ছিটকে গেলেন শামিও

আরব্য রজনীর সুর কাটছে ধোনির চোট নিয়ে জল্পনায়

ডেভিড বনাম গোলিয়াথের ক্লাসিক উদাহরণ! ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমিরশাহি বনাম ভারত ম্যাচ! কিন্তু ওয়াকায় সেই ‘পিকনিক’-এর চব্বিশ ঘণ্টা আগে আচমকা ভারতীয় ড্রেসিংরুমের কপালে ভাঁজ।

Advertisement

দেবাশিস সেন

পারথ শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৬
Share:

চোটের জন্য নেই শামি। যে আশঙ্কার কথা প্রথম বেরিয়েছিল আনন্দবাজারে। ছবি: দেবাশিস সেন।

ডেভিড বনাম গোলিয়াথের ক্লাসিক উদাহরণ! ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমিরশাহি বনাম ভারত ম্যাচ!

Advertisement

কিন্তু ওয়াকায় সেই ‘পিকনিক’-এর চব্বিশ ঘণ্টা আগে আচমকা ভারতীয় ড্রেসিংরুমের কপালে ভাঁজ।

নেটে ব্যাট করার সময় হাতে চোট পেয়ে বসলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি!

Advertisement

এক নেট বোলারের একটা ডেলিভারি হঠাত্‌ই গুড লেংথ স্পট থেকে প্রত্যাশার বেশি লাফিয়ে ধোনির হাতের উপরের দিকে আঘাত করে। ধোনিকে চোটের জায়গায় বেশ কিছুক্ষণ আইস-প্যাক ঘষতেও দেখা যায় তার পর।

যদিও টিম ইন্ডিয়ার মিডিয়া ম্যানেজার ডা. বাবা-র কথায়, “ফাইন আছে ধোনি! কোনও সমস্যা নেই।”

কিন্তু খচখচানি তো একটা থেকেই যাচ্ছে! কেন না এই একই কথা ডা. বাবা গতকাল মহম্মদ শামির চোটের মেডিক্যাল বুলেটিন দিতে গিয়েও বলেছিলেন। এবং আজ শামির ফিটনেস সম্পর্কিত চূড়ান্ত খবর— বাংলার তারকা পেসার শনিবারের আমিরশাহি ম্যাচে নেই। তাই ধোনির শনিবার টস করতে নামার আগে পর্যন্ত মিডিয়ার শ্যেনদৃষ্টি থাকবেই ভারত অধিনায়কের হাতের দিকে!

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

শামির জায়গায় কাল ভুবনেশ্বর কুমার আর স্টুয়ার্ট বিনির মধ্যে যে কোনও একজনের খেলা প্রায় পাকা। দু’জনকেই আজ নেটে বাড়তি খাটানো হল টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে। কোচ ডানকান ফ্লেচার শ্বশুরের মৃত্যুতে এই মুহূর্তে কেপটাউনে। ভারতীয় দলের প্রশাসনিক ম্যানেজার আর্শাদ আয়ুব, যিনি আবার হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং সেই জোরে সোমবারের বিসিসিআই বার্ষিক সাধারণ সভায় হাজির থাকতে ফিরে আসছেন দেশে। ৬ মার্চ পরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আগে আবার পারথে ফিরবেন।

এই অবস্থায় টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীই সব। ভুবিকে নেটে মোহিত শর্মার সঙ্গে জুড়ে যেমন প্রচুর বোলিং করালেন, তেমনই আবার নেটে সবার আগে ব্যাট করতে পাঠালেন বিনিকে। সামনে আমিরশাহি হলেও ভারত বেশি বদল খুব সম্ভবত দলে করবে না। যদিও অম্বাতি রায়ডু কিংবা অক্ষর পটেলকে একটা সুযোগ দেওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে।

আমিরশাহিকে এর আগে মাত্র এক বারই খেলেছে ভারত। সেটাও এক দশক আগে। ২০০৪ এশিয়া কাপ। ডাম্বুলার সেই ম্যাচে রাহুল দ্রাবিড়ের সেঞ্চুরিতে হেসেখেলে জেতা গিয়েছিল। সেই ম্যাচের দু’জন এখনও টিকে আছেন আমিরশাহির ২০১৫ বিশ্বকাপ দলে। অধিনায়ক মহম্মদ তাকির আর খুররাম খান। আসলে লড়াইটা আরও অসম এই কারণে যে, এক দিকে অতি-পেশাদার ভারতীয় ক্রিকেটার তো অন্য দিকে একঝাঁক অ্যামেচার প্লেয়ার। এক দিকে একের পর এক মিলিওনেয়ার ক্রিকেটার তো অন্য দিকে দৈনন্দিন অফিস করা একদল প্লেয়ার!

বিরাট-ধবনের মেজাজেই ক্যাপ্টেন কুল। তখনও নেট বোলারের বল আছড়ে পড়েনি ধোনির হাতে। ছবি: এএফপি।

তাতেও অবশ্য অলৌকিক ঘটার স্বপ্ন দেখতে বাধা কোথায়? আমিরশাহির উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান স্বপ্নিল পাটিল জুনিয়র পর্যায়ে অজিঙ্ক রাহানে-ধবল কুলকার্নির সঙ্গে প্রচুর খেলেছেন। কৃষ্ণচন্দ্রন কারাটে কয়েক বছর আগেও কেরল রঞ্জি টিমে ছিলেন। ভারত বনাম ভারতীয়দের লড়াইয়ের তাই একটা অন্য তাত্‌পর্য থাকছেই ডেনিস লিলি-রডনি মার্শের শহরের মাঠে।

আর ‘ডেভিড’দের মধ্যে এক জনের দিকে ‘গোলিয়াথ’রাও হয়তো বিশেষ নজর রাখবে। তিনি শাইমান আনোয়ার। আগের ম্যাচেই আমিরশাহির বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান!

কিন্তু তাঁর টিম কোচ কিংবা ব্যাটিং পরামর্শদাতা, কেউই নির্মম বাস্তবের মাটি থেকে পা সরাতে রাজি নন। ইউএই কোচ, প্রাক্তন পাকিস্তানি পেসার আকিব জাভেদের কথায়, “ধোনিকে দেখলে আমার ইমরান খানের কথা মনে পড়ে। ইমরান-ভাইয়ের মতোই সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেয় ধোনি। তা ছাড়া, ভারতের পেস বোলিংয়ে বৈচিত্র এখন অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ান উইকেট এখন ওরা পুরোপুরি বুঝে গিয়েছে।”

আমিরশাহির ব্যাটিং পরামর্শদাতা, আর এক প্রাক্তন পাক তারকা মুদাস্সর নজর আবার বলে দিচ্ছেন, “ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি ওদের রিজার্ভ বেঞ্চ। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজের চেয়ে ভারতীয় বোলিংও এখন অনেক ভাল হচ্ছে। ভারত এখন পুরো অন্য দল। কাপ জেতার অন্যতম ফেভারিট।”

শিখর ধবন

ওদের (আমিরশাহি) ভিডিও এখনও দেখিনি। প্র্যাকটিসের পর হোটেলে গিয়ে ওদের কয়েকটা ভিডিও দেখব।
পরপর দুটো ইনিংসে বড় রান করলে তৃতীয় ইনিংসে আলাদা আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামা যায়।
ব্যাটিংয়ে খুব বেশি কিছু বদল করিনি। খুব সামান্য কিছু। সেটা হয়তো অনেকে বুঝতেও পারবেন না।
আসল কথাটা হল ব্যাটিং উপভোগ করা। রবি শাস্ত্রীর থাকাটা আমাদের জন্য বড় ফ্যাক্টর।
আমাদের প্রচুর আত্মবিশ্বাস দেন। যখন প্রয়োজন, ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করেন।
আমাদের সাপোর্ট স্টাফের অন্যতম মুখ্য চরিত্র রবি ভাই। রান করলে সেটা সতীর্থ আর সাপোর্ট স্টাফের জন্যই।”

মহম্মদ তাকির (আমিরশাহি ক্যাপ্টেন)

“জানি ওরা বিরাট তারকা। কিন্তু ওদের নাম দেখে আমরা ভয় পাচ্ছি না। এই ম্যাচটাকে আমরা
এর আগের দু’ম্যাচের মতোই নিচ্ছি। ভারতীয় বনাম ভারত লড়াই নিয়ে ড্রেসিংরুমে কোনও সমস্যা নেই।
আমিরশাহিতে ষোলোটারও বেশি দেশের মানুষ থাকেন। আমার দলের বেশিরভাগ ভারতীয় প্লেয়ারই
১০-১৫ বছরের বাসিন্দা, আমিরশাহি ওদের কাছে নিজের দেশের মতো। দু’দিনের ব্যাবধানে দুটো ম্যাচ
খেলার সুবিধা হল গত ম্যাচের মোমেন্টাম নিয়েই আমরা এই ম্যাচে নামতে পারব।
পরের ম্যাচে নামতে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হল না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন