Ravi Chandran Ashwin

Ravi Chandran Ashwin: হাল ছাড়া তো খুব সহজ, হার না মেনেই প্রত্যাবর্তন

চার বছর পরে দলে ফিরে নিজেকে ফের প্রমাণ করার পর কিছুটা দার্শনিক হয়ে পড়েন তিনি।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২৮
Share:

পরিবার: স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে দীপাবলির উৎসবে অশ্বিন। ছবি টুইটার।

টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে দেশের হয়ে শেষ বার খেলেছিলেন ২০১৭ সালের জুলাইয়ে। বুধবার আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে নীল জার্সিতে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটালেন তিনি। দলে ফিরেই ১৪ রানে দুই উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ে বড় অবদান রাখার পরে বৃহস্পতিবার আর অশ্বিন ‘ভার্চুয়াল’ সাংবাদিক সম্মেলনে বলে গেলেন, ‘‘হাল ছেড়ে দেওয়া খুব সহজ। প্রেরণা হারিয়ে ফেলা খুব সহজ। দরজার পিছনে লুকিয়ে পড়া যায়। কিন্তু আমি কখনও তা করতে চাইনি।’’ যোগ করেন, ‘‘আমার কাছে ক্রিকেট কী দিয়েছে সেটাই সব নয়। আমি ক্রিকেটকে কী দিতে পারলাম, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে যদি কেউ যে কোনও জায়গায় তিনটে স্টাম্প পুঁতে বোলিং করতে বলে, আমি তা-ই করতে প্রস্তুত।’’

Advertisement

চার বছর পরে দলে ফিরে নিজেকে ফের প্রমাণ করার পর কিছুটা দার্শনিক হয়ে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার খবরটা মন ভরিয়ে দিয়েছিল। জীবনে কী পেতে চেয়েছিলাম, সেই কথা ভাবলে এই সুযোগ গুরুত্বপূর্ণ।’’ আবেগপূর্ণ ভাবে যোগ করেন, ‘‘বিশ্বকাপ নিয়ে বিশেষ স্বপ্ন দেখে এসেছি আমি। বিশ্বকাপে দলের হয়ে বিশেষ ধরনের সাফল্য পেতে চেয়েছি। নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছি অন্য কারও কাছে নয়, নিজের কাছে।’’ বিশ্বকাপে এসেও প্রথম দু’ম্যাচে বাদ। মনের মধ্যে তখন কী চলছিল? স্কটল্যান্ড ম্যাচের আগে অশ্বিনের জবাব, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, কিছুটা বিষণ্ণ ছিলাম। দল হারলে কখনও ভাল লাগতে পারে না। আমাদের সম্ভাবনা জোরালো ধাক্কা খেয়েছে। তবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের পর আশা করছি, সব কিছু যদি ঠিক হয়ে যায়।’’

সেমিফাইনালে যাওয়া নিয়ে দলের মধ্যে বিশেষ কথাবার্তা হচ্ছে না বলেই জানিয়ে গেলেন তারকা স্পিনার। বললেন, ‘‘শেষ দু’টো ম্যাচে সেরাটা দিয়ে ভাল ফল আদায় করে নেওয়াটাই আমাদের লক্ষ্য। বাকিটা আমাদের হাতে নেই।’’ তবে যোগ করতে ভুললেন না, ‘‘আফগানিস্তান ভাল দল। ওরা ভাল ক্রিকেট খেলেছে। ক্রিকেট খুব মজার খেলা। আমাদের আশা-সম্ভাবনা অনেকটাই ওদের উপরে নির্ভর করছে। তাই আফগানিস্তানের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।’’ ভারতকে যদি সেমিফাইনালের দরজা খুলতে হয়, নিউজ়িল্যান্ডকে হারাতে হবে রশিদ খানদের। যদি কেন উইলিয়ামসনেরা জিতে যান, ওখানেই সব আশা শেষ। তাই মজা করে অশ্বিন শেষ দুই ম্যাচে চোটের জন্য আফগান দলে না থাকা স্পিনার মুজিব উর রহমানকে নিয়ে বলেছেন, ‘‘ফিজ়িয়ো পাঠিয়ে মুজিবকে সুস্থ করে যদি মাঠে নামানো যেত, তা হলে আমরা তাই করতাম।’’

Advertisement

ইংল্যান্ডে টানা চারটি টেস্টে প্রথম একাদশের বাইরে ছিলেন অশ্বিন। আমিরশাহিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম দু’টি ম্যাচেও সুযোগ পাননি। যা নিয়ে প্রশ্ন করায় অশ্বিন বললেন, ‘‘জীবন একটি বৃত্তের মতো। কারও কাছে এই বৃত্ত খুবই ছোট, কারও কাছে বড়। শেষ কয়েক বছরে আমি শিখেছি, কী ভাবে দাঁতে-দাঁত চেপে লড়াই করে যেতে হয়। যখনই ভাল সময় এসেছে, কিছু না কিছু বাধাও আমাকে পিছনের দিকে ঠেলেছে। ভাল সময়ে চেষ্টা করেছি শান্ত থাকার। নম্র থাকার। লড়াই করে যাওয়ার।’’ যোগ করেন, ‘‘শেন ওয়ার্ন বলেছিলেন, ক্রিকেট জীবনে ৩৩ শতাংশ সময়ে সাফল্য পাবে। বাকিটা লড়াই করে আদায় করতে হবে। সচিন তেন্ডুলকর একই কথা বলেছিলেন। আমি তো কোন ছাড়।’’ আরও বলেছেন, ‘‘সুযোগ পাচ্ছি না বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকা খুবই সহজ। তাতে কি সুযোগ আসবে?’’ যোগ করেন, ‘‘ফিঙ্গার স্পিনার (যার আঙুলের সাহায্যে স্পিন করান, কব্জির মোচড়ে স্পিন করান রিস্টস্পিনারেরা) সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলানো দরকার। ২০১৭ সালেও আমি ভাল
ছন্দে ছিলাম।’’

২০১৭-তেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে হারার পরে সাদা বলের ক্রিকেটে ব্রাত্য হয়ে পড়েন তিনি। বলছেন, ‘‘আমি অনেক চিন্তাভাবনা করেছি বোলিং নিয়ে। বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানকে বল করার সময় ভাবি, আমি বাঁ হাতি বোলার। বাঁ হাতিকে বল করার সময় ভাবি আমি অফস্পিনার। এই চিন্তাভাবনা থেকেই আমার মধ্যে তীব্রতা তৈরি হয়।’’ সমালোচকদের প্রতি তাঁর পাল্টা বার্তা, ‘‘যারা বাইরে বসে বিশেষজ্ঞের মতামত দিয়ে চলেছেন, তাঁদের জন্য আমার দুঃখ হয়। একটা উইকেটের নেপথ্যে অনেক কিছু থাকে। তার আগে হয়তো একটা দারুণ ওভার কেউ করেছে। এ ভাবেই চিন্তা করে আমি ক্রিকেট খেলি আর উইকেট নেওয়াকে এ ভাবেই দেখি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন