‘কেপটাউনে ব্রহ্মাস্ত্র সেই অশ্বিনই’

গত কয়েক দিন অ্যাশেজ সিরিজের নানা ঘটনা ছিল শিরোনামে। কিন্তু আমার মতে ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট সিরিজ অ্যাশেজের চেয়ে কোনও অংশে কম উত্তেজক নয়।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২১
Share:

পরীক্ষা: দক্ষিণ আফ্রিকায় বড় চ্যালেঞ্জ অশ্বিনের। ফাইল চিত্র

মাঝখানে আর মাত্র তিনটে দিন। তার পরেই টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম মহারণ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। যেখানে বিরাট কোহালির ভারত মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার।

Advertisement

গত কয়েক দিন অ্যাশেজ সিরিজের নানা ঘটনা ছিল শিরোনামে। কিন্তু আমার মতে ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট সিরিজ অ্যাশেজের চেয়ে কোনও অংশে কম উত্তেজক নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বাইশ গজে তিন টেস্টের জমজমাট এক ক্রিকেট যুদ্ধ হতে চলেছে ৫ জানুয়ারি থেকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গত সাতাশ বছরে আমরা কিন্তু একবারও জিতে ফিরতে পারিনি। নেলসন ম্যান্ডেলা, অ্যালান ডোনাল্ড-দের দেশে আমাদের এ পর্যন্ত সেরা সাফল্য ২০১১ সালের সেই টেস্ট সিরিজ। যা ড্র করে ফিরেছিল ভারত। যে দলে ছিল সচিন তেন্ডুলকর, জাহির খান-দের মতো সমীহ জাগানো নাম। ফলে কেপটাউনে প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগে যে প্রশ্নটা উঠছে, তা হল এ বার বিরাট কোহালির ভারত দক্ষিণ আফ্রিকায় কী করবে?

Advertisement

আমার ক্রিকেট বুদ্ধি বলছে, এ বার দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে ফেরার বড় সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের। কারণ এ বারের দলে সব জায়গায় সঠিক ক্রিকেটার রয়েছে আমাদের।

আরও পড়ুন: কেপ টাউনের রাস্তায় বিরাটদের ভাঙড়া, দেখুন ভিডিও

কেন টেস্ট শুরুর আগেই জয়ের কথা বলছি? তার উত্তরে প্রথমেই বলব প্রথম টেস্ট কেপটাউনে খেলা এ বারের ক্রীড়াসূচিতে একটা আশীর্বাদ। এখনও পর্যন্ত যা খবর পাচ্ছি, তাতে কেপটাউনে ঝলমলে রোদ উঠছে। পিচ শুকনো। ফলে উপমহাদেশের উইকেটের মতো বল ঘোরার একটা সম্ভাবনাও রয়ে যাচ্ছে সেখানে। আর বল ঘুরলে সেটা ভারতের পক্ষে একটা ইতিবাচক দিক হিসেবেই গণ্য হবে। তার উপরে ন’টা টেস্ট সিরিজ জিতে এ বার দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছে ভারত। ফলে আত্মবিশ্বাসটা ভাল জায়গায় থাকবে বিরাট কোহালিদের। আর সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত যদি প্রথম টেস্ট জিতে যায়, তা হলে কিন্তু তিন টেস্টের সিরিজে সেঞ্চুরিয়ন এবং জোহানেসবার্গে যাওয়ার আগেই চালকের আসনে বসে পড়তে পারে ভারত।

গত কয়েকদিনে ডেল স্টেন-দের অনেক হুঙ্কার শুনেছি। এটা ঠিক, ডেল স্টেন, মর্নি মর্কেল, কাগিসো রাবাডা এবং ভার্নন ফিল্যান্ডার-দের পেস আক্রমণ অন্যতম সেরা। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা গত কয়েক বছর ধরে এক নাগাড়ে খেলে যাচ্ছে। ফলে মুরলি বিজয়, চেতেশ্বর পূজারা-রা মোটেও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শিক্ষানবীশের মতো ব্যাট করবে না। কারণ আমাদের ব্যাটসম্যানদের অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলার সুযোগ রয়েছে। আর প্রত্যেকেই ৪০-৫০ টা টেস্ট তাদের কেরিয়ারে খেলে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। ধৈর্য্য ও শট নির্বাচন করে খেলতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকায় এ বার অসুবিধা হওয়ার কথা নেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের।

আর দক্ষিণ আফ্রিকায় লাল কোকাবুরা বলে খেলা হবে। যা ২০-২৫ ওভারের পর অতটা সুইং করে না। ফলে আমাদের ব্যাটসম্যানদের মোকাবিলা করতে হবে বাউন্সের। এই জায়গায় বিরাট কোহালি এবং অজিঙ্ক রাহানের দায়িত্বটা বেশি। মধুচন্দ্রিমা কাটিয়ে তাই বিরাট কোহালিকে বাইশ গজে বেশি মনোযোগী হতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে যে ব্যাটসম্যান ভারতের সবচেয়ে কার্যকরী হতে পারে, সে হল অজিঙ্ক রাহানে। এর কারণ টেকনিকের দিক দিয়ে ও খুব পোক্ত। তা ছাড়া সামনের পায়ে ও পেসারদের ভাল সামলায়। পিছনের পায়েও।

একই সঙ্গে উইকেটরক্ষার পাশাপাশি ঋদ্ধিমান সাহার কাছেও এটা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার সিরিজ। কারণ এখনও পর্যন্ত উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে দেশের মাটিতে সসম্মানে পাশ ঋদ্ধিমান। অস্ট্রেলিয়ায় একটা টেস্ট খেললেও বিদেশের মাঠে ব্যাটসম্যান হিসেবে বাউন্স মোকাবিলা করে নিজের জাত চেনানোর একটা বড় সুযোগ এ বার ঋদ্ধিমানের সামনে।

এ বার আমাদের বোলিং বিভাগেও প্রচুর বৈচিত্র। উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার, ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে সফল হওয়ার রসদ নিয়েই যাচ্ছে। সঙ্গে তৃতীয় বা চতুর্থ সিমার হতে পারে হার্দিক পাণ্ড্য। তবে প্রথম টেস্টে এদের সঙ্গে তুরুপের তাস হতে পারে রবিচন্দ্রন অশ্বিন। কেপটাউনে খটখটে পিচে বল ঘুরতে শুরু করলে অশ্বিনকে খেলা মুশকিল হবে এবি ডি’ভিলিয়ার্স-দের। সেক্ষেত্রে উইকেটের পিছনে ঋদ্ধিমান সাহা ও স্লিপ ফিল্ডারদের সতর্ক থাকতে হবে। হাফ চান্সকেও ক্যাচে পরিণত করতে হবে টেস্ট শুরুর প্রথম দিন থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন