Yashasvi Jaiswal

গৃহহীন ফুচকা বিক্রেতার পাক-সংহার

মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার পোচেস্ট্রুমে যুব বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিল ভারত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:২৪
Share:

১১৩ বলে ১০৫ রানে অপরাজিত যশস্বী(ডান দিকে) ও ৯৯ বলে ৫৯ রানের যোগ্য সঙ্গত দিব্যাংশের। —ফাইল চিত্র।

একটা সময় মাথার উপরে ছাদ ছিল না। জীবন যুদ্ধের রসদ সংগ্রহ করার জন্য কখনও কখনও ফুচকা পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। সেই যশস্বী জয়সওয়ালের ব্যাটের কাছে হার মানতে হল পাকিস্তানকে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছে গেল ভারত।

Advertisement

মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার পোচেস্ট্রুমে যুব বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিল ভারত। প্রথমে বোলারদের দাপটে পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১৭২ রানে। এর পরে যশস্বী এবং দিব্যাংশ সাক্সেনার দাপটে কোনও উইকেট না হারিয়ে, প্রায় ১৫ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় প্রিয়ম গর্গের দল। ১০৫ রানে অপরাজিত থাকেন যশস্বী। দিব্যাংশের সংগ্রহ অপরাজিত ৫৯। ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন যশস্বী।

এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুরন্ত খেলে চলেছেন যশস্বী। তাঁর পাঁচটি ইনিংসে রান উঠেছে যথাক্রমে ৫৯, অপরাজিত ২৯, অপরাজিত ৫৭, ৬২ এবং অপরাজিত ১০৫। ১১ বছর বয়সে যখন উত্তরপ্রদেশ থেকে মুম্বইয়ে এসেছিলেন যশস্বী, তখন থাকারও কোনও জায়গা ছিল না। কাকার বাড়িতে দিন কয়েক থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হয়েছিল তাঁকে। কারণ, কাকার বাড়িতে জায়গা হচ্ছিল না। গৃহহীন যশস্বী তখন থাকতে শুরু করেন মুম্বইয়ের স্থানীয় এক ক্লাব তাঁবুতে। ঘুম হত না, বাইরের গাড়ির আওয়াজে। টাকা জোগাড় করার জন্য মেলায় ‘পানিপুরি’ (ফুচকা) বিক্রি করতে হয়েছে। যশস্বী অনেক বারই বলেছেন, ‘‘মেলায় যখন বন্ধুরা আমার থেকে পানিপুরি কিনতে আসত, খুব লজ্জা লাগত।’’ আজ যশস্বীর দাপটে ঘুম উড়ে যাচ্ছে বোলারদের। লজ্জা নয়, পাকিস্তান-বধের পরে সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে তিনি যখন নিজস্বী তুলছেন, তখন যশস্বীর চোখমুখে ধরা পড়ছে প্রচ্ছন্ন গর্ব। অবশ্য যশস্বীই এখন শুধু গর্বিত নন, তাঁকে নিয়ে গর্ব আজ দেশেরও।

Advertisement

উৎসব: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য অপেক্ষা আর মাত্র একটি ম্যাচের। মঙ্গলবার পোচেস্ট্রুমে দুর্দান্ত জয়ের পরে এ ভাবেই নিজস্বী তুলে উচ্ছ্বাস অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেদের। টুইটার

যশস্বীকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও। ভিভিএস লক্ষ্মণ যেমন টুইট করেছেন, ‘‘যশস্বীর ধীরস্থির মনোভাব দারুণ লাগল। বোলাররাও কখনও চাপ আলগা হতে দেয়নি। সহজ জয় পেল ভারত। টানা তিন বার ফাইনালেও উঠে গেল।’’

ম্যাচের শুরু থেকেই চাপের মধ্যে ছিল পাকিস্তান। ৩৪ রানের মধ্যে তাদের দু’উইকেট পড়ে যায়। হায়দার আলি এবং রোহেল নাজির মিলে খেলাটা ধরার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রবি বিষ্ণোইয়ের অসাধারণ ক্যাচ হায়দারকে প্যাভিলিয়ানে পাঠানোর পরে পাকিস্তান লড়াই থেকে হারিয়ে যায়। ভারতের হয়ে বাঁ হাতি পেসার সুশান্ত মিশ্র তিনটি উইকেট পান। রবি এবং কার্তিক ত্যাগী দুটো করে উইকেট নিয়েছেন।

ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই একটা চাপা উত্তেজনার আঁচ। যে কারণে হয়তো এই ম্যাচের উপরে প্রাক্তন ক্রিকেটাররা যেমন নজর রেখেছিলেন, তেমনই রেখেছিলেন বলিউডের মহাতারকারাও। ভারত ফাইনালে যেতে না যেতেই অমিতাভ বচ্চনের টুইট, ‘‘ইন্ডিয়া...ইয়ে!!! অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে দিল ভারত। আমাদের ওপেনিং জুটিই ওদের তোলা রানের চেয়ে বেশি স্কোর করে দিল। দারুণ খেলেছ ছেলেরা। অনেক, অনেক অভিনন্দন। তোমরা এ বার ফাইনালে চলে গিয়েছ। এ বার ট্রফিটা জিতে ফেরো।’’ বীরেন্দ্র সহবাগ আবার কম কথার মানুষ। ভারতের জয়ের একটা ছবি টুইট করে বীরু লিখেছেন, ‘‘এ তো এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’’

পাকিস্তানকে হারানোর পরেও ভারতীয় দল উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে রাজি নয়। দলের অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গ ম্যাচের পরে বলেছেন, ‘‘আমরা লক্ষ্যের দিকে আরও এক ধাপ এগোলাম। পাকিস্তানকে হারিয়ে আমরা অবশ্যই খুশি। কিন্তু আসল লক্ষ্য ট্রফি জেতা। আমরা ফাইনালটাকে আর একটা ম্যাচের মতোই দেখতে চাই।’’ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-নিউজ়িল্যান্ড সেমিফাইনালের পরে ঠিক হবে, ফাইনালে কাদের সঙ্গে খেলবেন যশস্বীরা।

প্রিয়মের কথায় যতটা পরিণত বোধ ধরা পড়েছে, ততটা পরিণত বোধ দেখা গিয়েছে ভারতের খেলাতেও। আবার ক্রিকেটীয় স্পিরিটের পতাকাও তুলে ধরেছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ভারতীয় পেসার সুশান্তের বলে মাথায় আঘাত পান পাক ব্যাটসম্যান হায়দার। আর সেই পেসার ছুটে এসে তুলে ধরার চেষ্টা করেন ব্যাটসম্যানকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। যার পরে প্রশংসিত হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মনোভাব।

ভারত শুধু এ দিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচই জেতেনি, জিতে নিয়েছে বিশ্ব জুড়ে ক্রিকেট অনুরাগীদের মনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন