যুব বিশ্ব বক্সিংয়ে দিনভর দাপট ভারতের মেয়েদের

পাঁচে-পাঁচ সোনা ভারতের

দিনের শুরুতে এ দিন নীতু ৫-০ হারায় কাজাখস্তানের ঝাঝিরা উরাকবায়েভা-কে। তার পরেই আসে জ্যোতির সোনা। সোনা জেতার জন্য যিনি এতদিন প্রিয় চকোলেট খাওয়া বন্ধ রেখেছিলেন। সেও ৫-০ হারায় রাশিয়ার একতারিনা মোলশানোভা-কে।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৩
Share:

সোনা জিতে জ্যোতি। রবিবার। ছবি: পীতম্বর নেয়ার

সকাল দেখেই বোঝা যায়, দিনটা কেমন যাবে। রবিবার গুয়াহাটিতে বিশ্ব যুব মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রথম সোনা আসার পরেই শর্ট সার্কিটের জন্য যে স্টেডিয়াম কাঁপানো বিস্ফোরণ হল তাতেই মনে হচ্ছিল, আজ রিংয়েও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে শশী চৌধুরী, জ্যোতি গুলিয়া-রা।

Advertisement

নবীন চন্দ্র বরদলৈ ইন্ডোর স্টেডিয়ামের রিংয়ে ভারতের যুব মহিলা বক্সাররা এ দিন এমন বিস্ফোরণ ঘটালেন যার সুবাদে তৈরি হল নতুন ইতিহাস। নতুন প্রত্যাশা।

এ দিন ফাইনালে উঠেছিল ভারতের পাঁচ বক্সার—অঙ্কুশিতা বড়ো (৬৪ কেজি), জ্যোতি গুলিয়া (৫১ কেজি), শশী চোপড়া (৫৭ কেজি), নীতু ঘাঙ্গাস (৪৮ কেজি) ও সাক্ষী চৌধুরী (৫৪ কেজি)।

Advertisement

গুয়াহাটিতে ইতিহাস তৈরি করে এ দিন ফাইনালে সোনা জিতল ভারতের পাঁচ কন্যাই। এত দিন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে ভারতের সেরা সাফল্য ছিল দু’টো সোনা। দু’টো রুপো। ২০১১ সালে যে নজির গড়েছিল ভারতীয় বক্সাররা। এ দিন সেই তৈরি হল ভারতীয় মহিলা বক্সিংয়ের নতুন রেকর্ড। পাঁচটি সোনা এবং দু’টি ব্রোঞ্জ জিতে প্রথম হল ভারত। দ্বিতীয় রাশিয়া (২টি সোনা, ৪টে রুপো), তৃতীয় কাজাখস্তান (১ টা সোনা, ২টো রুপো, ২টো ব্রোঞ্জ)। টুর্নামেন্টে ভারতের দশ জন বক্সারের মধ্যে সাত জনই পদক-সহ বাড়ি ফিরলেন। অসমের ভূমিকন্যা অঙ্কুশিতা সঙ্গে নিয়ে গেলেন টুর্নামেন্টের সেরা বক্সারের পুরস্কার। আগামী বছর আর্জেন্তিনায় যুব অলিম্পিক্সে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করল জ্যোতি গুলিয়া।

দিনের শুরুতে এ দিন নীতু ৫-০ হারায় কাজাখস্তানের ঝাঝিরা উরাকবায়েভা-কে। তার পরেই আসে জ্যোতির সোনা। সোনা জেতার জন্য যিনি এতদিন প্রিয় চকোলেট খাওয়া বন্ধ রেখেছিলেন। সেও ৫-০ হারায় রাশিয়ার একতারিনা মোলশানোভা-কে। শশী ৪-১ হারায় ভিয়েতনামের ডো হং গক-কে। আর ইংল্যান্ডের আইভি জেন স্মিথের সঙ্গে লড়াই করে ৩-২ জিতল সাক্ষী। অঙ্কুশিতাও ৪-১ জেতে রাশিয়ার একতারিনা ডিন্নিক-এর বিরুদ্ধে।

টুর্নামেন্টে সেরা হওয়ার আনন্দে পুরস্কার মঞ্চেই বক্সিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি অজয় সিংহ বলে দিলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে প্রত্যেক সোনাজয়ীকে দু’লক্ষ টাকা পুরস্কার দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য ২০২৪ অলিম্পিক্স। তার জন্য নতুন প্রতিভা খুঁজে পেলাম আমরা।’’

কী ভাবে এই সাফল্য, তা জানতে চাইলে সোনা জয়ী জ্যোতি বলছে, ‘‘বিদেশি কোচের কাছ থেকে নতুন টেকনিক শিখেছি। গোটা বছর জুড়ে চলছে জাতীয় শিবির। যার সুফল পাচ্ছি আমরা।’’ যুব মহিলা দলের হাই পারফরম্যান্স ডিরেক্টর রাফায়েল বার্গামাস্কো যদিও মনে করছেন শশীদের আরও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। ইতালিয়ান এই কোচের কথায়, ‘‘আজ মেয়েরা শুরু থেকেই আক্রমণে যাওয়ায় রক্ষণে সমস্যা হচ্ছিল। নির্দেশ আমরা দিইনি। আর সাক্ষী তো টেনশনে গত রাতেও বিপক্ষের ভিডিও দেখে ভুলত্রুটি খুঁজছিল। এতে মানসিক চাপ বেড়ে যায়।’’

ভারতের এই সোনার মেয়েদের লড়াই দেখতে এ দিন স্টেডিয়ামে এসেছিলেন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র মালিক জন আব্রাহাম। শশী, সাক্ষী, অঙ্কুশিতা-রা এ দিন একটি করে পদক জিতছিল আর স্টেডিয়ামে লাফাচ্ছিলেন জন। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে গিয়ে তিনি সোনার পদক গলায় পরিয়ে দেন শশীকে। স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই বাচ্চা মেয়েগুলো দেশকে আজ গর্বিত করল। আসল নায়ক তো ওরাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন