জাতীয় ভাবাবেগেই জন্ম ইন্ডিয়া ক্লাবের

ছোটবেলায় বাবা-জেঠুর হাত ধরে ইন্ডিয়া ক্লাবের মাঠে যেতাম। ক্লাবের বার্ষিক বড়খানা-তেও হাজির হতাম। বাবা এবং পিসতুতো দাদা দু’জনেই ইন্ডিয়া ক্লাবের হয়ে খেলেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ০৩:৫৭
Share:

ছোটবেলায় বাবা-জেঠুর হাত ধরে ইন্ডিয়া ক্লাবের মাঠে যেতাম। ক্লাবের বার্ষিক বড়খানা-তেও হাজির হতাম। বাবা এবং পিসতুতো দাদা দু’জনেই ইন্ডিয়া ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ছিলেন সচিব, সহ-সভাপতি। আমিও সাতের দশকে ইন্ডিয়া ক্লাবের হয়ে খেলেছি। ২০০২ সাল থেকে সচিবের দায়িত্বে আছি। কাজেই ইন্ডিয়া ক্লাবের প্রতি আমার ভালবাসা ‘মোর দ্যান দ্য পোপ’। ১৯০০ সালে জাতীয় ভাবাবেগেই ইন্ডিয়া ক্লাবের জন্ম। খেলাধূলার সঙ্গে যুক্ত ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের ভাবাদর্শ। প্রথম দিকে ইন্ডিয়া ক্লাবকে সাহেবদের সঙ্গে খেলতে হতো। খেলার দিনে মনে হতো স্বাধীনতার লড়াই চলছে। খালি পায়ে ‘বুট’-এর বিরুদ্ধে খেলে উপত্যকাবাসীকে তাঁরা হীনম্মন্যতা-মুক্ত করেছেন।

Advertisement

সেই যুগে আইএফএ শিল্ড ফুটবল এবং বেটন কাপ হকিই ছিল সব চেয়ে মর্যাদার। ১৯১৭ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে চার বার ইন্ডিয়া ক্লাব শিল্ডে খেলে। গোরা-দের সঙ্গে খালি পায়ে টক্কর দিয়ে আসে। ১৯৩১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত নির্মল শিল্ড ফুটবলে রানার আপ হয়। উপত্যকার প্রথম ফুটবল-সম্মান।

১৯১৯ সালে ইন্ডিয়া ক্লাব ডি এন দত্ত কাপের মাধ্যমে হকি খেলা শুরু করে। পরের বছরই বেটন কাপে অংশ নেয়। আর ১৯২৩ সালে গ্রিয়ার স্পোর্টিং ক্লাব যাঁর নেতৃত্বে কলকাতা হকি লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেই আশুতোষ দত্ত ছিলেন ইন্ডিয়া ক্লাবেরই খেলোয়াড়। খেলাধূলার এমন কোনও বিভাগ নেই যাকে ইন্ডিয়া ক্লাব অবহেলা করেছে। এক সময় ওয়াটার পোলো খেলা হতো গোলদীঘিতে। ছিল ক্লাবের নিজস্ব টেনিস কোর্টও।

Advertisement

ইন্ডিয়া ক্লাবের ইতিহাস বললে ‘ক্যাপ্টেন’ নলিনীমোহন গুপ্ত-কে বাদ দিয়ে তা হতে পারে না। ৩০ বছর ক্লাবের ক্যাপ্টেন ছিলেন। শুধু খেলাই নয়, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্যও তিনি স্কোয়াড গঠন করেছিলেন। উৎসবে, সাংস্কৃতিক কাজকর্মে উপস্থিত থাকত এই স্কোয়াড। অগ্নিকাণ্ডে, বন্যাত্রাণে তাদের উপস্থিতি ছিল। কলেরা-বসন্তের মহামারীতেও তাঁদের ডাক পড়ত। বেওয়ারিশ, অস্পৃশ্যদের শব বহনেও কাঁধ দিত এই স্কোয়াডের সদস্যরাই। অসমের তদানীন্তন চিফ কমিশনার স্যার আর্কডেল আর্লের কাছে জমির আবেদন করেছিল ইন্ডিয়া ক্লাব। আর্ল শর্ত দিলেন, ক্যাপ্টেনকে যুবকদের নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈন্যদলে যোগ দিতে হবে। অকুতোভয় ক্যাপ্টেন ২০ জন যুবককে নিয়ে ইন্ডিয়ান ডিফেন্স ফোর্সেস-এ যোগ দেন এবং কলকাতায় ৬ মাসের মিলিটারি ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ফিরে আসার পর ইন্ডিয়া ক্লাব ১৫ বিঘা জমির বন্দোবস্ত পায়, যা পরে আর্ল গ্রাউন্ড নামে পরিচিতি লাভ করে।

স্বাধীনোত্তর যুগের শুরুতে অর্থ সঙ্কটের কারণে ক্লাবের দুর্বার গতি ব্যাহত হয়। তবু ১৯৫৪ সালে গুয়াহাটির বরদলৈ ট্রফিতে রানার আপ হয় তারা। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ক্লাব ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়ায়। ১৯৭৮ সালে বর্ণাঢ্য প্ল্যাটিনাম জুবিলি উৎসব পালিত হয়। ১৯৮০ সালে শৈলেন মান্নার তত্ত্বাবধানে মোহনবাগান দল শিলচরে আসে। মণিপুর এবং মিজোরামের বিরুদ্ধে দু’টি প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন করেছিল ইন্ডিয়া ক্লাব। ওই ম্যাচ দু’টিকে ঘিরে বরাক উপত্যকার ক্রীড়া ইতিহাসে বিরাট উন্মাদনা দেখা দেয়। সতীন্দ্রমোহন দেব স্টেডিয়ামের ১২ হাজার দর্শকাসনের সব ক’টি টিকিট ম্যাচের দু’দিন আগেই শেষ হয়ে যায়। আমরা যারা আয়োজক ছিলাম, নিরাপত্তার জন্য অগত্যা অন্তরালে যেতে বাধ্য হই। ২০০০ সালে ক্লাব শতবর্ষ পালন করে।

গত শতাব্দীর প্রথম দশক যদি হয় ক্যাপ্টেন এন এম গুপ্তের, তাহলে শেষের দশক অবশ্যই সন্তোষমোহন দেবের। ‘রানাদা’ গর্ব করে বলেন, ‘‘আই অ্যাম দ্য প্রোডাক্ট অব ইন্ডিয়া ক্লাব।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকার সময়ে তিনি আন্তর্জাতিক মানের ইন্ডোর স্টেডিয়ামের মতো মেগা-প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। ১৯৯৩ সালের ২৫ এপ্রিল তার শিলান্যাসও হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে স্টেডিয়াম নির্মাণে অর্থসংগ্রহে অগ্রণী ভূমিকা নেন। নিজের সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে ৫ কোটি টাকা দেন। ওই টাকায় প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে স্টেডিয়ামের অসমাপ্ত কাজের এস্টিমেট তৈরি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন পেলে কাজ শেষ করা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন