মুম্বইয়ের সামনে ডনের দল ফের সেই কেকেহার

মুম্বইয়ের আশার তুবড়ি ফের জ্বালিয়ে ধোনির ঝাড়খণ্ড থেকে উদিত নতুন তারা ঈশান কিসান আউট হয়ে ফিরছেন, দেখা গেল কেকেআরের এক ক্রিকেটার দৌড়ে এসে হাত মেলাচ্ছেন। তাঁর নাম? কুলদীপ যাদব। যাঁর প্রতি সব চেয়ে নির্দয় ছিলেন ঈশান। 

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০৪:০১
Share:

উল্লাস: ইডেনে কেকেআরকে হারিয়ে রোহিত, ক্রুণাল পাণ্ড্যরা। নিজস্ব চিত্র

মুম্বই হোক কী কলকাতা!

Advertisement

পোর্ট এলিজাবেথ কী ইস্ট লন্ডন!

ভারত হোক কী দক্ষিণ আফ্রিকা!

Advertisement

যেখানেই যাক এই ম্যাচ, পাল্টায় না ভবিতব্য। কে যে লেখে আইপিএলের মুম্বই বনাম কলকাতা দ্বৈরথের চিত্রনাট্য! আর যাই হোক, তিনি শাহরুখ খানের ভক্ত নন!

এ বারের আইপিএলে ইডেনে প্রথম ম্যাচে এসেছিলেন শাহরুখ। বুধবার আবার তাঁকে নাইটদের বক্সে দেখতে পাওয়া মাত্র রাজকীয় অভ্যর্থনায় ভরিয়ে তুললেন ভক্তরা। কে জানত, আজ অভ্যর্থনা আর উৎসবের রাত নয়, অপেক্ষা করছে সেই চিরন্তন শোকের আবহ। যা বেশির ভাগ মুম্বই ম্যাচেই উপস্থিত থাকে। বরাবরই তো প্রতিপক্ষ মুম্বই মানেই যে শাহরুখের ‘দর্দে ডিস্কো’র সঙ্গে কোমর দোলানো দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং দেবদাসের মেক-আপ নিয়ে রাখাই ভাল। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে খুব ভাল দিন হলেও মেরেকেটে ছবির নামকরণ করা যাবে ‘কভি খুশি কভি গম’!

তা ইডেনে বুধবার দেখা গেল দেবদাসকেই। এক দিকে তাঁর শহর। অন্য দিকে তাঁর দল। বরাবর এই দ্বৈরথটা জিততে চেয়েছেন শাহরুখ। যাতে বলতে পারেন, ‘ম্যায় হুঁ ডন’। কিন্তু মুম্বই ইন্ডিয়ান্স সেই ঔদ্ধত্য দেখিয়ে মুখের উপর বলে দিয়ে গেল— ‘ওহে, শাহরুখ তুমি শুধু ফিল্মেরই বাদশা। এই ম্যাচটায় মাঠের শাসক আমরাই ছিলাম, আমরাই থাকব।’ ম্যাচের শেষে আর ইডেনে নামতেও দেখা যায়নি তাঁকে। আগেই নাকি মাঠ ছেড়ে চলে যান।

সমীকরণ যেন কিছুতেই পাল্টানোর নয়। অন্য যে কোনও ম্যাচে কে...কে...আর, কে...কে...আর ধ্বনি উঠতে পারে। মুম্বই-কলকাতা মুখোমুখি মানে কে...কে...হার, কে...কে...হার! এ পর্যন্ত আইপিএলে দু’দলের মধ্যে তেইশ বারের সাক্ষাতে মুম্বই জিতেছে আঠারো বার। এতটা একপেশে ফল আর কোনও মুখোমুখি সাক্ষাতে দেখা যায় না। মনে করিয়ে দিতে পারে শারজার সেই ভারত-পাকিস্তানকে। যখন জাভেদ মিয়াঁদাদ, ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রমরা একের পর এক ম্যাচে হারাতেন ভারতকে।

আগে মুম্বই ম্যাচ মানে দেখা যেত উদ্বিগ্ন কেকেআর মালিক একের পর এক সিগারেট টানছেন। মাঠে ধূমপান বন্ধ হওয়ার পরে সেটা আর না দেখা গেলেও আবহে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এ দিন যেমন দেখা গেল আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লের পাশে বসে ম্যাচ দেখছেন। তখন নাইটরা একের পর এক উইকেট হারাচ্ছে। অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক রান আউট হয়ে গেলেন। মালিকের চোখেমুখে শূন্যতা। কোথায় ‘ডন’! মুম্বইয়ের তাঁকে পাকড়ানোটা তো জলভাত হয়ে গিয়েছে।

