মহড়া: দুবাইয়ে ওমান ম্যাচের প্রস্তুতি সন্দেশদের। ছবি এআইএফএফ।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ওমান ৮১ নম্বরে। ভারত ১০৪-এ। অর্থাৎ, ২৩ ধাপ পিছনে রয়েছেন সন্দেশ জিঙ্ঘনরা। শুধু তাই নয়। ওমানের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত জিততে পারেনি ভারতীয় দল।
একে এ রকম ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান, তার উপরে দলের সেরা অস্ত্র সুনীল ছেত্রী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় নেই। আজ, বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক ফিফা ফ্রেন্ডলিতে ভারতীয় দল কি পারবে প্রথমবার ওমানকে হারাতে?
গুয়াহাটিতে ২০১৯-র অক্টোবরে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে সুনীলের গোলে ওমানের বিরুদ্ধে ৮২ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও জিততে পারেনি ভারত। শেষ ১৫ মিনিটে প্রতিপক্ষের আক্রমণের ঝড় সামলাতে না পেরে ১-২ হেরে মাঠ ছেড়েছিলেন সন্দেশরা। এখনও সেই যন্ত্রণা কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে ইগর স্তিমাচের মনে। বুধবার দুপুরে দুবাই থেকে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় দলের কোচ বলেই ফেললেন, ‘‘পুরনো ম্যাচের রেকর্ডিং যখনই দেখি, নিজেকে সামলাতে পারি না। কেঁদে ফেলি। বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বে ওমানের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা মরিয়া ছিলাম জিতে দ্বিতীয় পর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হেরে গিয়েছিলাম। তা ছাড়া ফুটবলারদের অভিজ্ঞতাও কম ছিল।’’ ইগর আরও বলেন, ‘‘আমার কষ্ট হয় ফুটবলারদের কথা ভেবে। নিজের ফুটবলজীবনেও এই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই কারণেই গুয়াহাটির ম্যাচের কথা মনে পড়লে কেঁদে ফেলি।’’ নভেম্বরে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচেও ০-১ হেরেছিল ভারতীয় দল। ওমানের বিরুদ্ধে আগের দু’টি ম্যাচে ভারতের হয়ে যাঁরা খেলেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এ বার দলে নেই। বিপিন সিংহ, আকাশ মিশ্র-সহ একঝাঁক নতুন ফুটবলার ডাক পেয়েছেন। এই তরুণ তুর্কিরাই এখন ভরসা ইগরের।
বৃহস্পতিবার ওমানের বিরুদ্ধে একাধিক ফুটবলারের জাতীয় দলে অভিষেকও নিশ্চিত। দীর্ঘ দিন পরে ভারতীয় দলের জার্সিতে ফিরতে চলছেন রক্ষণের অন্যতম ভরসা সন্দেশও। ইগর বললেন, ‘‘গত মরসুমে আমরা ক্রীড়াসূচিতে অনেক পরিবর্তন করেছিলাম। কিন্তু করোনা অতিমারি যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে।’’ তিনি যোগ করেছেন, ‘‘আইএসএল ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলা এক জিনিস নয়। আমাদের একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। ফুটবলারেরা যাতে অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারে, সেই কারণেই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের দু’টি ম্যাচেই ওমানের ফুটবলারদের সঙ্গে শারীরিক শক্তির লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছিল ভারতীয় দল। এ বারও তার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় জাতীয় কোচ। বললেন, ‘‘২০ মার্চ জর্ডনের বিরুদ্ধে ওমানের খেলা আমি দেখেছি। ওরা শারীরিক ফুটবল খেলে। তাই আমাদের ঝুঁকি না নিয়ে খেলতে হবে।’’
গত ১৫ মার্চ দুবাই পৌঁছয় ভারতীয় দল। পরের দিন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দেন ইগর। বুধবার বিকেলেও দীর্ঘ ক্ষণ অনুশীলন ম্যাচ খেলিয়েছেন তিনি। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ২৭ জন ফুটবলারকেই পরীক্ষা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বার বার তিনি সকলকে বলছেন, প্রতিপক্ষকে নিয়ে না ভাবে খোলা মনে খেলতে। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকেও বললেন, ‘‘ছেলেদের বলেছি, তোমাদের উপরে কোনও চাপ নেই। নিজেদের দুর্বল ভাবার কোনও কারণ নেই। আমরা শক্তিশালী দল বলেই তো ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি খেলতে রাজি হয়েছে। এই ম্যাচ দু’টি থেকে তোমাদের শেখার চেষ্টা করতে হবে।’’ ইগরের সঙ্গেই ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন সন্দেশ। তাঁর কথায়, ‘‘ফুটবলে আমরা কতটা এগিয়েছি, তা প্রমাণ করতে হবে এই ম্যাচে। অনুশীলনে প্রত্যেক দিন আমরা শিখছি। এ বার দেখানোর সময় এসেছে।’’
ওমান বনাম ভারত ম্যাচে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবে দুই বন্ধুর দ্বৈরথও! ইগরের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ওমান জাতীয় দলের কোচ ব্র্যাঙ্কো ইভানকোভিচ। এই ক্রোয়েশীয় কোচের অধীনেই ২০০৬ বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল ইরান। গত বছরের জানুয়ারি থেকে তিনি ওমান জাতীয় দলের দায়িত্বে। সাংবাদিক বৈঠকে ইগর বললেন, ‘‘ব্র্যাঙ্কো অসাধারণ কোচ। আমার খুব ভাল বন্ধুও। কোচ হিসেবে দারুণ সফলও। আমরা একে অপরকে খুব করে করে চিনি।’’
মস্তিষ্কের লড়াইয়ে বন্ধু ব্র্যাঙ্কোকে ইগর হারাতে পারেন কি না, এখন সেটাই দেখার।
আন্তর্জাতিক ফিফা ফ্রেন্ডলি: ওমান বনাম ভারত (সন্ধে ৭.১৫, ইউরোস্পোর্ট চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার)।