ছবি: এএফপি
বিরাট কোহালিদের তেরোটা টেস্টের লম্বা হোম সিরিজ শুরু হওয়ার গোড়া থেকেই খেলতে আসা দলগুলোকে ঘিরে উত্তেজনার রসদ কমতি ছিল না।
নিউজিল্যান্ড— তাদের নতুন ব্র্যান্ড অব ক্রিকেটের জন্য। ইংল্যান্ড— সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দল হিসেবে। আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়েও আগ্রহ কম নয়। স্মিথরা যে চ্যালেঞ্জের মিসাইল ছুড়ে দেবে তার বিস্ফোরণে কতটা উত্তাপ ছড়াবে, সেটা নিয়ে চর্চা এখনই তুঙ্গে। তার ঠিক আগে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশের এক টেস্টের সিরিজের ধারে-ভারে হেভিওয়েটদের থেকে স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা পিছিয়ে।
অনেকে বলছেন, যতই অভিষেকের পর ভারতে এই প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে আসুক বাংলাদেশ, আসলে হায়দরাবাদ টেস্ট অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে ভারতের প্রস্তুতি ম্যাচের একটা ঝাঁ-চকচকে সংস্করণ।
সত্যিই কি তাই? না কি এই সিরিজ আসলে বিরাট কোহালির ভারতের বিরুদ্ধে এগারো বাঙালি ক্রিকেটারের মর্যাদার পরীক্ষা?
বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁর দল ঠিক কী টার্গেট রেখে নামবে। তিনি বলেছেন, ‘‘২০০০ সাল থেকে ভারতে এসে যে টেস্ট খেলিনি সেটা অবাক হওয়ার মতোই। ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামাটা বড় ব্যাপার। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমরা মুখিয়ে রয়েছি। নিজেদের ক্ষমতা দেখানোর এটাই তো সুযোগ। আশা করছি সেটা আগামী পাঁচ দিনে দেখাতে পারব। এক নম্বর টেস্ট দলের সঙ্গে আমরা কতটা টক্কর দিতে পারি, সেটাই আমরা দেখতে চাই।’’
এক সময়ের বিশ্ব ক্রিকেটে সদ্য পা রাখা ‘দুর্বল’ প্রতিবেশী দেশের তকমা বাংলাদেশ কিন্তু বহু দিন মুছে দিয়েছে। তাদের ছোট ফর্ম্যাটে সাফল্যের দৌরাত্ম্যে। বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে। ২০১৫ ওয়ান ডে সিরিজে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়েছিল। পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে খুব কষ্ট করে জিততে হয়েছিল। সেই দাপটের ওয়ান ডে থেকে দলকে টেস্ট মোডে নিয়ে আসাটাই মুশফিকুরদের প্রথম চ্যালেঞ্জ। বোঝানো, পড়শি দেশের দুর্বল টেস্ট দল হয়ে আর থাকা নয়, বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী সুপার পাওয়ারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি। যার প্রথম পদক্ষেপ শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদে। এ তো গেল স্বপ্ন। কিন্তু বাস্তব তো বলছে টেস্টের দুনিয়ায় মুশফিকুররা এখনও লিলিপুট। অন্তত অভিজ্ঞতার দিক থেকে। যেটা সবচেয়ে ভাল বোঝা যাবে দু’দেশ গত ১৭ বছরে কতগুলো টেস্ট খেলেছে সেটার পরিসংখ্যান দেখলেই। বাংলাদেশ ৯৭টা। আর ভারত ১৭৪।
তা হলেও ভারতীয় ক্যাপ্টেন প্রতিপক্ষকে হাল্কা করে নেওয়ার যে ভুল করবেন না সেটা আন্দাজ করা কঠিন নয়। বিরাট সেটা করেনওনি। সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় ক্যাপ্টেন বলেছেন, ‘‘ওদের স্কিল তো আছেই। শুধু খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পায়নি বলে একটা দল হিসেবে আত্মবিশ্বাসটা ততটা গড়ে ওঠেনি। ওয়ান ডে-তে ওরা দারুণ টিম। একটা সেট দল আছে। টেস্ট ক্রিকেট না খেললে সেই মানসিকতাটা গড়ে ওঠা কঠিন।’’
আরও পড়ুন:
উপেক্ষার যন্ত্রণার থেকেই জন্ম তিনশোর মহাকীর্তির
প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ভারত কতটা এগিয়ে আছে, সেটা বোঝাতে গেলে ভারতের প্রথম একাদশের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। চেন্নাইয়ে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা করুণ নায়ার সম্ভবত খেলছেন না। তাঁর জায়গায় আসছেন ফিট হয়ে ওঠা অজিঙ্ক রাহানে। কোহালি সে রকমই ইঙ্গিত দিয়ে এ দিন বলছেন, ‘‘একটা ম্যাচ কিন্তু আর একটা প্লেয়ারের দু-তিন বছরের পরিশ্রমকে ঢেকে দিতে পারে না। অজিঙ্ক এই ফর্ম্যাটে প্রায় ৫০ গড়ে রান করে এসেছে আর সম্ভবত টেস্ট টিমের সবচেয়ে জমাট ব্যাটসম্যান। করুণ যা পারফর্ম করছে সেটা এক কথায় দুর্ধর্ষ। দলে ওর জায়গাটাও এতে মজবুত হয়েছে। তবে অজিঙ্ক ফিট থাকলে প্রথম একাদশে ওর জায়গা পাওয়াটা প্রাপ্য।’’
ভারতীয় ক্যাপ্টেনের কথায় টিম ইন্ডিয়ার দর্শনটা ধরা কঠিন নয়। সেটা হল, প্রত্যেকটা পজিশনে অন্তত দু’জন করে ক্রিকেটার তৈরি রাখার, যাঁরা প্রথম একাদশে আসতে পারেন। এমন একটা দল গড়ার, যারা ট্রিপল সেঞ্চুরিয়নকে পরের ম্যাচেই বসিয়ে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারে। টেস্টে ৯২ বছরে যা প্রথম। বাংলাদেশকে সেখানে চোটের জন্য অন্যতম ভরসা ওপেনার ইমরুল কায়েসকে ছাড়াই নামতে হচ্ছে।
মুশফিকুররা ভারতের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার আগে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে এই একটা তথ্যেই হয়তো পরিষ্কার।