জয় এল না সনির দায়বদ্ধতাতেও

মোহনবাগান হার্টথ্রবের সেরা দুই অস্ত্র বরাবরই  কর্নার বা ফ্রি-কিকে গোল করা বা করানো। সেটা  এ দিনের ম্যাচে একবারও তিনি করতে পারলেন না।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:২০
Share:

সান্ত্বনা: ম্যাচের শেষে ফাবিয়ান এবং সনি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক 

নেরোকা বক্সের মধ্যে সনি নর্দে হাঁটুর চোট নিয়ে কাতরাতে কাতারাতে বসে পড়লেন। বারদুয়েক চেষ্টা করলেন উঠে দাঁড়ানোর। পারলেন না। তারপর সটান শুয়ে পড়লেন। স্ট্রেচারে করে যখন মোহনবাগান রিজার্ভ বেঞ্চে ফিরলেন তখন হাইতি মিডিও-র মুখটা দেখাল যুদ্ধক্লান্ত, বিধ্বস্ত সেই সেনাপতির মতো, যাঁর হাতে অস্ত্র আছে কিন্তু চালানোর শক্তি নেই। সবুজ-মেরুন জার্সির মঙ্গলবারের তিরাশি মিনিটের সনি তো ছিলেন সে রকমই।

Advertisement

মোহনবাগান হার্টথ্রবের সেরা দুই অস্ত্র বরাবরই কর্নার বা ফ্রি-কিকে গোল করা বা করানো। সেটা এ দিনের ম্যাচে একবারও তিনি করতে পারলেন না। উল্টে সনি দু’টো এমন গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন, যা তাঁর ব্র্যান্ডের সঙ্গে বেমানান। শট নিলেন, তবে খুবই দুর্বল। মারবেন কি, পা-ই যে জোরে চালাতে পারছেন না! দৌড়তে দৌড়তে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন মাঝে মধ্যেই। মাঠের পাশে এসে ব্যাথা কমানোর স্প্রে নিলেন বেশ কয়েক বার। বিরতিতে বা খেলা চলার সময় তাঁকে অন্তত তিন বার অনুরোধ করা হল বসে যেতে। কিন্তু অধিনায়ক নাছোড়!

সাতের দশকে সুব্রত ভট্টাচার্যদের জীবন বাজি রেখে মাঠে নামার নানা গল্প প্রচলিত আছে ময়দান জুড়ে। পরে তার ধারক হয়ে উঠেছিলেন এক ব্রাজিলিয়ান— হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। সনি যেন মোহনবাগানে সেই দায়বদ্ধতার পরম্পরা। যাঁকে স্যালুট জানাতেই হবে।

Advertisement

কিন্তু যে কাজটা করার জন্য মোহনবাগান অধিনায়ক সকালে ফোন করে কোচের কাছে প্রথম একাদশে তাঁকে রাখার অনুরোধ জানিয়েোছিলেন, সেই জেতাটাই তো হল না সনি নর্দেদের। উল্টে দুই সতীর্থের কাঁধে ভর দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর প্রশ্ন উঠে গেল, দায়বদ্ধতা দেখাতে গিয়ে সনি কী দলকে ডোবালেন? মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন কিন্তু বলে দিলেন, ‘‘সবাই সনি, সনি করছিল। চোট পাওয়া ফুটবলার মাঠে নামালে কী হয় সেটার নিদর্শন হয়ে রইল সনি-ক্রোমা। অধিনায়ক নিজে নামতে চাইলে সম্মান তো দিতেই হয়। কবে সনিকে যে পাব সেটা এখন বলতে পারছি না।’’ চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া সনি কিছু বলার অবস্থায় ছিলেন না। তবে আনসুমানা ক্রোমা বলে গেলেন, ‘‘চোট নিয়েও চেষ্টা করেছি। জিততে পারিনি। হতাশ লাগছে।’’

দশ দিন পর ইন্ডিয়ান অ্যারোজের বিরুদ্ধে ম্যাচ রয়েছে মোহনবাগানের। সেই ম্যাচের কথা ভেবে চিন্তিত দলের কোচ এভাবে ক্ষোভ উগরে দিলেও, বাস্তব ঘটনা হল মোহনবাগান এ দিন যা খেলল বা সুযোগ তৈরি করল সবই কিন্তু ওই দুই আধা-ফিট সনি-ক্রোমার জন্যই। দলের বাকি বেশির ভাগ ফুটবলারই সেই জায়গায় পুরো সুস্থ হয়েও শূন্যর বেশি নম্বর পাবেন না। এর প্রথম উদাহরণ যদি হন দিপান্দা ডিকা, তা হলে পরপর আসবেন শিল্টন ডি সিলভা, রেইনার ফার্নান্ডেজ, শেখ ফৈয়াজরা। কী জঘন্য পারফরম্যান্স! নোট বই দেখাচ্ছে, ম্যাচে মোহনবাগান গোলকিপার শিল্টন পালের কাছে গোটা সাত-আটেক বল গিয়েছে। সেই ম্যাচও জিততে না পেরে মোহনবাগান কোচ রীতিমতো ক্ষিপ্ত মেজাজে। বলে দিলেন, ‘‘চার চারটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেছি আমরা। সেটাই তো অপরাধ।’’

মণিপুরের নেরোকা টিমটার জার্সি নেদারল্যান্ডসের মতো কমলা। তদের আসল শক্তি পাঁচ বিদেশি আর সুভাষ সিংহ, শরণ সিংহরা। তবে তাদের কোচ গিফট রেইখান পুরো টিমের জন্য একটা গন্ডি টেনে রেখেছিলেন। ঠিক করে দিয়েছিলেন, কোনওমতেই হজম করা যাবে না। সে জন্যই ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে টিম নামিয়েছিলেন নেরোকা কোচ। সামনে শুধুই নাইজিরিয়ান ফেলিক্স চিডি। চার ডিফেন্ডারের সামনে দুই রক্ষণ-পর্দা। ফলে কমলা ঝড় নয়, পাহাড়ি ছেলেদের আটকে থাকতে হল মাঝমাঠে। স্কোয়ার পাস আর ব্যাক পাসের চৌহদ্দিতে।

বিপক্ষের রক্ষণে সাত-আটজন ফুটবলার দাঁড়িয়ে গেলে যা করা দরকার সেই উইং প্লে-ই কার্যকর হল না মোহনবাগানে! উল্টে সনি-ক্রোমাদের চোট-আঘাত, অসংখ্য মিস পাস আর উদ্যেশ্যহীন বল ঠেলাঠেলি— আরও আগোছাল করে দিয়েছিল সঞ্জয়ের টিমকে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। পাঁচ ম্যাচে তিনটে ড্র। ঘরের মাঠে টানা দুটো ম্যাচে চার পয়েন্ট নষ্ট। ট্রফি প্রত্যাশী পালতোলা নৌকার এই চরায় আটকে যাওয়া বড় ক্ষতি করে দেবে ভবিষ্যতে। আই লিগে সঞ্জয় সেনের টিমের গত দু’বছরের ব্যর্থতা সেই ইঙ্গিত-ই দিচ্ছে।

মোহনবাগান: শিল্টন পাল, অভিষেক দাস, কিংশুক দেবনাথ, রানা ঘরামি, রিকি লালওয়ামানামা, রেইনার ফার্নান্ডেজ, শিল্টন ডি সিলভা (সৌরভ দাস), শেখ ফৈয়াজ, সনি নর্দে (আজহারউদ্দিন মল্লিক), আনসুমানা ক্রোমা (নিখিল কদম), দিপান্দা ডিকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন