ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শূন্যে উঠে প্রোপেলার কিক।
ইউরো ২০০৪-এ ইতালির বিরুদ্ধে সেই স্মরণীয় ফ্লিক।
মাইক হাতে ঔদ্ধত্য সহকারে বলা, ‘‘সবাই ভেবেছিল আমি অবসর নিচ্ছি। কিন্তু এ বার বিপক্ষের সবাইকে অবসরে পাঠিয়ে দিলাম।’’
গত কয়েক বছর সুইডেন মানেই তো সবার চোখের সামনে একটা লম্বা চওড়া লোকের ছবি ভেসে ওঠে। মুখে একটু আধটু দাড়ি। চুলে পনিটেল। আর পায়ের ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা যা ‘ল অব গ্র্যাভিটিকেও’ হার মানাবে।
কিন্তু হয়তো দেশের জার্সিতে আর একটা ম্যাচেই দেখা যাবে এমন সমস্ত বিস্ময় গোলের মহড়া। আর হয়তো একটা সাংবাদিক সম্মেলনে শোনা যাবে এমন সমস্ত কথা যা দিয়ে আরাম করেই শিরোনাম তৈরি করে দেওয়া যায়। কারণ ২২ জুন ২০১৬-র পর সুইডেন হয়তো আরও অনেক বিশ্বকাপ খেলবে। ইউরো খেলবে। কিন্তু দলে থাকবেন না জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ। বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ডু অর ডাই ম্যাচের আগে যিনি জানিয়ে দিলেন, এই ইউরোই দেশের হয়ে তাঁর শেষ টুর্নামেন্ট। অর্থাৎ বেলজিয়ামের কাছে হেরে যদি বিদায় নেয় সুইডেন, তা হলে হলুদ জার্সিতে শেষ হয়ে যাবে ইব্রার চমক।
কিন্তু হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত কেন? দিন কয়েক আগে তো রিও অলিম্পিক্স দলের প্রাথমিক তালিকায় ইব্রার নাম ঘোষণা করেছিল সুইডেন। তা হলে কেন? ফুটবল মহলে একটা জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে যে ইব্রার অবসর সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছেন তাঁরই প্রাক্তন কোচ জোসে মোরিনহো। যিনি আগামী মরসুমে ম্যাঞ্চেস্টার ইউইনাটেডে সই করতে চান ইব্রাকে। ইব্রার বয়স এখন ৩৪ হওয়ায় ইউনাইটেড কোনও রকম ফিটনেস নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কেউ কেউ মনে করছেন, হয়তো হবু ক্লাবের ফতোয়ায় হঠাৎ করে ইব্রাকে অবসর নিতে হল। যাতে দেশের হয়ে খেলার চাপটা কমে।
বুধবার রাতে গ্রপ অব ডেথের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বেলজিয়াম ও সুইডেন। কিন্তু ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে এখন গ্রুপের পরিসংখ্যানের থেকেও সবার আলোচ্য বিষয়, ইব্রা ছেড়ে সুইডেন কী করবে। হতে পারে কোনও ট্রফি দিতে পারেননি ইব্রাহিমোভিচ। হতে পারে কোনও বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালের ধারেকাছেও সুই়ডেনকে নিয়ে যেতে পারেননি বিশ্বফুটবলের নিনজা। কিন্তু এটাও তো ঠিক, শেষ কয়েক বছরে ইব্রাহিমোভিচের মতো কোনও সুপারস্টার পায়নি সুইডেন। যিনি এমন সব মুহূর্ত তৈরি করবেন যে চিরজীবনের জন্য সেটা নিয়ে ফুটবল-গাঁথা তৈরি হবে। আবার যাঁর ক্যারিশমায় একটা সাধারণ সুইডেন দলও আত্মবিশ্বাস পাবে, আমরা অনেক দূর যেতে পারব।
ইব্রাহিমোভিচ যখন সরকারি ভাবে বললেন, ‘‘আমি খুবই গর্বিত দেশের হয়ে খেলতে পেরে। সব সময় নিজের সঙ্গে সুইডেনের ফ্ল্যাগটা বয়ে নিয়ে যাব,’’ তখনও সেই উদ্ধৃতি বারবার শেয়ার হতে থাকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইটারে শুরুও হয়ে যায় ‘থ্যাঙ্ক ইউ ইব্রা।’
এ বার প্রশ্ন হচ্ছে, তা হলে কি বুধবারই শেষ বার দেখা যাবে বিশ্বফুটবলের অন্যতম ম্যাজিশিয়ানকে? কারণ প্রথম দুটো ম্যাচে তো একটাও শট টার্গেটে রাখতে পারেনি ইব্রার দল। সামনে যখন বেলজিয়াম তা হলে তো এক প্রকার ধরেই নেওয়া যায়, সুইডেনের হয়ে শেষ বারের মতো বুধবার রাতেই দেখা যাবে ইব্রাকে। অন্তত বিশেষজ্ঞদের তো তাই মত। কিন্তু তাঁর নাম ইব্রা তখন সবাই অপেক্ষায় থাকে অঘটনের। অপেক্ষায় থাকে এমন একটা মুহূর্তের যেটার ভিডিও পরের কয়েক দিনও ইউটিউবে বারবার দেখবে সবাই। ইব্রাহিমোভিচ তো নিজেও সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘‘আশা করছি বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে কালকে যাতে এট়া শেষ ম্যাচ না হয়। দেশের হয়ে অনেক ভাল মুহূর্ত উপভোগ করেছি।’’ রিও অলিম্পিক্সে খেলার কথা থাকলেও, ইব্রা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন তিনি থাকছেন না দলে।
গ্রুপ অব ডেথের পরিস্থিতি যা তাতে ইতালি শুধু মাত্র উঠেছে শেষ ষোলোয়। এখনও বাকি তিন দলের নধ্যে যে কোনও দল উঠতে পারে। ইব্রার সামনে তাই আজ কার্যত ফাইনাল।