বিজয়ী: চতুর্থ বার আইপিএল জিতে ট্রফি নিয়ে উৎসব মুম্বইয়ের। আইপিএল
১ রানে জয়ী মুম্বই
ম্যাচের সেরা যশপ্রীত বুমরা
এ বারের আইপিএলের এল ক্লাসিকো তিন বারই জিতেছিল রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। রবিবার হায়দরাবাদের মাঠে ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংস সেই বদলা নিয়ে আইপিএল ট্রফিটা চতুর্থ বার জিততে পারে কি না সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম।
কিন্তু এই মরসুমের চতুর্থ সাক্ষাতেও রোহিতের দলকে হারাতে পারল না মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে শেষ বলে এক রানে জিতে বরং চতুর্থ আইপিএল ট্রফি ঘরে তুলল মুম্বই। ২০১৩, ২০১৫, ২০১৭ সালের পরে ফের সেই বিজোড় বছর ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
এর আগে আইপিএল ফাইনালে শুরুতে ব্যাট করে ১৫০-এর কমে রান করে জেতার নজির ছিল তিন বার। ২০০৯ সালে ডেকান চার্জার্স (১৪৩ রান) বাদ দিলে বাকি দু’বার সেই কৃতিত্ব ছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের।
২০১৩ সালে শুরুতে ব্যাট করে ১৪৮ রান করে মুম্বই হারিয়েছিল এই সিএসকে-কে। আর ২০১৭ সালের আইপিএলে ১২৯ রান করে রোহিতের দল হারিয়েছিল রাইজিং পুণে সুপার জায়ান্টসকে।
আরও পড়ুন: পর পর চার ম্যাচে হার, মুম্বই ভীতিই কি হারিয়ে দিল চেন্নাইকে?
এ বারও ফের সেই শুরুতে ব্যাট করে ১৫০-এর কমে রান মুম্বইয়ের। নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৪৯-৮ করেছিল হার্দিক পাণ্ড্যরা। যার কাছাকাছি এসেও জেতা হল না চেন্নাইয়ের। লাসিথ মালিঙ্গার শেষ ওভারের শেষ বলে শার্দূল ঠাকুর এলবিডব্লিউ হতেই ট্রফি হাতে উঠল মুম্বইয়ের।
বিতর্ক: ধোনির আউটের এই ফুটেজ নিয়েই তোলপাড় চলছে। টুইটার
হায়দরাবাদের পিচে বল পড়ে ব্যাটে আসছিল। তাই মুম্বই ইনিংস দেখার পরে আমার মনে হয়েছিল, কুড়ি রান কম করেছে ওরা। চেন্নাইকে প্রথম ছয় ওভারে উইকেট না হারিয়ে রান তুলতে হত যতটা সম্ভব। যেটা ওরা করে দেখিয়েছিল দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে। রবিবার সেই প্রথম ছয় ওভারে ফ্যাফ ডুপ্লেসি আউট হওয়ায় চাপ বেড়ে গিয়েছিল ধোনির দলের। কারণ, এই দলটায় দুই ওপেনার ফ্যাফ ও শেন ওয়াটসন ছাড়া বাকি যার উপরে ভরসা করা যায় সে হল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু ওয়াটসন ও ধোনির দু’টো রান আউটই চেন্নাইয়ের হাত থেকে ট্রফিটা কেড়ে নিল।
স্কোরকার্ড
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১৪৯-৮ (২০)
চেন্নাই সুপার কিংস ১৪৮-৭ (২০)
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স
ডি’কক ক ধোনি বো শার্দূল ২৯•১৭
রোহিত ক ধোনি বো চাহার ১৫•১৪
সূর্য বো তাহির ১৫•১৭
ঈশান ক রায়না বো তাহির ২৩•২৬
ক্রুণাল ক ও বো শার্দূল ৭•৭
পোলার্ড ন. আ. ৪১•২৫
হার্দিক এলবিডব্লিউ বো চাহার ১৬•১০
রাহুল ক ডুপ্লেসি বো চাহার ০•২
ম্যাকলেনাঘান রান আউট ০•২
বুমরা ন. আ. ০•০
অতিরিক্ত ৩
মোট ১৪৯-৮ (২০)
পতন: ১-৪৫ (ডি’কক, ৪.৫), ২-৪৫ (রোহিত, ৫.২), ৩-৮২ (সূর্য, ১১.২), ৪-৮৯ (ক্রুণাল, ১২.৩), ৫-১০১ (ঈশান, ১৪.৪), ৬-১৪০ (হার্দিক, ১৮.২), ৭-১৪০ (রাহুল, ১৮.৪), ৮-১৪১ (ম্যাকলেনাঘান, ১৯.৪)।
বোলিং: দীপক চাহার ৪-১-২৬-৩, শার্দূল ঠাকুর ৪-০-৩৭-২, হরভজন সিংহ ৪-০-২৭-০, ডোয়েন ব্র্যাভো ৩-০-২৪-০, ইমরান তাহির ৩-০-২৩-২, রবীন্দ্র জাডেজা ২-০-১২-০।
চেন্নাই সুপার কিংস
ডুপ্লেসি স্টাঃ ডি’কক বো ক্রুণাল ২৬•১৩
ওয়াটসন রান আউট ৮০•৫৯
রায়না এলবিডব্লিউ বো চাহার ৮•১৪
রায়ডু ক ডি’কক বো বুমরা ১•৪
ধোনি রান আউট ২•৮
ব্র্যাভো ক ডি’কক বো বুমরা ১৫•১৫
জাডেজা ন. আ. ৫•৫
শার্দূল এলবিডব্লিউ বো মালিঙ্গা ২•২
অতিরিক্ত ৯
মোট ১৪৬-৭ (২০)
পতন: ১-৩৩ (ডুপ্লেসি, ৩.৬), ২-৭০ (রায়না, ৯.২), ৩-৭৩ (রায়ডু, ১০.৩), ৪-৮২ (ধোনি, ১২.৪), ৫-১৩৩ (ব্র্যাভো, ১৮.২), ৬-১৪৬ (ওয়াটসন, ১৯.৪), ৭-১৪৮ (শার্দূল, ১৯.৬)।
বোলিং: মিচেল ম্যাকলেনাঘান ৪-০-২৪-০, ক্রুণাল পাণ্ড্য ৩-০-৩৯-১, লাসিথ মালিঙ্গা ৪-০-৪৯-১, যশপ্রীত বুমরা ৪-০-১৪-২, রাহুল চাহার ৪-০-১৪-১, হার্দিক পাণ্ড্য ১-০-৩-০।
১২.৪ ওভারের মাথায় ঈশান কিসানের ছোড়া বলে ধোনির রান আউটটাই আমার কাছে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। টিভি আম্পায়ার নাইজেল লং আউট দেন চেন্নাই অধিনায়ককে। সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক আছে। বেনিফিট অব ডাউটের সুবিধা পেতেই পারত ধোনি। শেন ওয়াটসন ৫৯ বলে ৮০ রান করে ম্যাচটা প্রায় সিএসকে-র দিকে টেনে এনেছিল। কিন্তু ১৯.৪ ওভারে হার্দিকের থ্রো ধরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স উইকেটকিপার কুইন্টন ডি’কক দুরন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে উইকেট ভেঙে দেয়। আর ওখানেই শেষ চেন্নাইয়ের স্বপ্ন।
চেন্নাইয়ের এই দলটার শক্তি হল ধোনিই। ওর আউটটাই বড় ধাক্কা। কারণ, গোটা প্রতিযোগিতায় দেখা গিয়েছে সুরেশ রায়না, অম্বাতি রায়ডুরা দলকে ভরসা দিতে পারেনি। এ দিনও তাই হয়েছে। ওরা দায়িত্ব নিতেই পারল না। চেন্নাইয়ের এই নড়বড়ে মাঝের দিকের ব্যাটসম্যানদের সুযোগ নিয়েই ১০ থেকে ১৫, এই ছয় ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে প্রতিপক্ষকে আরও চেপে ধরে হার্দিক পাণ্ড্য, যশপ্রীত বুমরা ও রাহুল চাহাররা। বিশেষ করে রাহুল। ছেলেটার সাহস আছে। গুগলি, ফ্লিপার-সহ অনেক বৈচিত্র। সঙ্গে লাইন ও লেংথও ভাল। চার ওভারে ১৪ রান দিয়ে রাহুলের এক উইকেটের স্পেলটাও মুম্বইয়ের জয়ের অন্যতম একটা কারণ। আর ব্যাটসম্যানের শরীর লক্ষ্য করে আসা বুমরার বলের হদিশই পায়নি চেন্নাই।