সিরিজটা যে ভাবে শুরু করল অশ্বিন, তাতে মনে হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো এই সিরিজটাও ওরই হবে।
৩৭ টেস্টে দু’শো উইকেট! শুনলাম একটা ভারতীয় নজির গড়ে ফেলেছে ছেলেটা। সবচেয়ে কম টেস্টে দুশোর মাইলস্টোন পেরনোর নজির। এই গতিতে এগোলে কেরিয়ার শেষে বোধহয় দুর্দান্ত একটা জায়গায় গিয়ে থামবে ও।
অসাধারণ অফ স্পিনার অশ্বিন। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সত্যি বলতে, আমাদের দেশে ভাল অফস্পিনার সচরাচর দেখা যায় না। অশ্বিন যে লেভেলে চলে যাচ্ছে, তাতে বছর দশেক পর হয়তো ওকে বিশ্বের সর্বকালের সেরা অফস্পিনারের তালিকায় রাখতে হবে। যা ভেরিয়েশন আছে ওর বলে, তা আর কোনও অফ স্পিনারের মধ্যে দেখিনি। ক্যারম বল, টপ স্পিন, অফ স্পিন, অ্যাওয়ে গোয়িং বল— সব রকম অস্ত্র আছে। শুধু দুসরাটা ও যদি দিতে পারত, তা হলে অশ্বিন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত। দুসরা করতে গিয়ে ওর হয়তো অ্যাকশন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হচ্ছে, তাই ঝুঁকিটা আর নিচ্ছে না।
কিন্তু এর পরেও অশ্বিনই যে আমাদের সর্বকালের সেরা অফ স্পিনার, তা এখনই অবশ্য বলতে পারছি না। এই জায়গাটা অন্য একজনকে ছেড়ে দিতেই হচ্ছে।
যাঁর নাম এরাপল্লি প্রসন্ন।
আমার কাছে সেরা পাঁচ ভারতীয় অফ স্পিনারের র্যাঙ্কিং এ রকম: প্রসন্ন এক নম্বরে। তার পর থাকবে অশ্বিন। তিন থেকে পাঁচে রাখব হরভজন সিংহ, বেঙ্কটরাঘবন ও শিবলাল যাদবকে।
কেন সেরা প্রসন্ন?
ওই সময় সারা ক্রিকেট বিশ্বে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল ওঁর স্পিন। ওঁর ফ্লাইট ব্যাটসম্যানদের কাছে ছিল রহস্য। এত ভাল ফ্লাইট আর কাউকে কখনও দিতে দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না। স্পিনটা একটু আধটু খেলতে পারতাম বলে আমার খানিক সুনাম ছিল। তাই জানি, ঠিক মতো ফ্লাইট দিলে ব্যাটসম্যানের কতটা সমস্যা হয়ে যায়। প্রসন্নর সঙ্গে অন্যদের সবচেয়ে বড় তফাৎটা হল, শুধু স্পিন সহায়ক পিচ নয়, যে কোনও পিচে প্রসন্ন ম্যাজিক দেখাতে পারতেন। আর উনি ওঁর টেস্ট উইকেটের অর্ধেক পেয়েছেন বিদেশের মাটিতে। শুধু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই তিরিশের উপর উইকেট আছে ওঁর। আমাদের অন্য অফ স্পিনারদের বিদেশে সাফল্যের পার্সেন্টেজ কিন্তু প্রসন্নর চেয়ে অনেক কম।
তাই বলে ভাববেন না, অশ্বিনকে আমি এতটুকু খাটো করছি। অশ্বিনের ইমপ্যাক্ট অসাধারণ। হরভজনেরও যেমন ছিল। এই দু’জনই ম্যাচ উইনার। হরভজনের চারশোর উপর টেস্ট উইকেট আছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০০১-এ ইডেনে ওর হ্যাটট্রিকটা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাস থেকে কখনও মুছে যাবে বলে মনে হয় না। সেই সিরিজে হরভজন তিন টেস্টে তিরিশের উপর উইকেট পেয়েছিল। হরভজনের দুসরাটাই ছিল মারাত্মক। কিন্তু তবুও অশ্বিনকে আমি ভাজ্জির চেয়ে এগিয়ে রাখব, কারণ অশ্বিনের বোলিংয়ে বৈচিত্র অনেক বেশি। পাশাপাশি অশ্বিনের আগ্রাসী মনোভাবটাও আমার দারুণ লাগে। ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট।
প্রসন্ন নিয়মিত যে লেভেলের ফ্লাইট করাতেন, সেটা হরভজন বা অশ্বিনের বোলিংয়ে মাঝে মাঝে দেখা যায়। আর একজনের মধ্যেও এ রকম ফ্লাইট করানোর প্রবণতা দেখেছি। শিবলাল যাদব। আমার সেরা পাঁচের যে দু’জনের বিরুদ্ধে আমি খেলেছি, তাদের একজন শিবলাল। বিদেশের মাঠেও ফ্লাইট করানোর সাহসটা ওর ছিল অদম্য। অনায়াসে ঝুঁকিটা নিয়ে নিতে পারত ও। ১৯৮৫-৮৬-র অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে শিবলাল যা করেছিল, তা হয়তো এখনও কারও কারও মনে আছে। সে বার ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিল ও। ডেভিড বুন, অ্যালান বর্ডার, স্টিভ ওয়, জিওফ মার্শরা ওকে সে বার সামলাতে হিমশিম খেয়ে গিয়েছিল।
বেঙ্কটকেও আমি খেলেছিলাম। অনেকে হয়তো বললে রাগ করবেন, ওর বল ছিল কিছুটা ফ্ল্যাটিশ। বেশি স্পিন করাত না। স্পিন সহায়ক উইকেটে ও ভাল বল করত। কিন্তু স্পোর্টিং উইকেটে ততটা প্রভাব ফেলতে পারত না। কিন্তু দেশের ঘূর্ণি উইকেটে ও ছিল রাজা। মারাত্মক। শিবলাল আবার অতটা ধারাবাহিক ছিল না। মানে শিবলালের হাতে যে বল দিলেই ও তিন-চারটে উইকেট তুলবেই, ক্যাপ্টেনদের এতটা ভরসা বোধহয় ছিল না ওর উপর। বেঙ্কট সে জন্য শিবলালের চেয়ে এগিয়ে। তবে দু’জনেই পিছিয়ে থাকবে অশ্বিনের চেয়ে।