সার্ভ অ্যান্ড ভলি
Tennis

ভারতীয় টেনিসকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেন আমার ক্যাপ্টেন

১৯৫৫-৫৬ সালে আমরা যখন টেনিস খেলা শুরু করেছি, নরেশ কুমার তো তখন সাফল্যের মধ্যগগনে। আমার কাছে উনিই ছিলেন নায়ক। ওঁকে দেখেই এই খেলার প্রতি ভালবাসা এবং আবেগ তৈরি হয়েছিল।

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:৫৩
Share:

স্মৃতি: ১৯৬২ উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ডে নরেশ। ফাইল চিত্র

এমন বিষণ্ণ দিন জীবনে খুব কম এসেছে। বুধবার বেলা সাড়ে বারোটার সময় পেলাম দুঃসংবাদ। প্রয়াত নরেশ কুমার। আমার টেনিস জীবনের গুরু, নায়ক, শিক্ষক এবং কোর্টের বাইরে এক সুন্দর মনের মানুষ।

Advertisement

ছুটে গিয়েছিলাম শ্মশানে ওঁর শেষকৃত্যে। দেখা হল ছেলের সঙ্গে। ওর মুখে শুনলাম, শেষ কয়েক দিন খুব কষ্ট পেয়েছেন। শেষ বার কথা হয়েছিল মাস খানেক আগে। তার পরে ভেবেছি সময় করে এক বার ওঁর সঙ্গে দেখা করে আসব। তা আর হল না।ছেলেই বলছিল, শেষ দিকে আমার এবং প্রেমজিৎ লালের কথা খুব বলতেন। আসলে বয়সজনিত অসুস্থতা ওঁর শরীরকে গ্রাস করলেও মস্তিষ্ক এবং স্মৃতিশক্তি ছিল প্রখর। এই ধরনের ব্যক্তিত্বের প্রয়াণ এমন এক শূন্যতা তৈরি করে দিয়ে যায়, যা কোনও ভাবে পূরণ করা অসম্ভব।

১৯৫৫-৫৬ সালে আমরা যখন টেনিস খেলা শুরু করেছি, নরেশ কুমার তো তখন সাফল্যের মধ্যগগনে। আমার কাছে উনিই ছিলেন নায়ক। ওঁকে দেখেই এই খেলার প্রতি ভালবাসা এবং আবেগ তৈরি হয়েছিল। তার পরে ১৯৬০ সালে যখন ডেভিস কাপে অভিষেক হল, তিনিই ছিলেন আমার প্রথম অধিনায়ক। তার এক বছর আগে যখন খেলতে গেলাম উইম্বলডনে, তিনিইছিলেন আমাদের গুরু এবং শিক্ষক। প্রত্যেকটি বিষয়ে তাঁর পরামর্শ ছিল আমার পাথেয়।

Advertisement

সকলের জীবনেই কেউ না কেউ আলোর শিখা হাতে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেন। আমার ক্ষেত্রে নরেশ কুমার ছিলেন সেই পথপ্রদর্শক। কোর্টে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার কঠোর মানসিকতা, টেনিসের প্রতি দায়বদ্ধতার পাঠ ওঁর হাত ধরেই। আবার কোর্টের বাইরে সকলের প্রতি বিনয়ী থাকা এবং সুন্দর মানুষহিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মন্ত্রও ওঁর থেকে শেখা।

যতবার এই সুবিশাল ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে, বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে, তার পরে অনুভব করেছি আদর্শ শিক্ষকেরা কখনও বই থেকে নয়, প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে থাকেন মন থেকে। যা আমাকে ঋদ্ধ করেছে। নিজে যেমন দুর্দান্ত খেলোয়াড় ছিলেন, তেমনই ব্যক্তিগত উদ্যোগেকত তরুণ খেলোয়াড়কে যে তুলে এনেছেন এবং তাদের নানা ভাবে সাহায্য করেছেন, সেই বিচারে না যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। সবচেয়ে বড় উদাহরণ তো লিয়েন্ডার পেজ়। ভারতীয় টেনিসের এক নম্বর তারকার তো উদয় হত না নরেশ কুমার না থাকলে। ছেলের মতো করে ওকে তৈরি করেছিলেন। ওঁর সাহচর্যেই লিয়েন্ডার নিজেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

খেলোয়াড় হিসেবে নরেশ কুমার কতটা উচ্চস্তরের ছিলেন, সেটা বোধ হয় আমার পক্ষে বলা সমীচীন হবে না। ভারতীয় টেনিসকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করার অন্যতম কারিগর ছিলেন নরেশ কুমার। আমাকে বেশি আকর্ষণ করেছে কোর্টের বাইরে সেই মানুষটা,যাঁর ব্যাপ্তি ছিল সুবিশাল। অসম্ভব সুন্দর মনের এক চরিত্র। খুব রসিকও ছিলেন। দুর্ধর্ষ ধারাভাষ্য দিতেন। আবার কলমের মুন্সিয়ানাও ছিল দেখার মতো। যুক্ত ছিলেন সামাজিককাজকর্মের সঙ্গেও। মাদার টেরিজার সংস্থার সঙ্গেওযোগাযোগ ছিল।

গত বছর চলে গেল আখতার আলি। আজ নরেশ কুমার। এই শূন্যতা পূর্ণ হওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন