আইএসএল

হার দিয়ে শুরু, হতাশ এটিকে কোচ কপেল

খেলা শুরুর আগে যুবভারতীর ভিআইপি গ্যালারিতে শোনা গেল আরও এক অত্যুৎসাহী এটিকে সমর্থকের গলা। ‘‘চার বছর আগে এই স্টেডিয়ামেই আইএসএল শুরু হয়েছিল এটিকের ম্যাচ দিয়ে, আমরা সে বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এ বারও সেটাই হবে,’’ বললেন তিনি। 

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:২৩
Share:

হতাশ: ম্যাচের পরে বিমর্ষ এটিকের লানসারোতে। নিজস্ব চিত্র

এটিকে ০ কেরল ব্লাস্টার্স ২

Advertisement

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে ম্যাটাডোরে খেলা দেখতে এসেছিল জনা পনেরো-কুড়ির দলটা। হাতে কলকাতার দলের পতাকা। মাথায় এটিকের হেড ব্যান্ড। যেখানে লেখা ‘ফুটবলের সঙ্গে চলো রে’। স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখে এদেরই একজন চিৎকার করে বললেন, ‘‘আমরা সবাই মোহনবাগান সমর্থক। আমাদের পুরনো কোচ সঞ্জয়দা (সঞ্জয় সেন) এটিকে-র সঙ্গে। তাই সমর্থন। মনে রাখবেন, আইএসএলে শুরুর ম্যাচে কখনও হারেনি কলকাতা।’’

খেলা শুরুর আগে যুবভারতীর ভিআইপি গ্যালারিতে শোনা গেল আরও এক অত্যুৎসাহী এটিকে সমর্থকের গলা। ‘‘চার বছর আগে এই স্টেডিয়ামেই আইএসএল শুরু হয়েছিল এটিকের ম্যাচ দিয়ে, আমরা সে বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। এ বারও সেটাই হবে,’’ বললেন তিনি।

Advertisement

কিন্তু কলকাতা সমর্থকদের এই জোশ এটিকের এল মাইমনি, সেনা রালতেদের খেলায় দেখা গেল কোথায়? সাতাত্তর মিনিটে কেরল ব্লাস্টার্সে খেলা স্লোভেনিয়ার মাতেজ পোপ্লাতনিক ও তার নয় মিনিট পরে স্লাভিসা স্তয়নোভিচের গোলে পঞ্চম আইএসএলের প্রথম ম্যাচেই ০-২ হারল এটিকে। ফলে আইএসএলে প্রথম ম্যাচে না হারার সেই পরিসংখ্যান শনিবারের পরে অতীত হয়ে গেল কলকাতাতেই।

খেলা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে আক্ষেপ করছিলেন এটিকে কোচ স্টিভ কপেল। বলছিলেন, ‘‘একে গরম। তার উপর ছেলেরা বলের দখল রাখতে পারেনি। পা থেকে বল বেরিয়ে গেলে তাড়াও করছিল না। এ বার ভাল শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু তা হল না। গারসন ভিয়েরাদের রক্ষণও ভুল করল প্রচুর।’’

ম্যাচ জেতার আনন্দে কেরল ব্লাস্টার্স কোচ ডেভিড জেমসের মুখে তখন আলো করা হাসি। বলছিলেন, ‘‘দিনের প্রথম কর্নার থেকেই প্রায় গোল হয়ে যাচ্ছিল। তখনই বুঝেছিলাম, রণনীতি আজ কাজ করবে। সাইড ব্যাক ও উইঙ্গাররা দারুণ খেলল।’’ তার পরেই গম্ভীর মুখে বললেন, ‘‘এই ম্যাচটা শুধু নয়। এ বারের আইএসএলের প্রতিটা ম্যাচই উৎসর্গ করব বন্যাবিধ্বস্ত কেরলের মানুষদের। আমাদের জয়ের খবর শুনে মৎস্যজীবীরা আজ নিশ্চয় কিছুটা আনন্দ পাবেন।’’

গত বছর আইএসএলের মাঝপথে দিমিতার বের্বাতভের কাছ থেকে কেরল ব্লাস্টার্স কোচ হিসেবে ডেভিড জেমস দায়িত্ব নিয়েছিলেন। শুরু থেকেই তিনি জোর দিয়েছিলেন মাটিতে বল রেখে প্রান্ত বরাবর আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলায়। এ বারও সেই ধারা বজায় রেখেছেন তিনি। তাঁর দুই সাইডব্যাক মহম্মদ রাকিপ ও লালরুয়াত্থারা যখন আক্রমণ ও রক্ষণে সমান ভূমিকা নিলেন, তখন এটিকে সাইড ব্যাকদের ওভারল্যাপই দেখা গেল না।

শনিবার যুবভারতীতে জেমস নেমেছিলেন ৪-১-৪-১ ছকে। সন্দেশ, নেমানিয়াদের সামনে রেখেছিলেন সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর ফুটবলার নিকোলাকে। আর দুই উইঙ্গার লেন ও হোলিচরণ নার্জারিকে দিয়ে গতিতে দুই প্রান্ত বরাবর ত্রস্ত রাখছিলেন এটিকে রক্ষণকে।

এটিকে কোচ স্টিভ কপেল এমনিতেই অতি-রক্ষণাত্মক রণকৌশল নিয়ে খেলতে ভালবাসেন। তাঁর রণনীতি ছিল প্রতি-আক্রমণ ভিত্তিক। এ দিনও ৪-২-৩-১ ছকে সেই রণকৌশলেই কপেল কিস্তিমাত করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা ব্যুমেরাং হয়ে গেল।

দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে এ দিন ন’মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল খায় কলকাতা। এ দিন যে দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার রেখে নেমেছিল এটিকে, সেই প্রণয় ও এল মাইমোনি যতটা ধ্বংসাত্মক ফুটবল খেলতে ভালবাসেন, ততই এঁদের প্রবণতা কম সৃষ্টিশীল ফুটবল খেলার। ঘরের মাঠে যেখানে আক্রমণাত্মক সৃষ্টিশীল ফুটবল খেলে যে কোনও দল জিততে চায়। সেখানে কপেল যেন রক্ষণাত্মক ফুটবলের চাদরে নিজেদের মুড়ে রেখেছিলেন। ইউজেনসন লিংডো ও কেভিন লোবোকে তিনি নামালেন শেষের দিকে। কিন্তু শুরু থেকে কেন ইউজেনসন নয়? কেনই বা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কেভিন নয়।!মাঝমাঠে শুরু থেকেই ভুল পাস করছিল এটিকে। কভারিং ঠিক হচ্ছিল না। সেখান ৭০ মিনিটে বিনীতকে নামিয়ে জেমস বুঝিয়েছিলেন তিনি জিততে চান।।

কেরলের দু’টো গোলের ক্ষেত্রেই বড় ভূমিকা নেন সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর স্তয়নোভিচ। প্রথম গোলের সময় মাঝমাঠে তাঁর সঙ্গেই ওয়ান টু খেলেছিলেন পপ্লাতনিক। স্তয়নোভিচের জোরালো শট কলকাতার ব্রাজিলীয় স্টপার গারসন ভিয়েরার পায়ে লেগে উপরে উঠেছিল। সেই বল লক্ষ করে জায়গা মতো পৌঁছে জোরালো হেডে গোল করে যান পপ্লাতনিক। তাঁকে ধরেননি কলকাতার রক্ষণ।

কেরলের দ্বিতীয় গোলের ক্ষেত্রেও ডেভিড জেমসের সেই উইং নির্ভর আত্রমণ গড়ার ফসল। ডান দিক থেকে এটিকে রক্ষণ লক্ষ্য করে বল তুলেছিলেন হোলিচরণ নার্জারি। সেই বল ধরে গারসনকে কাটিয়ে ডান পায়ের জোরালো ভলিতে গোল করে যান স্তয়নোভিচ। এটিকে সাইডব্যাকরা কভারে আসেননি। এটিকে গোলে অরিন্দম ভট্টাচার্য না থাকলে ব্যবধান আরও বাড়তা।

এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, আইবরলং খোনজি, গারসন ফ্রাগা ভিয়েরা, জন জনসন, সেনা রালতে, প্রণয় হালদার, এল মাইমোনি নৌসেয়ার (কালু উচে), জয়েশ রানে (কেভিন লোবো), মানোয়েল লানজ়ারোতে, বলবন্ত সিংহ (ইউজেনসন লিংডো), এভার্টন স্যান্টোস

কেরল ব্লাস্টার্স: ধীরজ সিংহ, মহম্মদ রাকিপ, সন্দেশ ঝিঙ্গান, নেমানিয়া লাকিচ-পেসিচ, লালরুয়াত্থারা, নিকোলা ক্রিচমারেভিচ, লেন (সি কে বিনীত), সাহাল আবদুল সামাদ (কারেজ পেকুসন), স্লাভিসলা স্তয়নোভিচ, হোলিচরণ নার্জারি, মাতেজ পপ্লাতনিক (কেজ়িরন কেজ়িতো)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন