ইডেনে সহজ জয় পেলেন হার্দিকরা। ছবি: আইপিএল।
ঘরের মাঠে আবার হার কলকাতা নাইট রাইডার্সের। এ বার হার গুজরাত টাইটান্সের কাছে। আমদাবাদে হারের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা দলকে অবিশ্বাস্য জয় উপহার দিয়েছিলেন রিঙ্কু সিংহ। ইডেনে তেমন ভয়ঙ্কর সুন্দর পারফরম্যান্স করতে পারলেন না কেউ। বরং নাইটদের পারফরম্যান্স হল যথেষ্ট সাদামাটা। ফলে সহজেই জিতলেন হার্দিক পাণ্ড্যরা। কলকাতা হারল ৭ উইকেটে। একাধিক প্রশ্ন উঠতে পারে নীতীশ রানার নেতৃত্ব নিয়েও।
তাও ঘরের মাঠে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে আসা ঋদ্ধিমান সাহা পারলেন না বড় রান করতে। সামনে থেকে ‘বঞ্চনা’র জবাব দিতে পারতেন। দীর্ঘ দিন পর ইডেনের ২২ গজে ব্যাট করতে নামা ঋদ্ধিমানকে কিছুটা অগোছালো দেখাল। ইডেনের সঙ্গে তাঁর মান-অভিমানের পালার সাক্ষী থাকল আইপিএলের কলকাতা-গুজরাত ম্যাচ। ১০ বল খেলে ১০ রান করে আউট হয়ে গেলেন আন্দ্রে রাসেলের বলে। তাতে অবশ্য বড় সমস্যায় পড়তে হয়নি গুজরাতকে। শুভমন গিলের সঙ্গে জুটি বেধে দলের ইনিংস টানলেন হার্দিক। শুভমন শুরু থেকেই মেজাজে ছিলেন। ইডেনের গ্যালারিও সমান তালে সমর্থন করল তাঁকে। যদিও অতিরিক্ত আগ্রাসী হতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দিলেন তিনি। হাতছাড়া করলেন অর্ধশতরানও। সুনীল নারাইনের বলে রাসেলের হাতে ধরা পড়লেন ৪৯ রান করে। মারলেন আটটি চার। হার্দিকও বড় রান পেলেন না। ২০ বলে ২৬ করলেন গুজরাত অধিনায়ক। পর পর ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় গুজরাতের ইনিংস। তাতে অবশ্য বড় সমস্যা হয়নি। ডেভিড মিলার এবং বিজয় শঙ্করের জুটি জয় এনে দিল গুজরাতকে। তাঁদের দাপটে ১৯ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নিল গুজরাত। মিলার অপরাজিত থাকলেন ১৮ বলে ৩২ রান করে। মারলেন ২টি করে চার এবং ছয়। বিজয়ের ব্যাট থেকে এল ২৪ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস। নিজের দাপুটে ইনিংসটি সাজালেন ২টি চার এবং ৫টি ছয় দিয়ে। ২৫ রান দিয়ে ১ উইকেট হর্ষিত রানার। কলকাতার কোনও বোলারই ইডেনে দাগ কাটতে পারলেন না। সফলতম নারাইন ২৪ রানে ১ উইকেট নিলেন। রাসেল ২৯ রান খরচ করে ১ উইকেট নিয়েছেন। বল করার সুযোগই পেলেন না শার্দূল ঠাকুর!
পারফরম্যান্স করতে পারছিলেন না। তাই কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন রহমানুল্লা গুরবাজ। শনিবারের বৃষ্টিস্নাত ইডেনে সেই আফগান উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের ইনিংসেই মান বাঁচল কলকাতার। নাইটদের লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দিল আর এক বিদেশির ইনিংস। রাসেলও ছন্দে না থাকায় সমালোচিত হচ্ছিলেন।
মেঘলা আবহাওয়া দেখে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গুজরাত টাইটান্সের অধিনায়ক হার্দিক। চেনা ইডেনের ২২ গজে নতুন বলে নাইটদের শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিলেন মহম্মদ শামি। কলকাতার আর এক ওপেনার নায়ারণ জগদীশন (১৯) এবং তিন নম্বরে নামা শার্দূলকে (শূন্য) দ্রুত সাজঘরে ফিরিয়ে দিলেন বাংলার জোরে বোলার। শুরুটা অবশ্য খারাপ করেননি জগদীশন। তাঁর ১৫ বলের ইনিংসটি সাজানো ৪টি চার দিয়ে।
শুরুতে শামির ধাক্কা গোটা ইনিংসেই আর সামলাতে পারল না কলকাতা। চাপের মুখে ঘরের মাঠে রান পেলেন না কেকেআরের অন্য ব্যাটাররাও। বেঙ্কটেশ আয়ার (১১) এবং নীতীশ রানাকে (৪) একই ওভারে আউট করে আয়োজকদের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেন জশ লিটল। গুরবাজ উইকেটের এক দিন আগলে রেখেছিলেন, তাই বাঁচোয়া। না হলে ইডেনে ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটতে পারত নাইটদের। ২২ গজে রুখে দাঁড়ানো কলকাতার কাবুলিওয়ালাকে আউট করলেন হার্দিকের দলের দুই কাবুলিওয়ালা। নুর আহমেদের বলে গুরবাজ আউট হলেন রশিদ খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তার আগে তাঁর ব্যাট থেকে এল ৩৯ বলে ৮১ রানের দুরন্ত ইনিংস। মারলেন ৫টি চার এবং ৭টি ছয়। গুজরাতের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলা রিঙ্কুকেও ইডেনে স্বচ্ছন্দ দেখাল না। তিনি ১৯ রান করতে খরচ করলেন ২০ বল। শেষ বেলায় রাসেল দলকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দিলেন ১৯ বলে ৩৪ রান করে। তাঁর ব্যাট থেকে এল ২টি চার এবং ৩টি ছক্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারের ছোট ইনিংসের সুবাদে কলকাতা শেষ পর্যন্ত তুলল ৭ উইকেটে ১৭৯ রান।
গুজরাতের সফরতম বোলার শামিই। তিনি ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিলেন। ২টি করে উইকেট লিটল এবং নুরের। তাঁরা খরচ করলেন যথাক্রমে ২৫ এবং ২১ রান। তবে ইডেন হতাশ করল রশিদকে। ৪ ওভার বল করে ৫৪ রান দিলেন আফগান অধিনায়ক। উইকেটও পেলেন না।