দৌড়: ছুটছেন তিনি, ছুটছে ক্যাপ্টেন কোহালির রথ। এএফপি
৭ উইকেটে জয়ী ভারত
ম্যাচের সেরা মহম্মদ শামি
এই ভারতীয় দলটার পক্ষে হারাটা এখন হয়ে গিয়েছে দুর্ঘটনা, জেতাটা একটা অভ্যাস। মানে সকালে উঠে আমরা যেমন দাঁত মেজে, প্রাতরাশ খেয়ে কাজে যাই, তেমনই ভারতীয় দল মাঠে নামে আর ম্যাচ জিতে চলে আসে। একেবারে রুটিন মাফিক!
প্রথমে অস্ট্রেলিয়া এবং তার পরে দু’টো ম্যাচ বাকি থাকতেই নিউজ়িল্যান্ডে যে ভাবে ওয়ান ডে সিরিজ জিতল বিরাট কোহালিরা, তার পরে একটা বিশেষণ এই দলটার আগে বসাতেই হবে— অপ্রতিরোধ্য। আমি ১৯৪৮ সালে ডন ব্র্যাডম্যানের সেই ‘দ্য ইনভিন্সিবল্স’ দলকে দেখিনি। কিন্তু স্টিভ ওয়ের দলকে দেখেছি। যে দল টানা ১৬টা টেস্ট জিতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। স্টিভের সেই ভয়ঙ্কর আর অপ্রতিরোধ্য দলকে যেন ওয়ান ডে ক্রিকেটে ফিরিয়ে এনেছে কোহালিরা।
এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের কোনও দলে এ রকম বিধ্বংসী এবং ফর্মে থাকা প্রথম তিন ব্যাটসম্যান নেই, যেটা ভারতের আছে। রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন এবং কোহালি। ফর্মে থাকা এই ত্রয়ীর তুলনা হতে পারে সেই গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেনস আর ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে। অবশ্যই ওয়ান ডে ক্রিকেটের বিচারে।
ভারতের এই তিন জন একসঙ্গে ব্যর্থ হয়েছে, এ রকম ঘটনা খুব কমই আছে। সোমবার নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৪৩ তাড়া করতে নেমে ধওয়ন রান পায়নি কিন্তু বাকি দু’জন পেয়েছে। কোহালি তো এই নিউজ়িল্যান্ড সফরে তিনটে ম্যাচে ৪৫, ৪৩, ৬০ করে দিল। যে কোনও ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে খুব ভাল পরিসংখ্যান। কিন্তু ব্যাটসম্যানের নাম যদি কোহালি হয়, তা হলে এখানেই থেমে থাকতে চায় না আমাদের চাহিদা। মনে হয়, আহা রে, একটা সেঞ্চুরি হল না গোটা সিরিজে!
এই ম্যাচের পরে ভারত কিন্তু বিশ্বকাপের দলটা গুছিয়ে ফেলল। হার্দিক পাণ্ড্যকে নিয়ে এ ক’দিন এত বিতর্ক হচ্ছিল। একটা সময় মনে হচ্ছিল, বিশ্বকাপে ওকে রাখা হবে তো? সব বিতর্ক সরিয়ে, জেটল্যাগের তোয়াক্কা না করে, যে খেলাটা খেলল হার্দিক, তাতে ইংল্যান্ডের বোর্ডিং পাসটা ওর হাতে উঠেই গিয়েছে বলা যায়। প্রথমে শর্ট মিডউইকেটে ফিল্ডিং করার সময় উড়ে গিয়ে কেন উইলিয়ামসনের একটা অসাধারণ ক্যাচ। তার পরে দুই উইকেট। একটু মন্থর পিচে বল ‘হিট’ করে কোমরের উপরে তুলে ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলল। ভারতীয় দলের বাকি দুই পেসারও ঠিক একই কাজ করল। হার্দিককে দেখে মনে হল, বিতর্কের ক’দিন নিজেকে জিমে আর অনুশীলনে ডুবিয়ে রেখেছিল।
নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ভারতের আরও একটা বড় প্রাপ্তি হল। সাদা বলের ক্রিকেটে মহম্মদ শামিকে ফিরে পাওয়া। তৃতীয় ওয়ান ডে-তেও ম্যাচের সেরা শামি। ওঁর প্রথম স্পেল এবং সব মিলিয়ে ৪১ রানে তিন উইকেট নিউজ়িল্যান্ডকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। শামিকে এত ভাল ‘বোলিং ফিট’ আগে দেখিনি।
একটা দলের রিজার্ভ বেঞ্চ যতটা শক্তিশালী হয়, তাদের পারফরম্যান্সও ততটাই ভাল হয়। যেমন ভারতের হচ্ছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে বাইরে রেখেও অনায়সে ম্যাচ জিতল। অম্বাতি রায়ডু এ দিন খুলে খেলবেন বলে ঠিক করে। সাহসী ইনিংস খেলে গেল চার নম্বরে নেমে। দীনেশ কার্তিক আবারও ম্যাচ শেষ করে এল। আগের ম্যাচে দীনেশ খেলেনি।
কোহালি এই সিরিজে আর খেলবে না। ওকে বিশ্রাম দেওয়াটা ঠিক সিদ্ধান্ত। শেষ দু’টো ওয়ান ডে-তে শুভমন গিলকে দেখে নেওয়া উচিত। তেমন মহম্মদ শামিকেও দু’টো ম্যাচে বিশ্রাম দেওয়া যেতে পারে। বিশ্বকাপে কিন্তু এই ফিট শামিকে খুব দরকার।
স্কোরকার্ড
নিউজ়িল্যান্ড ২৪৩(৪৯)
ভারত ২৪৫-৩ (৪৩)
নিউজ়িল্যান্ড
গাপ্টিল ক কার্তিক বো ভুবনেশ্বর ১৩•১৫
মুনরো ক রোহিত বো শামি ৭•৯
উইলিয়ামসন ক হার্দিক বো চহাল ২৮•৪৮
টেলর ক কার্তিক বো শামি ৯৩•১০৬
ল্যাথাম ক রায়ডু বো চহাল ৫১•৬৪
নিকোলস ক কার্তিক বো হার্দিক ৬•৮
স্যান্টনার ক কার্তিক বো হার্দিক ৩•৯
ব্রেসওয়েল রান আউট ১৫•১৮
সোধি ক কোহালি বো শামি ১২•১২
বোল্ট ক শামি বো ভুবনেশ্বর ২•৪
ফার্গুসন ন. আ. ২•২
অতিরিক্ত ১১
মোট ২৪৩ (৪৯)
পতন: ১-১০ (মুনরো, ১.৬), ২-২৬ (গাপ্টিল, ৬.১), ৩-৫৯ (উইলিয়ামসন, ১৬.২), ৪-১৭৮ (ল্যাথাম, ৩৭.৩), ৫-১৯১ (নিকোলস, ৩৯.৩), ৬-১৯৮ (স্যান্টনার, ৪১.৩), ৭-২২২ (টেলর, ৪৫.১), ৮-২৩৯ (সোধি, ৪৭.৬), ৯-২৩৯ (ব্রেসওয়েল, ৪৮.১), ১০-২৪৩ (বোল্ট, ৪৮.৬)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ১০-১-৪৬-২, মহম্মদ শামি ৯-০-৪১-৩, যুজবেন্দ্র চহাল ৯-০-৫১-২, হার্দিক পাণ্ড্য ১০-০-৪৫-২, কুলদীপ যাদব ৮-০-৩৯-০, কেদার যাদব ৩-০-১৭-০।
ভারত
রোহিত স্টাঃ ল্যাথাম বো স্যান্টনার৬২•৭৭
ধওয়ন ক টেলর বো বোল্ট ২৮•২৭
কোহালি ক নিকোলস বো বোল্ট ৬০•৭৪
রায়ডু ন. আ. ৪০•৪২
কার্তিক ন. আ. ৩৮•৩৮
অতিরিক্ত ১৭
মোট ২৪৫-৩ (৪৩)
পতন: ১-৩৯ (ধওয়ন, ৮.২), ২-১৫২ (রোহিত, ২৮.৫), ৩-১৬৮ (কোহালি, ৩১.১)।
বোলিং: ট্রেন্ট বোল্ট ১০-১-৪০-২, ডাগ ব্রেসওয়েল ৬-০-৪৯-০, লোকি ফার্গুসন ১০-১-৫৭-০, মিচেল স্যান্টনার ১০-০-৪৫-১, ইশ সোধি ৭-০-৫৩-০।