টি-টোয়েন্টিও হল না, সিরিজ জয় ভারতের

ওয়ান ডে ক্রিকেটে এত কম রানে অল আউট হওয়াটা ক্যারিবিয়ানদের কাছে ইদানীং নতুন কিছু না। পাঁচ বছর আগে পারথে, সাত বছর আগে চট্টগ্রামে একশোও তুলতে পারেননি তাঁরা। এমনকি কিনিয়া, জিম্বাবোয়েও একশোর কম রানে আউট করে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩২
Share:

সফল: ৪ শিকার জাড্ডুর।পিটিআই

সকাল থেকে শহরের আকাশের মুখ ভার। আগের সন্ধে থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। তাই নীল পোশাকের জনস্রোতে প্রায় গা ভাসিয়ে দিয়ে গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামে প্রবেশ করার সময় আশঙ্কা ছিল, বৃষ্টির জন্য না ম্যাচে কাটছাঁট হয়। কাটছাঁট সেই হলই। কিন্তু তা ভারতীয় বোলারদের গোলাবর্ষণে। ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণে। দিন-রাতের ম্যাচ সাড়ে তিন ঘণ্টাতেই শেষ! সিরিজও ৩-১ জিতে নিল ভারত।

Advertisement

ওয়ান ডে ক্রিকেটে এত কম রানে অল আউট হওয়াটা ক্যারিবিয়ানদের কাছে ইদানীং নতুন কিছু না। পাঁচ বছর আগে পারথে, সাত বছর আগে চট্টগ্রামে একশোও তুলতে পারেননি তাঁরা। এমনকি কিনিয়া, জিম্বাবোয়েও একশোর কম রানে আউট করে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে কখনও একশো বা তার কমে অল আউট হয়নি ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েডের দেশ। বৃহস্পতিবার ‘ইশ্বরের নিজের দেশ’-এ যা হল, সেটা নজিরবিহীন। দিন-রাতের ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়েও ৫০ ওভার হল না।

ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরা, খলিল আহমেদ, কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাডেজারা সোয়া দু’ঘণ্টার বেশি উইকেটে দাঁড়াতেই দিলেন না শেই হোপ, শিমরন হেটমায়ারদের। সবাই মিলে দুশো বলও খেলতে পারেননি। জাডেজা নিলেন চার উইকেট, বুমরা এবং খলিল দু’টি করে। নিখুঁত লাইন ও লেংথে বল রেখে একের পর এক ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিলেন তাঁরা। ভারতকে সিরিজ জেতার জন্য জেসন হোল্ডাররা দেন ১০৫ রানের লক্ষ্য, টি-টোয়েন্টি হলেও যা দেখে হয়তো লজ্জা পেতেন বিরাটরা। রানটা তুলতে ভারত ১৫ ওভারও নিল না। এর মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নেন রোহিত। ওইটুকুই আনন্দ পেলেন দর্শকেরা।

Advertisement

ঘরের মাঠে টানা ষষ্ঠ বার ওয়ান ডে সিরিজ জয়ের ট্রফি তোলার ঘণ্টা দেড়েক পরেও গ্যালারিতে দেখা গেল বহু মানুষকে। তাঁদের আশ মেটেনি যে। তার ওপর যাঁকে নিয়ে এত হইচই, এত কাট-আউট, যাঁর নামের পোস্টারে, জার্সিতে ছয়লাপ গ্যালারি, সেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারতের হয়ে দশ হাজার ওয়ান ডে রান পূরণ করাও দেখা হল না। তাই মন খারাপ ধোনি-ভক্তদের। তিনি দলের বাসে ওঠার সময় তাই আওয়াজ উঠল, ‘কাম ব্যাক ধোনি’।

আরব সাগরের তীরে কেরলের রাজধানীতে এ দিন ছিল দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ। গত বছর ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড টি-টোয়েন্টিতে বৃষ্টি বাদ সেধেছিল। এ বার দেখা গেল ভারতীয় বোলারদের তাণ্ডব। আর রোহিত শর্মা ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে যে গিয়ার তোলেন, সেই গিয়ারেই ব্যাট করে গেলেন। এ দিন দলের আস্কিং রেট যে দুই ছিল, তা কে বোঝাবে তাঁকে? ছয়ের গড়েই রান তুলে গেলেন। পাঁচটা চার ও চারটি ছয়। উল্টোদিক থেকে বিরাট কোহালি দেখলেন রোহিতের ৫৪ বলে ৬২ রানের ইনিংস। নিজে করলেন ৩৩। সংক্ষিপ্ত ম্যাচ নিয়ে হতাশ কেরল ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তাকে মজা করে বলতে শোনা গেল, ‘‘গত বছর হয়েছিল ‘রেন-কার্টেইলড ম্যাচ’, এ বার হল ‘রান-কার্টেইলড’ ম্যাচ।’’

হোপরা ব্যাট করার সময় মাঝে-মাঝে মনে হচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটা যেন সৌরশক্তিতে চলে। যতক্ষণ আকাশে সূর্য, ততক্ষণ তাঁরা ফর্মে। সূর্য মেঘে ঢাকতেই তাঁদের শক্তিও উধাও। বৃহস্পতিবার এই মেঘ-রোদ্দুরের লুকোচুরির মধ্যেই চলতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আসা যাওয়ার পালা। মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারলেন। বাকিরা সবাই মিলে ৮০ বলে ৩১ রান তোলেন! পোর্ট অব স্পেনে ১৯৯৭-এ কোর্টনি ওয়ালশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১২১ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টিতে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেও সচিন তেন্ডুলকর ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রাই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছিলেন দলকে। কার্টলে অ্যামব্রোস, ওয়ালশ, ইয়ান বিশপদের মতো বিধ্বংসী বোলাররাও তাঁদের আউট করতে পারেননি।

এই মাসে যে ঘটনার ২৫ বছর পূর্তি, সেই হিরো কাপের ফাইনালেও তো ১২৩ রানে ব্রায়ান লারাদের অলআউট করে দিয়েছিলেন অনিল কুম্বলেরা। দুই ম্যাচেই যিনি মাঠে ছিলেন, সেই কার্ল হুপার এ দিনও মাঠে ছিলেন টিভি ধারাভাষ্যকার হিসেবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস শেষ হওয়ার পরে বললেন, ‘‘আমাদের দল এত খারাপ ছিল না। এর চেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স আমাদের দেশের ক্রিকেটে আর হয়েছে বলে মনে হয় না।’’ দলের কোচ স্টুয়ার্ট ল অবশ্য বললেন, ‘‘আমাদের ছেলেদের চাপ সামলে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করে দেখাতে হবে। এই জায়গাটাতেই ঘাটতি হচ্ছে ওদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন