যাত্রা: বিমানবন্দরের মেঝেতেই ঘুমিয়ে নিচ্ছেন ধোনি ও সাক্ষী। টুইটার
নিজেদের ঘরের মাঠে চারটি ম্যাচের চারটি জিতলেও এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামের পিচ নিয়ে খুশি হতে পারছেন না মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। মঙ্গলবার রাতে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে সাত উইকেটে হারায় ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। কিন্তু অতিরিক্ত মন্থর পিচ নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই প্রথম ম্যাচ থেকেই স্ট্রোক নিতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ছেন ব্যাটসম্যানেরা। খুব কম রানও উঠছে।
মঙ্গলবারের ম্যাচে কেকেআর প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১০৮-৯ তোলে। আন্দ্রে রাসেল দুরন্ত ছন্দে আছেন এবং দুর্ধর্ষ পাওয়ারহিটার। তাঁকে থামাতেই চেন্নাই মন্থর পিচের আশ্রয় নিয়েছে কি না, এমন তত্ত্ব ঘোরাফেরা করছে। যদিও রাসেল মঙ্গলবারও কেকেআরের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন। ১০৮-এর মধ্যে ৫০ রানই ছিল তাঁর। যদিও এই ৫০ রান করতে গিয়ে ৪৪ বল নেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৩.৬৩, যা একেবারেই রাসেল-সুলভ নয়। সিএসকে তিন উইকেট হারিয়ে ১৭.২ ওভার পর্যন্ত সময় নেয় জেতার জন্য।
ধোনি ম্যাচের শেষে বলে যান, ‘‘আমরা এ ধরনের পিচে খেলতে চাই না। খুবই কম রানের খেলা হচ্ছে চেন্নাইয়ের মাঠে। ব্যাটসম্যানদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়ছে। ডোয়েন ব্র্যাভোর চোট লাগার পরে আমাদের কম্বিনেশন তৈরি করতে সমস্যা হচ্ছে।’’ দ্রুত তিনি যোগ করছেন, ‘‘আমরা পিচ নিয়ে প্রথম থেকেই বলছি। আবার এখানে ম্যাচ জিতেও চলেছি।’’ ঘটনা হচ্ছে, আইপিএলের প্রথম ম্যাচ থেকেই চেন্নাইয়ের পিচে এ রকমই মন্থর ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাতে ধোনির দলই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে কারণ চেন্নাই সুপার কিংসের বোলিং আক্রমণের বেশিটাই স্পিন নির্ভর। হরভজন সিংহ এবং ইমরান তাহির দারুণ ছন্দে রয়েছেন এবং চেন্নাইয়ের মাঠে সব প্রতিপক্ষকে সমস্যায় ফেলছেন। সঙ্গে থাকছে রবীন্দ্র জাডেজার বাঁ হাতি স্পিন।
চেন্নাইয়ে এখনও পর্যন্ত চারটি ম্যাচ হয়েছে চলতি আইপিএলে। তাতে রান উঠেছে যথাক্রমে এ রকম— ১) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ৭০, চেন্নাই সুপার কিংস ৭১-৩। ২) চেন্নাই সুপার কিংস ১৭৫-৫, রাজস্থান রয়্যালস ১৬৭-৮। ৩) চেন্নাই সুপার কিংস ১৬০-৩, কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ১৩৮-৫। ৪) কলকাতা নাইট রাইডার্স ১০৮-৯, চেন্নাই সুপার কিংস ১১১-৩। দু’টি ম্যাচে কম রান উঠেছে, দু’টিতে মোটামুটি। আরও আছে। হরভজন সিংহ চলতি আইপিএলে এখনও পর্যন্ত চারটি ম্যাচ খেলেছেন। তার মধ্যে তিনটি চেন্নাইয়ের মাঠে। এ বারের প্রতিযোগিতায় হরভজনের সাত শিকারের সাতটিই এসেছে তাঁদের ঘরের মাঠে। ইমরান তাহিরের ছ’টি ৯ শিকারের মধ্যে সাতটি চেন্নাইয়ের মাঠে। একমাত্র রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে স্পিনারদের প্রভাব কম দেখা গিয়েছে। সেই ম্যাচে মাত্র দু’টি উইকেট পান স্পিনাররা। সেই ম্যাচে রানও ভালই উঠেছিল। অজিঙ্ক রাহানেদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত সেই পিচ কোথায় হারিয়ে গেল, সেটাও ধাঁধা। প্রশ্ন উঠছে, চেন্নাই ভাল পিচ চাইলেও তা তৈরি করা যাচ্ছে না কেন তাঁদের মাঠে? আইপিএলের জন্য আগে থেকেই তো প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় সব শহরের মাঠে! তবে নাইট রাইডার্সের চেন্নাইয়ের মাঠে এ ভাবে বিধ্বস্ত হওয়াটাও অপ্রত্যাশিত কারণ, তাদের দলেও ভাল স্পিনার রয়েছে। দীনেশ কার্তিকের মতো স্পিন ভাল খেলা ব্যাটসম্যানও রয়েছেন।
নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে সফল চেন্নাইয়ের মিডিয়াম পেসার দীপক চাহারও। কিন্তু তিনিও খুব জোরে বোলার বলে পরিচিত নন। গতির হেরফের ঘটিয়েই বেশি সফল হচ্ছেন তিনি। ২০ রানে তিন উইকেট নিলেও অধিনায়কের সঙ্গে গলা মিলিয়ে চাহার সমালোচনা করেছেন পিচের। ‘‘আমি নিজে সফল হয়েছি, তাই খুশি। কিন্তু আমরা ভাল উইকেটে খেলতে চাই। কেউ এ ধরনের পিচ চায় না। এ রকম হচ্ছে এখানকার মাটি এবং গরমের জন্য। পিচ প্রস্তুতকারকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন ভাল পিচ তৈরি করার।’’
কেকেআরের লেগস্পিনার পীযূষ চাওলা বলে যান, পিচ বুঝতে ভুল করেননি তাঁরা। শুরুতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে গিয়েই তাঁরা ম্যাচ হেরেছেন। ‘‘পাওয়ার প্লে-তে তিন উইকেট হারানোটা ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু এই ধরনের ক্রিকেটে এটা হতেই পারে। ১৩৫-১৪০ ভাল স্কোর হত।’’