চোট পেয়ে অনিশ্চিত ধবন

আড়াইশোর আবহেও সেই আদালত আতঙ্কের ছায়া

কপালে ভিড় করে বসে স্বেদবিন্দু, অক্টোবরের চড়া রোদে মুখচোখ প্রায় ঝলসে গিয়েছে। তবু তাঁর যেন কোনও ক্লান্তি নেই। কোথা থেকে একটা ঝাড়ু নিয়ে হাজির। ইডেন গ্যালারিতে সপাটে চলছেও সেটা, দাপুটে ব্যাটটার মতো। ঝালমুড়ির ঠোঙা, অর্ধভুক্ত ঠান্ডা পানীয়ের গ্লাস— মাটি থেকে তিনি তুলে নিচ্ছেন নিজের হাতে, একের পর এক।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:০৮
Share:

হাসপাতাল থেকে বেরোচ্ছেন শিখর ধবন।-নিজস্ব চিত্র

কপালে ভিড় করে বসে স্বেদবিন্দু, অক্টোবরের চড়া রোদে মুখচোখ প্রায় ঝলসে গিয়েছে। তবু তাঁর যেন কোনও ক্লান্তি নেই। কোথা থেকে একটা ঝাড়ু নিয়ে হাজির। ইডেন গ্যালারিতে সপাটে চলছেও সেটা, দাপুটে ব্যাটটার মতো। ঝালমুড়ির ঠোঙা, অর্ধভুক্ত ঠান্ডা পানীয়ের গ্লাস— মাটি থেকে তিনি তুলে নিচ্ছেন নিজের হাতে, একের পর এক।

Advertisement

ইনি, বিরাট কোহালি। দিনের খেলা শেষে যিনি স্বচ্ছ ভারত অভিযানে চরম ব্যস্ত!

নীল শার্টের ফ্রেঞ্চকাট ভদ্রলোককে কোনও একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে রাখা বোধহয় সম্ভব নয়। বিকেল পাঁচটায় যদি তাঁকে আড়াইশো টেস্টের অনুষ্ঠান মঞ্চে পাওয়া যায়, তা হলে সওয়া পাঁচটায় তাঁকে খুঁজতে হবে সিএবি ইন্ডোরে। কী ব্যাপার? না, দেশের মাঠে আড়াইশো টেস্ট উপলক্ষ্যে চারাগাছ পুঁতছেন! প্রতিক্রিয়া— তা-ও পরিবর্তনশীল, পাল্টাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। ইডেন ড্রেসিংরুমের সামনের গালিচা দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে কখনও অস্ফুটে সিএবি কর্তাদের বলে ফেলছেন, ‘‘ইডেনকে আপনারা দারুণ বানিয়ে ফেলেছেন কিন্তু।’’ আবার কখনও ক্লাবহাউস গেটের কাছে প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন সশ্রদ্ধ। সিএবি ফোটোগ্রাফারকে রীতিমতো নির্দেশ দিচ্ছেন ডালমিয়ার সামনে তাঁর ক্লোজ আপ শটটা কী ভাবে নিতে হবে। কী ভাবে, আশেপাশের সিএবি কর্তা-সহ সেটা নিতে হবে।

Advertisement

ইনি— অনুরাগ ঠাকুর। ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং ‘আড়াইশো টেস্টের’ উৎসবে সবচেয়ে হেভিওয়েট ব্যক্তিত্ব!

শারদোৎসবের আবহে শহরের টেস্টকে ঘিরে যতটা সুখকর আমেজ কল্পনা করা সম্ভব, গত দু’দিন ধরে ইডেনে তাই হচ্ছে। প্রথম দিন কপিল দেব নিখাঞ্জের হাত ধরে ইডেন বেল নামক এক নতুন ঐতিহ্যের জন্ম দেখেছে কলকাতা। আবার রবিবাসরীয় ইডেন আড়াইশোর উৎসবে যা যা হল, মনকে টানবে। বিরাট কোহালি, রস টেলর— দুই টিমের দুই অধিনায়কের হাতে যেমন স্মারক, ফুল, টিমের প্রত্যেকের জন্য আড়াইশো লেখা রৌপ্যমুদ্রা তুলে দেওয়া হল, ঠিক তেমন দুই ঘরের ছেলে ঋদ্ধিমান সাহা এবং মহম্মদ শামির ভাল পারফরম্যান্সের প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদাদানেও কার্পণ্য করল না সিএবি। ব্লেজার পরিয়ে, ফুল দিয়ে বাংলার দুইকে আলাদা সংবর্ধিত করা হল। গ্যালারিতে তখন প্রবল ঢাক বাজছে। সাতাশ হাজারের রবিবাসরীয় ইডেনের অধিকাংশ দাঁড়িয়ে। একটু পর আবার চমক, ইডেনের ফের বিস্ফারিত হয়ে পড়া। ঝাড়ু হাতে গ্যালারি পরিষ্কার করছেন কি না কোহালি! সঙ্গী অজিঙ্ক রাহানে, চেতেশ্বর পূজারা এবং বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ স্বয়ং। বিসিসিআই টিভিতে কোহালিকে বলতেও শোনা গেল, ‘‘এটা খুব ভাল একটা স্টেপ। আমরা আমাদের চারদিক নোংরা করি। কিন্তু বিদেশে গেলে বুঝতে পারি, এটা ঠিক নয়...।’’

এমন আবহে টেনশন কোথায়, অস্বস্তি কোথায়?

মুশকিল হল, রবিবারের ইডেনে এমন উৎসব আবহেও অস্বস্তি এবং টেনশন দু’টোই ছিল। তফাতের মধ্যে উৎসবের ক্যানভাসটা সবার সামনে ঘটেছে। লোকে দেখতে পেয়েছে। অস্বস্তি এবং টেনশনটা থেকেছে অভ্যন্তরে। কেউ দেখতে পায়নি।

অস্বস্তির নাম— শিখর ধবন।

টেনশনের নাম— বোর্ড বনাম সুপ্রিম কোর্ট।

এ দিন আঙুলে চোট পেয়ে ধবনের মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া এবং অনুরাগের শহরে ঢোকা, প্রায় কাছাকাছি সময়ে। সকালের দিকে। বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে শহরে বোর্ড প্রেসিডেন্ট ঢুকে পড়ায়, মিডিয়াকুলে একটা স্বাভাবিক আগ্রহ এ দিন ছিল তাঁকে নিয়ে। না, মিডিয়ার সঙ্গে এ দিন কথা বলেননি অনুরাগ। কিন্তু সিএবি কর্তাদের কারও কারও সঙ্গে বলেছেন। শোনা গেল বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাকি এ দিন ঘনিষ্ঠমহলে বলে দিয়েছেন যে, বোর্ড প্রশাসনে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত স্বচ্ছতা আনতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। তিনি আনবেন। কিন্তু প্রশাসকদের উপর কোপ তিনি নাকি মানবেন না। আগামী ৬ অক্টোবর আদালত যে রায়ই দিক, যুদ্ধের ময়দান থেকে তিনি নাকি সরে আসবেন না। নির্বাচন নিয়ে রাজ্য সংস্থাদের উপর লোঢা কমিশনের নির্দেশিকা জারি নিয়েও নাকি ভাবতে বারণ করেছেন তিনি। পরে কেউ কেউ দাবি করলেন যে, কোহালিদের নিয়ে অনুরাগের খেলা শেষে ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানে নেমে পড়া আদতে নাকি সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া একটা অনুচ্চারিত বার্তা। অদৃশ্য ভাবে বলে দেওয়া— বোর্ডের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার আছে। ক্রিকেটের সঙ্গে তাই সরকারের ‘ক্যাম্পেন’-কে মিলিয়ে দেওয়া হল।

শিখর ধবনের ক্ষেত্রে অবশ্য কোনও দৃশ্য-অদৃশ্যের ব্যাপার নেই। ট্রেন্ট বোল্টের মারাত্মক ডেলিভারি ধবনের হাতে আছড়ে পড়ার পর, ভারতীয় ওপেনারের যে কতটা যন্ত্রণা হচ্ছিল, মাঠে উপস্থিত ইডেন দর্শক দেখেছেন। উইকেটে যার পর বেশিক্ষণ আর থাকেননি ধবন। আউট হয়ে ফেরার পর দ্রুত তাঁকে হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলের এক্স রে-ও হয়। পরে ভারতীয় শিবির জানায়, শিখরের স্ক্যান হয়েছে। কী অবস্থা, খতিয়ে দেখা চলছে। রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে। হাসপাতালে উপস্থিত সিএবি-র কেউ কেউ বললেন, শিখরের নাকি সামান্য হেয়ারলাইন ফ্র্যাকচার হয়েছে। যেটাই হোক, ইন্দওরে শেষ টেস্টে সম্ভবত কড়া প্রশ্নের সামনে পড়তে হবে শিখরকে। তাঁর সাম্প্রতিক জঘন্য ফর্মই তুলে দেবে।

তা তিনি সুস্থ থাকুন বা না থাকুন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন