অন্য ময়দান: যুব বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের বোধন। প্রথম বার কোনও বিশ্বকাপের আসর বসেছে ভারতের মাটিতে। নানা আবেগ, নানা রং থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
শুক্রবারের রাজধানীতে সে সবই ছিল। কখনও দেশের প্রধানমন্ত্রীকে মাঠের মাঝখানে রেখে পঞ্চাশ হাজার দর্শক জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছেন ভারতের কোনও ফুটবল ম্যাচে, আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। ভারতের মাটিতে একটা যুব বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগের ম্যাচের জন্য দেশের পতাকা হাতে উপচে পড়ছে দর্শক। এমন দৃশ্যও তো কখনও দেখা যায়নি।
শুরুতে সেই জাতীয় পতাকা দোলানো দেখে কে ভাবতে পেরেছিল, শেষটা হবে সেই হতাশা দিয়েই! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দল হারিয়ে দিয়ে গেল ৩-০। যাঁরা অঘটনের আশা দেখছিলেন যে, কোনও ভাবে যদি একটা ড্র-ও করে ফেলা যায়, আশাভঙ্গ হয়েই ফিরতে হল তাঁদের।
আরও পড়ুন: ভারতের প্রথম ম্যাচ দেখে কী বললেন বিশেষজ্ঞরা? দেখুন ভিডিও
ফিফার নিয়মে কোনও অনুষ্ঠান করার রীতি নেই অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপে। তাই আনুষ্ঠানিক নাচা-গানা ছিল না। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ফিফার লোকেদের সঙ্গে এবং দেশের প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে বসে খেলা দেখলেন প্রথম তিরিশ মিনিট। তত ক্ষণে অবশ্য ভারত পেনাল্টিতে প্রথম গোল খেয়ে গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের ফুটবলারদের সঙ্গে হাত মেলালেন। আদর করলেন গাল টিপে। ফিরে যাওয়ার পথে ভারতীয় দলের রিজার্ভ বেঞ্চের কাছে গিয়ে পর্তুগীজ কোচ লুইস নর্টন দে মাতোস-কে বলেছেন, ‘‘আমি খেলা দেখব গ্যালারিতে বসে। সাহস নিয়ে খেলুন, দেশবাসীর শুভেচ্ছা রয়েছে আপনাদের সঙ্গে।’’
এর মধ্যেই ঘটে গেল এক অভাবনীয় কান্ড। দেশের প্রাক্তন অলিম্পিক্স ও এশিয়ান গেমস অধিনায়কদের সংবর্ধনার আয়োজন ছিল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর এবং ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেলের উপস্থিতিতে হঠাৎ ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের শাল আর স্মারক নিয়ে গেলেন অন্য একজন— মগন সিংহ। প্রধানমন্ত্রী স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরোনোর সময় বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভাস্করের হাতে স্মারক, শাল এবং পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে দিলেন বটে, তবে দুই প্রাক্তন অধিনায়ককেই হতাশ দেখাল।
কী হয়েছিল ঘটনা? তাঁর দুই ছাত্র আই এম বিজয়ন আর ভাইচুং ভুটিয়া হুইল চেয়ারে করে নিয়ে এলেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-কে। পি কে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে স্মারক ও শাল নেওয়ার পর তাঁর হাত জড়িয়ে ধরলেন। একে একে ডাকা হতে থাকল বাকিদেরও। মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ঘোষক নাম ঘোষণা করলেন সৈয়দ নইমুদ্দিনের। ডাকা হলো ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়-কে। কিন্তু ভাস্করকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এগিয়ে গেলেন মগন সিংহ। ভাস্কর হতবাক। বললেন, ‘‘কী বলব? ওর তো নামই ডাকেনি তখনও।’’
ঐতিহাসিক দিনে এই ঘটনা চোনা ফেলে দিয়ে গেল পুরো অনুষ্ঠানে।