IPL 2024

যুবরাজ সিংহের মন্ত্রে ১০০ মিটার ছক্কা হাঁকিয়ে বাজিমাত অভিষেক শর্মার

যুবরাজের অ্যাকাডেমিতেই অনুশীলন করতেন অভিষেক। ছোটবেলার কোচ তাঁর বাবা রাজকুমার শর্মাই। দ্বিতীয় কোচ মনোজ কালরা। বর্তমানে যুবরাজের অ্যাকাডেমির অন্যতম কোচ।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৯:০৭
Share:

বিধ্বংসী: শক্তিও বাড়িয়েছেন অভিষেক।

শুভমন গিলের সঙ্গেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি। সেই সময় বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবে বেশি পরিচিতি পেতেন। ব্যাট করতেন মাঝের সারিতে। সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদ তাঁর ব্যাটিংয়ে আস্থা রেখেছিল। ওপেন করানো থেকে উপরের সারিতে ব্যাট করানো হত তাঁকে। ধীরে ধীরে তার ফল পেতেও শুরু করে হায়দরাবাদ। তবুও যেন তাঁর ব্যাটিংয়ে খামতি থেকে গিয়েছিল। যা মেরামত করেন, স্বয়ং যুবরাজ সিংহ। আর ছাত্র? অভিষেক শর্মা।

Advertisement

গত বারের আইপিএলে যে স্টান্সে ব্যাট করতেন অভিষেক, তা কিছুটা পরিবর্তন করেছেন। যুবরাজের মতোই এখন তাঁর উঁচু ব্যাকলিফ্ট (শট খেলার আগে ব্যাট যেখান থেকে নামে)। ব্যাটও ধরেন হ্যান্ডলের উপরের দিকে, যা এক সময় করতেন যুবরাজ। যাতে শট খেলতে সুবিধে হয়। এই দু’টি পরিবর্তনের পাশাপাশি শরীরের ওজন বাড়ানো এবং বড় ছক্কা হাঁকানোর প্রস্তুতি নিতে হয় পঞ্জাবের তরুণকে।

যুবরাজের অ্যাকাডেমিতেই অনুশীলন করতেন অভিষেক। ছোটবেলার কোচ তাঁর বাবা রাজকুমার শর্মাই। দ্বিতীয় কোচ মনোজ কালরা। বর্তমানে যুবরাজের অ্যাকাডেমির অন্যতম কোচ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল অভিষেকের উন্নতির নেপথ্য কাহিনি।

Advertisement

অভিষেকের কোচ বলছিলেন, ‘‘সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির আগে থেকেই যুবির অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করত অভিষেক। শুভমনও আসত। দু’জনকে নিজের ভাইয়ের মতো প্রশিক্ষণ দেয় যুবরাজ।’’ যোগ করেন, ‘‘আগের স্টান্সে অভিষেক আর ব্যাট করছে না। ব্যাকলিফ্ট ভাল হয়েছে। বড় ছক্কা হাঁকাতেও সমস্যা হচ্ছে না। ওর বড় শট খেলার নেপথ্যেও অনেক পরিশ্রম লুকিয়ে আছে।’’

মনোজ আরও বলেন, ‘‘১০০ মিটার বাউন্ডারিতে একটার পর একটা ছক্কা মেরে দেখাতে হত অভিষেককে। যুবির নির্দেশই ছিল, ১০০ মিটারের বাউন্ডারি পার করতে পারলে ছয় রান ধরা হবে। না হলে আউট। অভিষেকের হাতে আগে বেশি জোর ছিল না। হেভিওয়েট ট্রেনিং করতে হয় ওকে। শরীরের ওজনও বাড়াতে হয়। আজ যে অভিষেককে দেখছেন, সে অনেক পরিণত।’’

সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি থেকে বড় রান পেতে শুরু করেন অভিষেক। সেই প্রতিযোগিতায় তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৭২। গড় ৩৩.৫৭। ৩১টি ছক্কাও মারেন জাতীয় টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায়। কিন্তু হায়দরাবাদে প্রথম ম্যাচে ওপেন করার সুযোগ পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করতে হয়। ১৬ বলে ৫০ রানে পৌঁছে যান তরুণ ওপেনার। ২৩ বলে ৬৩ রান করে তিনিই ম্যাচের সেরা। যুবির প্রশিক্ষণে থাকার ফলে ছক্কার সংখ্যাও বেড়েছে। ৬৩ রানের ইনিংসে মেরেছেন সাতটি ছক্কা ও তিনটি চার। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও দেওয়া হয় তাঁকে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে যুবরাজের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন অভিষেক। বলেন, ‘‘ধারাবাহিকতার অভাব বরাবরের। যুবি পাজি বলেছেন, প্রত্যেকটি ম্যাচকে অভিষেক ম্যাচ হিসেবে দেখতে। তা হলে রান করার তাগিদ কখনও কমে না।’’

অভিষেক সেই কথা ভেবেই মাঠে নামেন। তাঁর বাবা রাজকুমার এক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘যুবরাজ ওকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর থেকে প্রচুর উন্নতি করেছে অভিষেক। তবে বাঁ-হাতে স্পিন বোলিংয়েও জোর দিয়েছে যুবি। অলরাউন্ডার হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওকে।’’

সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদকে বর্তমানে সবচেয়ে বিধ্বংসী দল মনে হচ্ছে সমর্থকদের। হায়দরাবাদের ব্যাটিং-সহায়ক নিশ্চিত ভাবে একাধিক স্মরণীয় ইনিংস দেখা যাবে হেড, হেনরিখ ক্লাসেন, অভিষেকদের ব্যাটে। মুম্বই ইন্ডিয়ানসের বিরুদ্ধে এই ত্রয়ীর দুরন্ত ইনিংসের পর থেকে যে কোনও দলই নিজ়ামের শহরে খেলতে আসতে ভয় পাবে।

মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে তিন ব্যাটসম্যানই বড় রান পেয়েছেন। কিন্তু সবচেয়ে নজর কাড়েন অভিষেক। তাঁর মধ্যে কি যুবরাজ হয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে? কোচ বলেন, ‘‘ওর মধ্যে যুবি হয়ে ওঠার সম্পূর্ণ রসদ আছে। ধারাবাহিক ভাবে রান করলে আটকাবে কে?’’

অভিষেক কি শুনতে পাচ্ছেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন