বিশ্বকাপ নিয়ে নকশায় স্বস্তি ফিরবে দলে

এক জন ক্রিকেট দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ চেজমাস্টার। অন্য জন এই গ্রহের সব চেয়ে বড় ফিনিশার। আর এই দু’জনের যুগলবন্দি যখন মাঠে ফুল ফোটায়, তখন ভারত তো জিতবেই।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৬
Share:

অ্যাডিলেডে সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু করলেন বিরাট। গেটি ইমেজেস

এক জন ক্রিকেট দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ চেজমাস্টার। অন্য জন এই গ্রহের সব চেয়ে বড় ফিনিশার। আর এই দু’জনের যুগলবন্দি যখন মাঠে ফুল ফোটায়, তখন ভারত তো জিতবেই।

Advertisement

এক জনের ক্রিকেট কেরিয়ারে ৩৯তম ওয়ান ডে সেঞ্চুরি হয়ে গেল। যার মধ্যে ২৪টি এসেছে রান তাড়া করে। তিনি বিরাট কোহালি (১১২ বলে ১০৪)। অন্য জন শেষ ওভারে ছয় মেরে যে কত ম্যাচ জিতিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। তাঁর নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। মঙ্গলবার অ্যাডিলেডে ছয় উইকেটে জিতে ভারত ওয়ান ডে সিরিজ আপাতত ১-১ করে ফেলল। অস্ট্রেলিয়ার ২৯৮-৯ স্কোর চার বল বাকি থাকতে তুলে দিল ভারত। জয়ের পাশাপাশি পুরনো সেই ধোনিকে (৫৪ বলে অপরাজিত ৫৫) দেখতে পেয়েও দারুণ লাগছে। বিশ্বকাপের আগে যা ভারতের পক্ষে খুবই ভাল খবর। ভারতের বিশ্বকাপ অভিযানের নীল নকশায় ধোনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোহালি তাই অনেকটাই স্বস্তি পাবেন।

সিডনিতে আগের ম্যাচে যে ধোনিকে দেখেছিলাম, তার চেয়ে এই ধোনি অনেক বদলে গিয়েছেন। ম্যাচ প্র্যাক্টিস না পাওয়ার দরুন ধোনি, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো ক্রিকেটারদের বেশ আড়ষ্ট দেখাচ্ছিল। কিন্তু একটা ম্যাচের মধ্যেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। ধোনি ম্যাচ শেষ করে এলেন। ভুবনেশ্বর কুমার অসাধারণ বল করলেন। পরপর দু’বলে দুরন্ত ছন্দে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আর শন মার্শকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রানটা তিনশোর কমে আটকে দিলেন। শেষ তিন ওভারে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১৪ রান তুলল। ওই ১৫-২০ রান কম হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল শেষে।

Advertisement

ধোনির কথায় আসার আগে কোহালির ইনিংসটা নিয়ে বলতেই হবে। কোহালির ইনিংসটা সব ধ্রুপদী শটে ভরা। কোহালি এ দিন চোখ জুড়িয়ে দেওয়া দু’টো লেট কাট মারলেন। একটা ম্যাক্সওয়েলকে, আর একটা লায়নকে। লায়নের মারা শটটাকে আমরা ময়দানি ভাষায় বলি, ‘দৌড় করিয়ে বাউন্ডারি’। মানে ফিল্ডার বাউন্ডারি লাইন পর্যন্ত দৌড়েও বলটা থামাতে পারলেন না। জেসন বেহরেনডর্ফকে মারা একটা ছয়ও ভোলা যাবে না। মিডঅনের ওপর দিয়ে তুলে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিলেন কোহালি।

স্কোরকার্ড

অস্ট্রেলিয়া ২৯৮-৯ (৫০)
ভারত ২৯৯-৪ (৪৯.২)

অস্ট্রেলিয়া
ক্যারি ক ধওয়ন বো শামি ১৮ ২৭
ফিঞ্চ বো ভুবনেশ্বর ৬ ১৯
খোয়াজা রান আউট ২১ ২৩
মার্শ ক জাডেজা বো ভুবনেশ্বর ১৩১ ১২৩
হ্যান্ডসকম্ব স্টাঃ ধোনি বো জাডেজা ২০ ২২
স্টোইনিস ক ধোনি বো শামি ২৯ ৩৬
ম্যাক্সওয়েল ক কার্তিক বো ভুবনেশ্বর ৪৮ ৩৭
রিচার্ডসন ক ধওয়ন বো শামি ২ ৬
লায়ন ন. আ. ১২ ৫
সিডল ক কোহালি বো ভুবনেশ্বর ০ ১
বেহরেনডর্ফ ন. আ. ১ ১
অতিরিক্ত ১০
মোট ২৯৮-৯ (৫০)
পতন: ১-২০ (ফিঞ্চ, ৬.৬), ২-২৬ (ক্যারি, ৭.৪), ৩-৮২ (খোয়াজা, ১৮.৩), ৪-১৩৪ (হ্যান্ডসকম্ব, ২৭.২), ৫-১৮৯ (স্টোইনিস, ৩৬.৪), ৬-২৮৩ (ম্যাক্সওয়েল, ৪৭.৩), ৭-২৮৩ (মার্শ, ৪৭.৫), ৮-২৮৬ (রিচার্ডসন, ৪৮.৬), ৯-২৮৬ (সিডল, ৪৯.১)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ১০-০-৪৫-৪, মহম্মদ শামি ১০-০-৫৮-৩, মহম্মদ সিরাজ ১০-০-৭৬-০, কুলদীপ যাদব ১০-০-৬৬-০, রবীন্দ্র জাডেজা ১০-০-৪৯-১।

ভারত
রোহিত ক পিটার বো স্টোইনিস ৪৩ ৫২
শিখর ক খোয়াজা বো বেহরেনডর্ফ ৩২ ২৮
কোহালি ক গ্লেন বো রিচার্ডসন ১০৪ ১১২
রায়ডু ক স্টোইনিস বো ম্যাক্সওয়েল ২৪ ৩৬
ধোনি ন. আ. ৫৫ ৫৪
কার্তিক ন. আ. ২৫ ১৪
অতিরিক্ত ১৬
মোট ২৯৯-৪ (৪৯.২)
পতন: ১-৪৭ (ধওয়ন, ৭.৪), ২-১০১ (রোহিত, ১৭.৫), ৩-১৬০ (রায়ডু, ৩০.৪), ৪-২৪২ (কোহালি, ৪৩.৪)।
বোলিং: জেসন বেহরেনডর্ফ ৮.২-১-৫২-১, জাই রিচার্ডসন ১০-০-৫৯-১, পিটার সিডল ৮-০-৫৮-০, নেথান লায়ন ১০-০-৫৯-০, মার্কাস স্টোইনিস ৯-০-৪৬-১, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৪-০-১৬-১।

অম্বাতি রায়ডু খুব ছেলেমানুষের মতো ম্যাক্সওয়েলকে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিলেন। আর তার পরেই সেই যুগলবন্দি। কোহালি এবং ধোনির। এই জুটির যে জিনিসটা আলাদা করে বলতে হবে, তা হল, রানিং বিটউইন দ্য উইকেটস। অ্যাডিলেডে প্রচণ্ড গরম ছিল। তার ওপর ভারত ফিল্ডিং করেছে আগে। নিজে উইকেটকিপিং করতাম বলে জানি, এই আবহাওয়ায় কাজটা কতটা পরিশ্রমসাধ্য। ধোনি ৫০ ওভার কিপিং করার পরে ব্যাট করতে নামলেন ৩১ নম্বর ওভারে। সেখান থেকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। বিশ্বকাপের আগে এটা কিন্তু দারুণ ইঙ্গিত।

কোহালির ফিটনেস সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। ধোনি এখন অতটা ফিট না হলেও এই গরমে সমান তালে খুচরো রান নিয়েছেন। ধোনি একটাও চার মারেননি। দুটো ছয় মেরেছেন। যার মধ্যে একটা শেষ ওভারে। বাকিটা এক, দুই রানে। অনেকেই হয়তো জানেন না, অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে কতটা ফিটনেস ট্রেনিং করে গিয়েছেন ধোনি। টেনিস খেলেছেন, জিম করেছেন। সেই ট্রেনিংয়ের ফলই পাচ্ছেন।

শেষ দিকে ধোনির চাপ অনেকটা কমিয়ে দিলেন দীনেশ কার্তিক (১৪ বলে ২৫ ন.আ.)। ঠিক সময়ে দু’টো বাউন্ডারি মারলেন, খুচরো রান নিলেন। ফলে শেষ তিন-চার ওভারে আস্কিং রেট কখনওই আয়ত্তের বাইরে যায়নি। কার্তিকের ওয়ান ডে কেরিয়ার পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে কেউ মুগ্ধ হবেন বলে মনে হয় না। প্রায় ৯০টা ম্যাচ খেলে দিলেন, একটিও সেঞ্চুরি নেই। সর্বোচ্চ ৭৯। কিন্তু গত বছর থেকে কার্তিকের ভূমিকাটা বদলে গিয়েছে দলে। ওকে এখন পরের দিকে নামিয়ে ম্যাচ শেষ করার দায়িত্ব দিচ্ছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। যাতে ধোনির ওপর চাপটা কম থাকে।

মঙ্গলবার অ্যাডিলেডে কার্তিক ওঁর ভূমিকাটা নিখুঁত ভাবে পালন করলেন। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখছি, কার্তিকের ১৪ বলে অপরাজিত ২৫ রানের ইনিংসে আছে ছ’টা এক রান, চারটে দু’রান, একটা তিন, দু’টো চার। ডট বল (যে বলে রান হয় না) খেলেছেন মাত্র একটা। কার্তিকের এই ইনিংস অনেকটাই চাপ কমিয়ে দেয় ধোনির ওপর থেকে। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে বলা যায়, কার্তিকের ফর্মও স্বস্তি দেবে কোহালিকে।

অ্যাডিলেডে ভারতের ফিল্ডিংও নজরে পড়ার মতো হয়েছে। দু’টো উদাহরণ দিতে চাই। প্রথমটা, উসমান খোয়াজার রান আউট। কভার পয়েন্ট অঞ্চলে বল ধরে এক থ্রোয়ে উইকেট ভেঙে দেন জাডেজা। ওই সময় তিনি মাত্র একটা স্টাম্প দেখতে পাচ্ছিলেন। দ্বিতীয়টা, পিটার সিডলের ক্যাচ। ভুবনেশ্বরের বলে সিডলের মারা শটটা ডিপ পয়েন্ট অঞ্চলে পড়ছিল। কোহালি বুলেটের মতো ছুটে এসে ক্যাচটা নিয়ে নেন। অন্য যে কোনও ফিল্ডার হলে ডাইভ দিতে হত ক্যাচটা ধরার জন্য। কিন্তু কোহালির গতি ওকে বলের কাছে নিয়ে আসে। এবং দুর্দান্ত ফিটনেস থাকায় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সমস্য়া হয়নি।

সিরিজ ফয়সালার ম্যাচ এ বার ১৮ তারিখ, মেলবোর্নে। ভারত ছন্দে এসে গিয়েছে। আমি কিন্তু ওয়ান ডে সিরিজ ভারতের পক্ষে ২-১ দেখছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন