অস্ট্রেলিয়ায় এ ভাবে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা জেতার পর ভারতকে এই ফর্ম্যাটের এক নম্বর দল না বলে পারছি না।
অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে, ওখানকার কন্ডিশনে যারা এ রকম দাপুটে জয় তুলে নিতে পারে, তাদের সেরা ছাড়া কীই বা বলা যাবে?
ওয়ান ডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ভারতের জয়ে ফেরাটাই টার্নিং পয়েন্ট বলতে পারেন। সেই যে ছন্দে ফিরল ভারত, তার পর থেকেই ধারাবাহিক সাফল্য পাচ্ছে। আমার বিশ্বাস আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে ধোনির দল। এবং সেটা হলে বিশ্বকাপে এক নম্বর ফেভারিট হিসেবে শুরু করবে ভারতই।
শুক্রবার মেলবোর্নে ভারতের জয়টা যেন অ্যাডিলেডে গত ম্যাচের রিপ্লে। তফাৎটা শুধু আগের ম্যাচে ভারতের ওপেনিং জুটিতে ভাল রান ওঠেনি, এ দিন ওরাও মেজাজে ব্যাট করেছে। শিখর ধবন অস্ট্রেলিয়া সফরের শুরুর দিকটা ভাল ফর্মে ছিল না। ধবন এ রকমই। বিদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ও একটু সময় নেয়। যখন মানিয়ে নেয়, তখন আর ওর চেয়ে ভাল কেউ নেই। গত বছরও বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া সফরের শুরুর দিকটা এমনই ফর্মে ছিল ও। তার পর যখন ছন্দে ফিরল, তখন আর ওকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
রোহিত শর্মা অস্ট্রেলিয়ায় শুরু থেকেই রানের মধ্যে রয়েছে। বিরাট কোহলি সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। আগের দিন টিভি-তে শুনলাম বিরাট নিয়ে গাওস্কর বলছে, ওকে দেখে মনে হচ্ছে অন্য গ্রহের। সত্যি অবিশ্বাস্য রকমের ভাল ব্যাট করছে বিরাট। ওর এখনও টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি হয়নি। আশা করব, বিশ্বকাপেই সেটা দেখা যাবে।
ভারতীয় টপ অর্ডার এ রকম ফর্মে থাকা মানে ধোনির ক্যামিও ইনিংস খেলার সুযোগ পাওয়া। এ দিনও পেল। নিজেকে এই ম্যাচে চার নম্বরে তুলে আনল ধোনি। আর যুবরাজকে তো দুটো ম্যাচে ব্যাটই করতে নামতে হল না। ভারতীয় টিমে ফেরার পর যুবির হয়তো ব্যাটিং প্র্যাকটিস পাওয়া হল না, কিন্তু ভারতের ব্যাটিংয়ের ওজনটা ভাল বোঝা গেল। আট নম্বরে অশ্বিন পর্যন্ত ভাল ব্যাট করে দিতে পারে। এই ব্যাটিং গভীরতা কিন্তু কোনও না কোনও ম্যাচে ভারতের কাজে লাগবে।
এই ব্যাটিং লাইন-আপ যখন দেশের মাঠে নামবে, তখন যে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। এ বার আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন, গত বছর ঘরের মাঠেই তো দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে সিরিজ হেরেছিলাম আমরা। আমি বলব, শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে কেন? মনে করে দেখুন, ওই সময়ে বাংলাদেশের কাছেও সিরিজ হেরে এসেছিলাম।
আসলে ওই সময় দলের কারও ফর্মই ভাল ছিল না। পাটা উইকেট পেয়েও বড় রান পায়নি কেউ। ভাল পার্টনারশিপ হয়নি কোনও ম্যাচে। বিচ্ছিন্ন দু-একটা ভাল ইনিংস হচ্ছিল মাত্র। একসঙ্গে তিন-চারজন ব্যাটসম্যানের ভাল খেলা সম্ভব হয়নি। স্পিনাররা তেমন কার্যকর হয়ে ওঠেনি। কারণ, ঘরের মাঠ হলেও স্পিন সহায়ক উইকেট পায়নি ওরা। পাটা উইকেটে ম্যাচ বার করার জন্য ভাল ব্যাটিং ছাড়া উপায় নেই। সেখানেই মার খেয়ে যাচ্ছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ায় এসে শেষের দিকে যেই স্পিনাররা উইকেট নিতে শুরু করল, ভারতও শুরু করল জিততে।
শুক্রবার মেলবোর্নের ম্যাচটাই ধরুন না। ১৮৫ তাড়া করতে নেমে ফিঞ্চ যখন ম্যাচটা ঘোরাতে শুরু করেছে, স্পিনাররাই ভারতকে ম্যাচে ফেরাল। অশ্বিন ওপেনিং জুটি ভাঙল। জাডেজা ওয়াটসনকে তুলল। আর যুবরাজ দু’ ওভারে মাত্র সাত রান দিয়ে ফেরাল ম্যাক্সওয়েলকে। আমি নিশ্চিত, ভারতের মাটিতে এই ত্রয়ী আরও ভয়ঙ্কর হবে। আর যুবরাজের রোলটা ব্যাটসম্যান থেকে পুরোদস্তুর অলরাউন্ডারে বদলে যাবে।
বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে মার্চে। তখন ঘরোয়া সিজন শেষের দিকে। অনেক জায়গার পিচও কিছুটা স্লো হয়ে যাবে। আইপিএলে যেমন দেখা যায় আর কী। যেখানে অশ্বিন-জাডেজা-হরভজনরা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। আর যখন স্লো বোলাররা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে নেয়, তখন ধোনির চেয়ে আর ভয়ঙ্কর ক্যাপ্টেন হয় না। স্লো বোলারদের কাজে লাগিয়ে কী ভাবে ম্যাচ বার করতে হয়, সেটা ধোনির চেয়ে ভাল আর কে জানে।
উপমহাদেশের উইকেট ও কন্ডিশন আর যারা ভাল ভাবে কাজে লাগাতে পারত, সেই শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান কেউই ভারতের মতো এত ভাল অবস্থায় নেই। দু’দলই এখন নতুন করে তৈরি হচ্ছে। সামনেই (ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ভারতের। বেশ কয়েক জন নতুন মুখ নিয়ে এলেও ওখানে ওদের শক্তির আঁচ কিছুটা পাওয়া যাবে। আর বাংলাদেশ তো বরাবরই ডার্কহর্স। এশিয়া কাপে নিজেদের মাঠে ওরা বরাবরই চমক দিয়ে থাকে। কিন্তু এই ভারতকে এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপে চাপে ফেলবে ওরা, এমন সম্ভাবনা দেখছি না।
আগামী তিন মাস ক্রিকেট দুনিয়া টি-টোয়েন্টি গ্রহে পরিণত হতে চলেছে। বাজি ধরতে রাজি আছি, সেই গ্রহ শাসন করবে ভারতই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত ১৮৪-৩ (রোহিত ৬০, ধবন ৪২, কোহলি ৫৯*, ম্যাক্সওয়েল ১-১৭)
অস্ট্রেলিয়া ১৫৭-৮ (ফিঞ্চ ৭৪*, বুমরাহ ২-৩৭, জাডেজা ২-৩২)