বুধবারের বলজিৎ। তখনও জানেন না তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে ঢুঁসো কেলেঙ্কারি।
আর্নোলিনকে ঢুঁসো মেরে লালকার্ড দেখে আটলেটিকো কলকাতাকে ‘ডোবানো’ বলজিৎ সিংহ সাইনি মনে করেন, বুধবার গোয়ার মাঠে তিনি ফুটবলারজীবনের চরমতম শিক্ষা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে খেলার সময় যা তিনি সব সময় মনে রাখবেন।
‘‘আমার দায়িত্ব ছিল আর্নোলিনকে আটকানো। ওকে খেলতেই দিইনি। আর যত বার ও আটকেছে তত বারই আমাকে গালাগাল করেছে। গত বার এই ম্যাচটায় যেটা ও ফিকরুর সঙ্গে করেছিল। পারলে টিভি-রিপ্লেতে দেখে নেবেন আমি রেগে গিয়ে ওকে মাথা দিয়ে গুঁতো মারার আগে ও-ই মাথা নিচু করে আমার দিকে তেড়ে এসেছিল। আর গালাগাল করছিল। যদিও আমার উচিত হয়নি ওর ফাঁদে পা দেওয়া। দারুণ একটা শিক্ষা পেলাম।’’ ফোনে মারগাও থেকে টানা কথাগুলো বলে থামলেন এটিকে-র পঞ্জাবি স্ট্রাইকার। দাবি করলেন, এটাই না কি তাঁর ফুটবলার জীবনের প্রথম লালকার্ড।
দোষ স্বীকার করলেও বলজিতকে আদৌ রেয়াত করল না আইএসএলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। তাঁকে কড়া শাস্তিই দেওয়া হল। রাতের খবর, বিপক্ষ ফুটবলারকে ঢুঁসো মারার অপরাধে দু’ম্যাচ সাসপেন্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলজিতকে। ফলে শুধু কেরল ম্যাচ নয় তার পরে পুণের সঙ্গে অ্যাওয়ে ম্যাচেও বলজিতকে পাবে না আটলেটিকো।
গোয়ায় প্রায় নিশ্চিত জেতা ম্যাচ থেকে দু’পয়েন্ট কম পাওয়ার জন্য বলজিতকে কাঠগড়ায় তুলেছে আটলেটিকো শিবির। সমালোচনা হয়েছে গোটা দেশের ফুটবল মিডিয়ায়। বলজিতের দলের সতীর্থরা-সহ কর্তাদের ধারণা, তিনি লাল কার্ড দেখে আটলেটিকোকে দশ জন করে দিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই জিকোর এফসি গোয়া টিম বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে যায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গোল শোধ করেও দেয়। বলজিতও স্বীকার করে নিচ্ছেন, ‘‘আমি পুরো সময় মাঠে থাকলে হয়তো আমাদের দল জিতে যেত। এখন খুব অনুশোচনা হচ্ছে।’’
তবে হয়তো একমাত্র ব্যতিক্রম আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। আটলেটিকো কলকাতা কোচ বুধবার রাতে ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে হাততালি দিতে দিতে ঢোকেন দশ জনে খেলেও ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পাওয়ার জন্য। বলজিতকেও বকাঝকা করেননি। শুধু বলেছেন, ‘‘এ রকম আর ভবিষ্যতে কোরো না। খেলার মাঠে অনেক কিছুই হয়। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।’’ বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফিরেও হাবাস এবং আটলেটিকো কর্তারা দীর্ঘক্ষণ বোঝান বলজিতকে। তাঁকে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলার পরামর্শ দেন দলের স্প্যানিশ কোচ। এটিকে শিবির সূত্রের খবর, যে দুই ভারতীয় ফুটবলারকে হাবাস নাকি নিজের ছেলের মতো দেখেন তাঁদের মধ্যে এক জন বলজিৎ। অন্য জন অর্ণব মণ্ডল। সে জন্যই ফিকরুর মতো বলজিতের ‘দোষ’কে এক দাঁড়িপাল্লায় তোলেননি তিনি।
এ দিন কলকাতা ফেরার পথে মারগাও এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে হাবাস বলেন, ‘‘ঘটনাটা দুর্ভাগ্যজনক। খেলাটা আমাদের মুঠোয় ছিল তখন। কিন্তু কি রেফারিং হল বলুন তো? এত কার্ড! একটা লাল কার্ড, সাতটা হলুদ কার্ড। আমরা তো রীতিমতো সমস্যায় পড়ে যাচ্ছি।’’
তবে বুধবার গোয়া টিম প্রায় সতেরো সেকেন্ড সাত জন বিদেশি নিয়ে খেলেছে এই অভিযোগ করে সংগঠকদের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে আটলেটিকো কলকাতা। গতবারের চ্যাম্পিয়নদের শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, রেফারির বিরুদ্ধে ক্ষোভ। এক কর্তা বললেন, ‘‘প্রথম ম্যাচে আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় পেনাল্টি দেওয়া হল। গোয়া ম্যাচে কার্ডের পর কার্ড। কী যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না।’’
এ দিন হাবাসের কাছে খবর এসেছে দেশের হয়ে খেলতে গিয়ে অনুশীলনে চোট পেয়েছেন অর্ণব মণ্ডল। পস্টিগা চোটের জন্য দেশে ফিরে গিয়েছেন আগেই। অর্ণব-রিনো অ্যান্টো দেশের হয়ে খেলতে গিয়েছেন। এ দিন আবার গোয়া থেকেই তাঁর দেশ আফ্রিকার বতসোয়ানার হয়ে খেলতে চলে গেলেন নাতো। কলকাতায় ১৩ অক্টোবর পেলের সামনে তিনিও খেলতে পারছেন না। হাবাস বলছিলেন, ‘‘এত কার্ড, এত চোট। ফুটবলাররা কয়েক জন দেশের হয়ে খেলতে চলে গিয়েছে। বলজিতকেও পাব না। নানা সমস্যা আছে। তা নিয়েই নামতে হবে কেরলের বিরুদ্ধে।’’ এ দিন গোয়ার হোটেলে সকালে জিম করে সন্ধ্যায় শহরে এসে পৌঁছয় এটিকে দল। আজ শুক্রবার পুরো বিশ্রাম নবি-বোরহাদের। তার পর শনিবার থেকে আবার প্রস্তুতি শুরু ঘরের মাঠের প্রথম ম্যাচে।