কোচ বিভাস দাসের সঙ্গে ঈশান পোড়েল।—ফাইল চিত্র।
চন্দননগর থেকে শ্যামবাজারের দেশবন্ধু কোচিং সেন্টার। অনুপ সমাদ্দারের হাত ধরে ছোট্ট ঈশান পৌঁছে গিয়েছিল সেখানে। তার পর দীর্ঘ প্রায় এক দশকের লড়াই। আজ সেই ঈশান পোড়েলের হাতেই বিশ্বকাপ। ঝুলিতে বিশ্বকাপের ৬টা উইকেট। সৌরভ-ঋদ্ধিদের পর বাংলার ক্রিকেটকে আবার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিলেন এই পেসার। যে কোচের হাত ধরে ঈশানের এই উত্থান, সেই বিভাস দাস একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।
ভারতের এই জয়ে আপনারও তো অনেকটা শুভেচ্ছা প্রাপ্য!
বিভাস: নিজেদের কৃতিত্বেই ঈশানরা পেরেছে। তবে, আমার ভাল লাগা অনেকটা...
ঈশানের সাফল্যকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন? এতটা কি ভেবেছিলেন?
বিভাস: এতটা মানে? আমি আরও একটু বেশি আশা করেছিলাম। সব ম্যাচ খেলতে পারলে হয়তো সেটাও হত।
শুরুতে যখন ঈশান খেলতে পারেনি, তখন কী মনে হচ্ছিল?
বিভাস: খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ও তো আরও হতাশ ছিল। কিন্তু, চেষ্টা করেছি যাতে ওর হতাশা না বাড়ে। বলেছি, তুই বরং এটা ভাব, ওখানে বেড়াতে গিয়েছিস। চোট নিয়ে ভাবিস না। একদমই না।
প্রথম যে দিন বিশ্বকাপের আসরে বল হাতে নামল সে দিন কী পরামর্শ দিয়েছিলেন?
বিভাস: আলাদা করে কিছু পরামর্শ দিইনি। শুধু বলেছিলাম, চিন্তামুক্ত থাক। কিন্তু, ও যে ভাবে বল করেছে, সেটাও খুব কঠিন ছিল। প্রবল ব্যথা নিয়ে ও এই বলটা করেছে! আমার তো মনে হচ্ছে, ফিরে এসে ও হয়তো বিজয় হাজারে ট্রফির প্রথম দু-তিনটে ম্যাচ খেলতেই পারবে না।
ফাইনালের আগে কী বলেছিলেন?
বিভাস: ফাইনালের আগে খুব একটা কথা বলিনি। কারণ, পাকিস্তান ম্যাচের পর এত কথা হয়েছে যে, আর কথা বলে চাপ বাড়াতে চাইনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওই বল করাটা তো অনেকটা বড় ব্যাপার! তাই আবেগটাও বেশি ছিল।
সৌরভ, মনোজ, ঋদ্ধি, শামির পর কি আমরা ঈশানকে নিয়েও স্বপ্ন দেখতে পারি?
বিভাস: আমি তো সেই স্বপ্নই দেখছি। ওকে বলেছি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে এবং জিতে আত্মতুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। আসল জায়গা তো সিনিয়র ইন্ডিয়া টিম। ২০১৯-এর বিশ্বকাপটা মাথায় রাখো।
একটু পিছন দিকে ফিরে যাই। যখন, ঈশান শুরু করেছিল। প্রথম ওকে দেখে কী মনে হয়েছিল?
বিভাস: আপনাকে একটা গল্প বলি। আমার কাছে ঈশানকে পাঠিয়েছিল ইস্টার্ন রেলের ক্রিকেটার অনুপ সমাদ্দার। আমি ছেলেটাকে দেখেই অনুপকে এসএমএস করে বলেছিলাম, এই লম্বা ছেলেটাকে পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ। ২০১৭-য় ঈশান যখন রঞ্জি ট্রফিতে দারুণ খেলছে, তখন অনুপ ওই মেসেজটাই আবার আমাকে পাঠিয়েছিল। এটাই প্রমাণ, আমার চিনতে ভুল হয়নি।
ও কত বছর বয়সে আপনার কাছে এসেছিল?
বিভাস: যখন এসেছিল তখন ওর বয়স ১০। আর আজ ও ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতল। অনেকটা রাস্তা। তবে আরও অনেকটা যেতে হবে।
শুরু থেকে আজকের ঈশান— কতটা বদল হয়েছে ক্রিকেটার হিসাবে?
বিভাস: ফিটনেস অনেক বেড়েছে। আরও বাড়াতে হবে। ও কিন্তু ব্যাটিংটাও খুব ভাল করে। কিন্তু, কেউ যে কেন ওকে দিয়ে ব্যাটিংটা করায় না, সেটা বুঝি না।
আর মানুষ ঈশান?
বিভাস: একই রকম আছে। অনেকটা পরিণত হয়েছে। কিন্তু, এখনও বাচ্চা বাচ্চা ব্যাপারটা ওর ভিতর থেকে কাটেনি। সব সময় হাসিখুশি। হইহুল্লোড় করতে ভালবাসে।
শুনেছি চন্দননগর থেকে অনুশীলনে আসাটা সমস্যার, তাই অনেক সময় আপনার কাছেই থেকে যেত! কতটা লড়াই করতে হয়েছে এই জায়গায় পৌঁছতে?
বিভাস: এটা তো ওর দ্বিতীয় বাড়ি! এখনও যখন কলকাতায় আসে, আমার বাড়িতেই থাকে। অনেক খেটেছে। অনেক কষ্টও করেছে। তার ফল পাচ্ছে।
বিশ্বকাপ জয় একটা বড় সাফল্য। এর পর কোথায় দেখছেন ঈশানকে?
বিভাস: অবশ্যই সিনিয়র ইন্ডিয়া টিমে। কিন্তু, সেই রাস্তাটা অনেক কঠিন। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। প্রতিযোগিতাও অনেকটা বেশি। এখন যারা ভারতীয় সিনিয়র দলে খেলছেন, তাঁদের অনেকেই আরও পাঁচ সাত বছর খেলবেন। যেমন ভুবনেশ্বর কুমার। সেখানে নিজের জায়গা করে নেওয়াটা বেশ কঠিন।
আইপিএল-এ দল না পাওয়ার হতাশা নিশ্চয়ই আর থাকছে না?
বিভাস: ও শুরুতে খুব হতাশ ছিল। কিন্তু আমি বুঝিয়েছিলাম, আইপিএল প্রতি বছরই আসে। আবার সামনের বছর আসবে। তা ছাড়া টি-২০টা আসল ক্রিকেট নয়। তাই ওটা নিয়ে না ভাবাই ভাল। আইপিএল খেলতে পারলে দুটো লাভ হয়। টাকা আসে এবং বিশ্বমানের প্লেয়ারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা যায়।
ছাত্র তো আপনাকে বড় গিফট দিয়ে দিল। আপনি কী উপহার দেবেন?
বিভাস: ভাবিনি। আমাদের দেওয়া নেওয়া চলতেই তো থাকে!