ওয়াংখেড়েতে নাইটরা এক বার হারিয়েছিল মুম্বইকে। ম্যাচের শেষে বিতর্কে জড়িয়ে শাহরুখ নির্বাসিত হয়েছিলেন পাঁচ বছরের জন্য। ওয়াংখেড়েতে যান না। ইডেনে এলেন। কিন্তু মাঠে নামার মতো আবরণটুকুও থাকল না। উল্টে আতঙ্ক ফিরিয়ে এনেছিল ২০০৮-এর লজ্জার! সে বার ওয়াংখেড়েতে ৬৭ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল তাঁর দল। ষষ্ঠ ওভারেই কেকেআরের বোলারদের পিটিয়ে সেই রান তুলে দেন সনৎ জয়সূর্য। নিজের শহরে দশ বছর আগে যে ভাবে লজ্জিত হয়েছিলেন, সেই একই ভঙ্গিতে এ দিন দুরমুশ হলেন প্রিয় ইডেনে! কোনও লড়াই-ই দেখাতে পারল না তাঁর দল। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তুলেছিল ২১০। ঘষ্টাতে ঘষ্টাতে কেকেআর তুলল ১০৮। আইপিএলের প্রথম বছরে ৬৭ অল আউটের সেই ম্যাচে শন পোলক, জয়সূর্যরা হারিয়েছিলেন আট উইকেটে। এ দিন রোহিত শর্মা, হার্দিক পাণ্ড্যরা হারিয়ে দিয়ে গেলেন ১০২ রানে।

প্লে-অফের রাস্তাকে কণ্টকিত তো করে তুললেনই কার্তিকরা, আরও বড় চিন্তা হয়ে থাকল নেট রানরেট তুবড়ে যাওয়ায়। প্লাস থেকে কেকেআর চলে গেল মাইনাসে। রোহিতরা অনেক ভাল করে রাখলেন তাঁদের নেট রানরেট। এর পর পয়েন্ট এক হলে মুম্বই সুবিধে পেয়ে যাবে। আপাতত দুই দলের সমান পয়েন্ট দশ। কিন্তু বড় ব্যবধানে জিতে মুম্বই চার নম্বরে উঠে এল নেট রানরেটে এগিয়ে থাকার জন্য। কেকেআর রয়েছে পাঁচে। প্রত্যেক রাতেই যে ভাবে পাল্টে যাচ্ছে পয়েন্ট টেবল, যে কেউ যে কোনও সময়ে হড়কাতে পারে।

ইডেনে শাহরুখের পথের কাঁটা হয়ে উঠলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির শহরের এক তরুণ। ধোনির মতোই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। বড় শট খেলতে ভালবাসেন। ভয়ডরহীন। তিনি— ঈশান কিসান ২১ বলে ৬২ রান করে পাল্টে দিয়ে গেলেন ম্যাচের রং। যখন ব্যট করতে এলেন মুম্বই ৯ ওভারে ৬২-২। মুহূর্তে টপ গিয়ারে তুলে দিলেন দলকে। কুলদীপ যাদবকে এক ওভারে চারটি ছক্কা মারলেন। পরের ওভারে সুনীল নারাইনকে আরও একটি ছক্কা। ১৪ বলে ৩২ থেকে ১৭ বলে অর্ধশতরান। তাঁর তৈরি করে দিয়ে যাওয়া মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে হার্দিক ও ক্রুনাল পাণ্ড্য, বেন কাটিংরা স্কোর নিয়ে গেলেন দু’শোর ওপরে। শেষ বলে ছক্কা মারলেন জে পি ডুমিনি। কেকেআর ব্যাটিংয়ের সময় কখনও মনে হয়নি, ম্যাচ ঘুরছে। ম্যাক্লেনাঘান, হার্দিক, বুমরাদের মধ্যে উজ্জ্বল মুম্বইয়ের নতুন আবিষ্কার লেগস্পিনার মায়াঙ্ক মার্কণ্ডে। প্রচণ্ড গরম আর আর্দ্রতায় কাহিল আন্দ্রে রাসেলও ব্যর্থ হলেন।

মুম্বইয়ের আশার তুবড়ি ফের জ্বালিয়ে ধোনির ঝাড়খণ্ড থেকে উদিত নতুন তারা ঈশান কিসান আউট হয়ে ফিরছেন, দেখা গেল কেকেআরের এক ক্রিকেটার দৌড়ে এসে হাত মেলাচ্ছেন। তাঁর নাম? কুলদীপ যাদব। যাঁর প্রতি সব চেয়ে নির্দয় ছিলেন ঈশান।

ইডেনে ক্রিকেট সৌজন্যের ছবি উপস্থিত ছিল। ক্রিকেট ইতিহাসের বেদনার দৃশ্যটা পাল্টাল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন