বিরাটকে বল করার চ্যালেঞ্জটা নিতাম

সাড়ে ছ’ফুটের অতিকায় চেহারাটা ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পরেও খুব পাল্টায়নি। বয়সের আক্রমণ চোখেমুখে কিছুটা পড়েছে হয়তো। কিন্তু মেদবর্জিত চেহারাটা দেখলে মনে হয়, আজও বাইশ গজে নামিয়ে দিলে ব্যাটসম্যানদের সম্ভবত শান্তিতে বসবাস করতে দিতেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০১
Share:

শহরে ম্যাকগ্রা। মঙ্গলবার। -শঙ্কর নাগ দাস

সাড়ে ছ’ফুটের অতিকায় চেহারাটা ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পরেও খুব পাল্টায়নি। বয়সের আক্রমণ চোখেমুখে কিছুটা পড়েছে হয়তো। কিন্তু মেদবর্জিত চেহারাটা দেখলে মনে হয়, আজও বাইশ গজে নামিয়ে দিলে ব্যাটসম্যানদের সম্ভবত শান্তিতে বসবাস করতে দিতেন না। তবে এ সব নয়। মঙ্গলবার সিসিএফসি-তে এক অনুষ্ঠানে আসা গ্লেন ম্যাকগ্রা-র সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক বোধহয় তাঁর ভেতরের চরিত্রটা। যিনি আগ্রাসী পেস বোলার হয়েও ‘আপনার পেস ছিল না’ শুনে চটলেন না। উল্টে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমি কিন্তু নিজেকে ফাস্ট বোলারই ভাবতাম।’’ গোলাপি বলে বল না করতে পারার আক্ষেপ— তাও বেরিয়ে এল। এবং বর্তমানে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় পেসার, সচিন বনাম কোহালি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থেকে আসন্ন ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ— সব কিছু নিয়েই কথা বললেন। কিছুটা সাংবাদিক সম্মেলনে, কিছুটা পরে আনন্দবাজারের সঙ্গে।

Advertisement

শ্রীলঙ্কা সফরে অস্ট্রেলিয়ার ধ্বংস হওয়া এবং ভারত সফর...

জানি না কেন এত সমস্যা হচ্ছে। আসলে উপমহাদেশে যদি আপনি ডিফেন্সিভ মাইন্ডসেটে চলে যান, ডুবতে হবে। আমি দেখছি, এরা বাঁচতে চাইছে কোনও রকমে। পাল্টা আক্রমণে যেতে চাইছে না। কিন্তু সেটা তো করতে হবে, ব্যাটসম্যানকেই খুঁজে বার করতে হবে কী করে আক্রমণ করা যায়। মনে আছে, ২০০১ আর ২০০৪ সালের ভারত সফরে ম্যাথু হেডেন ঠিক করেছিল, সুইপ খেলবে। সুইপে স্পিনের পাল্টা দেবে। রাস্তাটা কিন্তু হেডেনই খুঁজে বার করেছিল।

Advertisement

শ্রীলঙ্কা সফরে যা দেখলাম, তাতে রাতারাতি দ্রুত ভুলত্রুটি শুধরোনো যদি না যায়, ভারত সফরে কপালে দুঃখ আছে। আমি নিশ্চিত যে, ভারতও টার্নিং ট্র্যাক নিয়ে অপেক্ষা করবে শ্রীলঙ্কার মতো। সামলাবে কে? স্টিভ স্মিথ ছাড়া তো লোক পাচ্ছি না। চাপটা প্রবল হয়ে যাবে ওর উপর।

সচিন তেন্ডুলকর বনাম বিরাট কোহালি

সচিন আর বিরাট— দু’জন ব্যাটসম্যান আলাদা, দু’জনের ব্যক্তিত্বও আলাদা। সচিন বিশ্বের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। বিরাট আবার সেখানে প্রবল আত্মবিশ্বাসী। আগ্রাসী। এমন এক ক্রিকেটার যাকে কখনও দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

বিরাটের একটা জিনিস আমার অসম্ভব ভাল লাগে। ওর অ্যাটটিউড। নিজের খারাপ সময়েও ও চেষ্টা করে অ্যাটিটিউডটা একই রকম রেখে দিতে। সচিনকে বল করতাম যখন, মাথায় থাকত যে আমাকে জায়গায় রাখতে হবে। একটু এ দিক ও দিক ফেললে, সোজা মেরে দেবে। ভাবতাম, সচিনের অপছন্দের জায়গায় বলটা রাখব। রান আটকে দেব। চাপে ফেলব ওকে। সচিন তখন লুজ বলের অপেক্ষায় থাকত। পেলে, বড় শটে যেত। বিরাট আবার বোলারদের উপর দ্রুত চড়াও হতে পছন্দ করে। বোধহয় টি-টোয়েন্টি খেলে খেলে ব্যাপারটা এসেছে। টি-টোয়েন্টিতে বোলারদের উপর তো চড়াও-ই হয় ব্যাটসম্যানরা।

কোহালিকে বল করতে হলে

চ্যালেঞ্জটা নিতাম। বিরাটকে বল করাটা উপভোগ করতাম। নিজে খেলতাম যখন, বরাবর সেরাদের বল করাটা পছন্দ করে এসেছি। সচিনের বিরুদ্ধে বল করতেও ভাল লাগত। কিন্তু কোনও ভাবে মানব না, সচিনের উপর আমি কর্তৃত্ব করেছি। সচিনের বিরুদ্ধে আমার কয়েকটা দিন শুধু ভাল গিয়েছে। যেমন সচিনেরও আমার বিরুদ্ধে গিয়েছে।

ফিনিশার ধোনি কি শেষের দিকে

বলাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ বলে দু’রান করতে পারেনি, সেটা দুর্ভাগ্য। কখনওই বলা যায় না, ফিনিশার ধোনি শেষ। এত বছর ধরে খেলছে ও। বিশ্বের সেরা ফিনিশারদের একজন। এমন ক্যাপ্টেন। সেই ধোনি শেষ, বলা যায় নাকি?

২০১৯ বিশ্বকাপে ধোনিকে অধিনায়ক হিসেবে দেখেন কি না

সেটা ধোনির উপরই ছাড়ুন না। ধোনির মতো বিশাল মাপের ক্রিকেটারদের এটুকু প্রাপ্য যে, তারা নিজেদের টার্মসে চলবে। ধোনি কত দিন খেলবে, ধোনির উপরেই সেটা ছাড়া ভাল। ভুললে চলবে না সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ও কী প্লেয়ার। টেস্টেও কিন্তু কম ভাল প্লেয়ার ছিল না।

গোলাপি বল ও টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ

এক কথায় আমি গোলাপি বলের ভক্ত। গোলাপি বলে দিন রাতের টেস্ট করা গেলে, দারুণ হবে। আসলে টেস্ট নিয়ে লোকের আগ্রহ যে রকম পড়তির দিকে, দেখলে খারাপ লাগে। ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তো লোকই হল না।

অথচ আমি মনে করি, টেস্ট ক্রিকেট এখনও শেষ কথা। তরুণ প্রজন্মের কাছে টেস্টের আকর্ষণ নেই, এটাও নয়। অস্ট্রেলিয়ায় তরুণরা কিন্তু ক্রিকেট শুরু করার সময় টেস্ট খেলারই স্বপ্ন দেখে। যে টেস্ট ক্রিকেটে ভাল করতে পারে, সে সব জায়গায় ভাল করতে পারবে। টি-টোয়েন্টিতেও ভাল ব্যাটসম্যান হতে গেলেও কিন্তু আগে ভাল টেস্ট ক্রিকেটার হতে হবে। বিরাট কোহালি উদাহরণ। এবি ডে’ভিলিয়ার্স উদাহরণ। জো রুটকে দেখুন। তরুণ প্রজন্মের টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ নেই, বিশ্বাস করি না। বরং দেখতে হবে, লোকের আগ্রহটা কী ভাবে ফেরানো যায়। গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট করলে লোক কিন্তু আবার আগ্রহী হতে পারে। তবে একটা কথা। ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজে লোক হয়নি মানে অন্যগুলোতে হবে না, তা কিন্তু নয়। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়া ভারতে এলেই দেখতে পাবেন, কী হয়! নিশ্চিত, প্রচুর লোক আসবে। কোনও এক কারণে দেখেছি ভারতীয়রা সব সময় অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে ভীষণ পছন্দ করে! (হাসি)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন