হরভজনের সতর্কবার্তা: ঘূর্ণি বুমেরাং হয়ে যেতে পারে

বৃষ্টি হলেও বল ঘোরার আশায় ভারত

কেউ বলছেন, ঘরের মাঠে র‌্যাঙ্ক টার্নার দেওয়ার অভ্যাস এ বার বন্ধ করা হোক। কারও আশা, প্রথম টেস্টে টার্নার পাবে তাঁদের টিম। কেউ ভাবছেন, দলীপ ট্রফির দুটো বড় ইনিংসের ছন্দ আন্তর্জাতিক স্তরেও থাকবে কি না। কারও ভবিষ্যদ্বাণী, ভারতের এই টেস্ট দল দীর্ঘকাল বিশ্বসেরার মুকুট নিজেদের দখলে রাখবে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share:

শিখর ধবন। গ্রিন পার্কের ড্রেসিংরুমে একটু বিশ্রাম। ছবি টুইটার

কেউ বলছেন, ঘরের মাঠে র‌্যাঙ্ক টার্নার দেওয়ার অভ্যাস এ বার বন্ধ করা হোক।

Advertisement

কারও আশা, প্রথম টেস্টে টার্নার পাবে তাঁদের টিম।

কেউ ভাবছেন, দলীপ ট্রফির দুটো বড় ইনিংসের ছন্দ আন্তর্জাতিক স্তরেও থাকবে কি না।

Advertisement

কারও ভবিষ্যদ্বাণী, ভারতের এই টেস্ট দল দীর্ঘকাল বিশ্বসেরার মুকুট নিজেদের দখলে রাখবে।

ঘরের মাঠে তেরোটা টেস্ট— বিরল এই ক্রিকেট সূচি শুরুর আগে সব মিলিয়ে জমজমাট দেশের ক্রিকেট পরিবেশ।

সাম্প্রতিক অতীতে ভারতে যে ডিজাইনার উইকেট তৈরির ধারা চলে আসছে, হরভজন সিংহ চান এ বার সেটা বদলাক। তিনি মনে করেন, বিরাট কোহালি আর অনিল কুম্বলের সামনে দারুণ একটা সুযোগ রয়েছে, ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগ সূচনার। যেখানে ঘরের মাঠে টেস্ট জেতার জন্য র‌্যাঙ্ক টার্নারের দরকার পড়বে না।

‘‘গত চার-পাঁচ বছরে যা দেখেছি, আগের টিম ম্যানেজমেন্ট এমন পিচ পছন্দ করত যেখানে তিন দিনেই টেস্ট শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু অনিল ভাই আর বিরাট পজিটিভ মনোভাবের মানুষ। যারা ভাল টেস্ট পিচে খেলতে বেশি পছন্দ করবে। যে উইকেটে চতুর্থ দিনের শেষে বা পঞ্চম দিন লাঞ্চের পর ম্যাচের ফলাফল ঠিক হবে,’’ এ দিন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন ভারতীয় টেস্ট দলের বাইরে থাকা হরভজন।

হরভজন জাতীয় দলে থাকতে দেশের মাটিতে বেশির ভাগ সময় টার্নারই পেতেন। কিন্তু এখন তাঁর এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা, ‘‘আড়াই-তিন দিনে টেস্ট জিতে আমাদের কি কোনও লাভ হচ্ছে? এটা কি আমাদের ব্যাটসম্যানদের প্রতিও সুবিচার হচ্ছে? ঘরের মাঠে শেষ সিরিজে ওরা দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনারদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট স্ট্রাগল করেছিল।’’ সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘কোটলায় শেষ টেস্টে অজিঙ্ক রাহানে দারুণ ব্যাট করেছিল। বিরাটও রান পেয়েছিল। কিন্তু ওটা বাদে আমাদের ব্যাটসম্যানরাও যথেষ্ট ভুগেছে। র‌্যাঙ্ক টার্নার কিন্তু বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। নাগপুরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ম্যাচে যেমন হল। ও রকম পিচে ইশ সোধি বা মিচ স্যান্টনারকে সামলানো কঠিন।’’

হরভজন তাই স্পোর্টিং উইকেটের পক্ষে। ‘‘ভাল পিচে আগে ব্যাট করে চারশো তুলতে পারলে কিন্তু ওরা আমাদের হারাতে পারবে না। প্লেয়ার ধরে ধরে দেখলে আমরা অনেক ভাল টিম। স্পোর্টিং উইকেটেও আমরা ৩-০ জিততে পারি,’’ বলছেন হরভজন। যাঁর মতে র‌্যাঙ্ক টার্নার ভারতীয় স্পিনারদেরও খুব সাহায্য করে না। ‘‘টার্নারে উইকেট আসে ঠিকই। কিন্তু মাঝে মাঝে বোলারারও বুঝতে পারে না, বলটা কোথায় ফেলবে। বা পড়ে কোন দিকে যাবে। কোনটা ঘুরবে, কোনটা লাফাবে, বোঝা যায় না।’’

এ সবের পরেও অবশ্য কানপুরে টিম ইন্ডিয়া টার্নার চাইছে। রবিবার বৃষ্টিতে ট্রেনিং করতে পারেনি টিম। এ দিনও গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে রাহানে যা বললেন, তাতে বোঝা গেল উইকেট নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা এখনও টিমের নেই। ‘‘এখানে এমনিতে লো, স্লো উইকেট দেওয়া হয়। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে যেমন ছিল। ম্যাচের প্রতি দিন উইকেটের চরিত্র পাল্টে যায়, তাই প্রত্যেক দিন নতুন করে প্ল্যান করতে হবে,’’ বলে রাহানে যোগ করেছেন, ‘‘আশা করছি টার্ন থাকবে। ভারতের পিচ স্পিনারদের সাহায্য করে। সেটাই আমাদের শক্তি। আর শক্তির বিচারেই খেলতে হবে। যদিও আমি এখনও জানি না, পিচ ঠিক কী রকম হবে।’’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে চারটের মধ্যে দুটো ম্যাচ তিন দিনে শেষ হয়ে গিয়েছিল। যে ট্রেন্ডের বিরোধী হরভজন। আর যেটা নিয়ে রাহানে বলেছেন, ‘‘আমরা এটা ভেবে কখনও নামি না যে, এই টেস্টটা তিন দিন বা চার দিনের মধ্যে শেষ করতেই হবে। আমরা শুধু জিততে নামি।’’

রাহানের মনে হচ্ছে, তেরো টেস্টের মরসুমের মেজাজটা ঠিক করে দেবে কানপুর টেস্ট। আর ভিভিএস লক্ষ্মণের মনে হচ্ছে, ‘‘ট্রেন্ডসেটার’’ কোহালির নেতৃত্বে রাহানেদের এই টিম বহু দিন টেস্ট বিশ্বে রাজত্ব করবে। ‘‘এই টিমটার ক্ষমতা আছে টেস্টে এক নম্বর হওয়ার। আর টানা সময় ধরে সেরার মুকুট ধরে রাখার,’’ বলেছেন লক্ষ্মণ। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘টিমের বেশির ভাগের টেস্ট কেরিয়ার সবে শুরু হয়েছে। কিন্তু সবাই বিদেশে খেলে অভিজ্ঞ। বিদেশে যত বেশি খেলা যায়, প্লেয়ার হিসেবে তত বেশি উন্নতি করা যায়। এই টিমের প্লেয়াররা যেটা করেছে। ক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে শুরু করলে অনেক দিন পর্যন্ত ওরা টেস্টে শাসন করবে।’’

এ ছাড়াও লক্ষ্মণ মনে করেন, টিম কোহালি সঠিক সময় ‘পিক’ করছে। তিনি মনে করেন, কোহালির হাতে প্রচুর বিকল্প আছে উইকেট বুঝে টিম নামানোর। বিকল্পের মধ্যে অন্যতম, চেতেশ্বর পূজারা। দলীপে ১৬৬ এবং অপরাজিত ২৫৬-র পর যিনি আত্মবিশ্বাসের শিখরে। ‘‘টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে দলীপে ডাবল সেঞ্চুরিটা দরকার ছিল। ওই ইনিংস দুটো নিউজিল্যান্ড সিরিজে আমাকে সাহায্য করবে। মনে হয় না ব্যাটিং নিয়ে আমাকে আর ভাবতে হবে,’’ বোর্ডের ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন আঠাশ বছরের পূজারা।

তিনি আরও জানিয়েছেন, তাঁদের টিমের লক্ষ্য হচ্ছে টেস্টে এক নম্বরের সিংহাসন পুনর্দখল। জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক টেস্ট-সাফল্য তাঁদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। জানিয়েছেন, ঘরের মাঠের ফায়দা তোলার পাশাপাশি বিপক্ষের আক্রমণের পাল্টা দেওয়াও তাঁদের আয়ত্তে।

জিভে জল আনা টেস্ট যুদ্ধের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তের জন্য এর চেয়ে উপাদেয় আর কী হতে পারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন