটা বিখ্যাত ম্যাচেই নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। তিনি— জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ। যাঁর ফিটনেস কোনও কুড়ি বছরের তরুণের মতোই।

পির্লো, জেরারের মতো তারকারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রসৈকতে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন, ইব্রাহিমোভিচ কিন্তু ৩৪ বছরেও ইপিএলের মতো কঠিন লিগে দাপিয়ে খেলছেন। শুধু নামকা ওয়াস্তে আসেননি, সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তিন ম্যাচে তিন গোল করে ফেলেছেন। জ্লাটানের বয়স বাড়লেও ফিনিশিংয়ে কোনও ঘাটতি হয়নি। যেমন হেড দেন তেমনই অবিশ্বাস্য সমস্ত মুভে গোল করে যান।

সত্যিই তো দু’দলই সমান জায়গায়। কিন্তু সিটির হয়ে আগেরো যেখানে খেলবেন না, ইউনাইটেডে জ্লাটানের উপস্থিতি সামান্য হলেও জোসে মোরিনহোকে এগিয়ে রাখছে। প্রোপেলার কিক হোক বা স্করপিয়ন, জ্লাটান মানেই তো অবিশ্বাস্য সমস্ত গোল। তাই নেপথ্যের নায়কদের নিয়ে যখন এত লেখালেখি হচ্ছে, তার মধ্যে ইব্রা-ই না হয়ে ওঠেন ডার্বির ‘স্পেশ্যাল ওয়ান।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন