আখের দোকানের কর্মী আশিক এখন ভরসা স্তিমাচের

জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন তাঁকে এশিয়া কাপের পরে দেশের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান ফুটবলার হিসাবে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৬
Share:

প্রত্যয়ী: বাংলাদেশকে হারাবেন, বিশ্বাস আশিকের। ফাইল চিত্র

ইগর স্তিমাচ তাঁকে নিয়ে বলছেন, ‘‘দলের সব চেয়ে গতিময় ফুটবলার।’’

Advertisement

জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন তাঁকে এশিয়া কাপের পরে দেশের অন্যতম সেরা প্রতিভাবান ফুটবলার হিসাবে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন।

বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ওমান ও কাতার ম্যাচে তাঁর দৌড় আর হঠাৎ ভিতরে ঢুকে বিপক্ষের রক্ষণকে কাঁপিয়ে দেওয়া নজর কেড়েছে সবার। সামনে সুনীল ছেত্রীকে রেখে এক দিকের উইং থেকে উদান্ত সিংহ এবং অন্য দিক দিয়ে আশিক কুরুনিয়ানকে ব্যবহার করছেন স্তিমাচ। মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও সেটাই করতে চান ক্রোয়েশিয়ান কোচ। আর তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে উত্তেজিত আশিক। কেরলের মালাপ্পুরমের ছেলে গুয়াহাটি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের প্রথম জয়টা পেতেই হবে। কোচ টিম মিটিংয়ে বলে দিয়েছেন, কাতার ম্যাচের এক পয়েন্ট তখনই কাজে লাগবে, যদি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিতে তিন পয়েন্ট পাই।’’ পাশাপাশি একুশ বছরের ভারতীয় ফুটবলের নতুন তারকার মন্তব্য, ‘‘পুণে এফসি-র জুনিয়র দলের হয়ে কলকাতায় খেলেছি। কিন্তু দেশের জার্সিতে খেলা বিরাট ব্যাপার। আমাদের জেলা মালাপ্পুরমের মতোই কলকাতা ফুটবলের শহর। আই এম বিজয়নদের মুখে শুনেছি এখানে খেলার মজা আলাদা। স্টেডিয়াম ভর্তি থাকে। এখন থেকেই উত্তেজনা অনুভব করছি,’’ বলেন আশিক।

Advertisement

স্টিভন থেকে স্তিমাচ—দুই কোচের জমানাতেই যিনি অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন, সেই আশিকের অবশ্য ফুটবলার হওয়ার কথাই ছিল না। পাল্লাকাডের মুয়াপ স্কুলে পড়ার সময় ১০০, ২০০, ৮০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হতেন তিনি। স্বপ্ন ছিল অ্যাথলিট হওয়ার। ‘‘দৌড়ের অভ্যাসটা কাজে লাগছে এখন। চোট সারার পরে যখন ফের স্তিমাচ স্যার আমাকে ডাকলেন, তখন বারবার আমাকে বলছেন, গতিটা কাজে লাগাও।’’ পাঁচ ভাই বোনের সবচেয়ে ছোট আশিক দারিদ্র্যের জন্য এক সময় স্কুল ছেড়ে দেন এবং বাবার আখের দোকানে কাজ শুরু করেন। সারা দিন সেখানে কাজ করে বিকেলে ফুটবল খেলতেন। ‘‘আমাদের ওখানে ফুটবল ছাড়া আনন্দের অন্য কোনও অবলম্বন নেই। তাই সেটাই খেলতাম,’’ বলার সময় সুনীল ছেত্রীর ক্লাব সতীর্থের গলায় উচ্ছ্বাস। কেরলে তখন চলছিল ‘ভিশন ইন্ডিয়া’। সেখানে নির্বাচিত হওয়ার পরেই ফিরে তাকাতে হয়নি। চলে আসেন পুণের অ্যাকাডেমিতে। সেখান থেকে অনুশীলনে সুযোগ পেয়ে যান স্পেনের লা লিগার ক্লাব ভিয়ারিয়ালের জুনিয়র দলে। চার মাস পরে চোট নিয়ে ফেরেন। যোগ দেন আইএসএলের ক্লাব পুণে এফসি-তে। জাতীয় দলে দুর্দান্ত খেলার সুবাদে এ বার বেঙ্গালুরুতে সই করেছেন আশিক। বলছিলেন, ‘‘আমাদের একটা দল হিসেবে তৈরি করেছেন কোচ। এখানে জুনিয়র, সিনিয়র সবাই একশো শতাংশ দিতে প্রস্তুত। ছেত্রী ভাই (সুনীল ছেত্রী) আমাকে মাঠে এবং মাঠের বাইরে পথ দেখায়। বলছিল, প্রতিপক্ষের দু’জন ফুটবলার সামনে পড়লে ড্রিবল করার চেষ্টা না করতে। ঠিক জায়গায় বল পাস দিতে। মাঠের বাইরে কীভাবে নিজেকে তৈরি করতে হয়, তাও বলে দেয়।’’

সন্দেশ জিঙ্ঘান চোট পেয়ে ছয় মাসের জন্য বাইরে চলে গিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্টপারে কাকে খেলাবেন, তা নিয়ে চিন্তায় স্টিমাচ। আদিল থানের সঙ্গে আনাস এথানোডিকা না কি শুভাশিস বসু, সেই সিদ্ধান্ত নিতে ঘুম ছুটেছে তাঁর। শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিন ডিফেন্ডার নিয়ে খেলতে পারে ভারত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন